গোলটা করার পর সনি নর্দে তাঁর সেলিব্রেশনের স্টাইলটাই বদলে ফেললেন। অদৃশ্য বন্দুক হাতে গুলি চালানোর ভঙ্গি করতেই দেখা গেল তাঁকে। কিন্তু হাইতি তারকা নিজে অন্য দাবি করলেন। তাঁর ছেলে নাকি এভাবেই টলতে টলতে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করে বাড়িতে। তিন বছরের ডার্বিতে এত দিন কোনও গোল ছিল না তাঁর। তা নিয়ে কম কটাক্ষ বা আর্তি শুনতে হয়নি তাঁকে।
এমন একটা মঞ্চে এসে সনি ডার্বিতে গোল পেলেন, যা লাল-হলুদ শহর বলে পরিচিত। এতটাই আবেগে ভাসলেন তিনি যে, ম্যাচের পর তাঁকে দেখা গেল তাঁর পা জড়িয়ে থাকা এক সমর্থককে নিজের জার্সি খুলে উপহার দিতে। আর গোলটা পাওয়ার পর শিলিগুড়ির সাইতে বেড়ে ওঠা আজহারউদ্দিন মল্লিক কী করছিলেন? সনির মতো সেলিব্রেশন নয়, তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থবির হয়ে। তাঁকে প্রথম এসে জড়িয়ে ধরলেন ড্যারেল ডাফি, তারপর রুমমেট সনি। বহুদিন পর ডার্বিতে বঙ্গসন্তানের গোল। আজহার চোখটা মুছলেন। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে ফের ফিরে গেলেন নিজের জায়গায়। যেন কিছুই হয়নি মুখ করে। কর্তারা তাঁকে আড়াল করে টিম বাসে তুলে দিলেন ম্যাচের পর। কিন্তু কোচ সঞ্জয় সেন ম্যাচের পর সনির চেয়েও ডানকুনির নতুন বঙ্গ তারকাকে নিয়ে আপ্লুত বেশি। বলে দিলেন, ‘‘তিন বছর আছে আমার কাছে। খুব ভাল খেলছিল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম ও যেন গোল পায়। কী গোলটাই না করল। তা-ও আবার ডার্বিতে।’’
কিন্তু লিগ টেবলে দুই বনাম তিনের যুদ্ধ কেন এত এক তরফা হল? চৌম্বকে ম্যাচের নির্যাস তুলে আনলে এর প্রধান কারণ দুই কোচের মগজাস্ত্র প্রয়োগের সাফল্য ও ব্যর্থতা। এবং অবশ্যই ড্রেসিংরুমের রসায়ন। স্ট্র্যাটেজির পাশাপাশি দল নির্বাচনেও ভুল করেছেন লাল-হলুদ কোচ। টিমের গত কয়েক বছরের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডলকে টিম থেকে বাদ তো দিয়েছিলেন। পাশাপাশি শেষ দু’টো ম্যাচ চেন্নাই এবং চার্চিলের বিরুদ্ধে জঘন্য গোল খাওয়া সত্ত্বেও রেহনেশকে রেখে দিয়েছিলেন গোলে। মর্গ্যানকে ম্যাচের পর ‘গো-ব্যাক’ ধ্বনিও শুনতেও হল।
শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আই লিগের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে খেতাবের দৌড়ে প্রত্যাবর্তনের পরে গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
বিরতির আগেই মোহনবাগান এগিয়ে গেল ২-০। বিরতির সময় ইস্টবেঙ্গল যখন ড্রেসিংরুমে ঢুকছে তখনই বোঝা গেল মর্গ্যানের টিমের কী অবস্থা! সবাই সবাইকে গালাগাল করছেন। তার ফল মাঠেও প্রভাব পড়ল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মারামারি। কখনও কাতসুমি বনাম মেহতাব, কখনও গুরবিন্দর বনাম এদুয়ার্দো। কিন্তু আনাসকে বল ছেড়ে মেরে লালকার্ড দেখে ৬৬ মিনিটে বেরিয়ে যেতে হল প্লাজা-কে।
লিগ শীর্ষে থাকা আইজল এ দিন বেঙ্গালুরুতে হেরে যাওয়ায় ম্যাচের আগেই সুবিধা হয়ে গিয়েছিল সনিদের। ডার্বি জিতে পালতোলা নৌকো খেতাবের দিকে আরও এক ধাপ এগোল। এখনও মোহনবাগানকে খেলতে হবে চারটি ম্যাচ। যার মধ্যে রয়েছে আইজলও। দেখার ডার্বি জয়ীরা কী করেন।
মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, প্রীতম কোটাল, এদুয়ার্দো পেরিরা, আনাস এডাথোডিকা, রাজু গায়কোয়াড়, ইউসা কাতসুমি, শেহনাজ সিংহ, আজহারউদ্দিন মল্লিক (জেজে) সনি নর্দে, বলবন্ত সিংহ (শৌভিক চক্রবর্তী), ড্যারেল ডাফি।
ইস্টবেঙ্গল: রেহনেশ টিপি, রাহুল বেকে, গুরবিন্দর সিংহ, ইভান বুকেনিয়া, রবার্ট লালথেলামুয়ানিয়া, রাওলিন বর্জেস, মেহতাব হোসেন, ওয়েডসন আনসেলেম, রোমিও ফার্নান্ডেজ (জ্যাকিচন্দ সিংহ), অবিনাশ রুইদাস (ক্রিস্টোফার পেইন) ও উইলিস প্লাজা।