মহড়া: চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে মোহনবাগানের সনি ও ডিকা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
স্প্যানিশ আর্মাডা ঝড়ে কি ডুবে যাবে পালতোলা নৌকা?
অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো খেতাবের দিকে ছুটতে থাকা চেন্নাই ফুটবল ক্লাবের বিজয় রথ কি শনিবার যুবভারতীতে থামাতে পারবেন দিপান্দা ডিকারা?
চার্চিল ব্রাদার্সের কাছে বিশ্রী হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ কি শঙ্করলাল চক্রবর্তীর দলের আদৌ আছে?
পেদ্রো মানজ়ি, নেস্তর গর্দিয়োদের গোল-হানা রোখার মতো ক্ষমতা কি কিংসলে ওবুমনেমেদের আছে?
শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যে এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ডুবে থাকল সবুজ-মেরুন তাঁবু। সনি নর্দেদের ড্রেসিংরুমে গত কয়েকদিন অদৃশ্য একটা ব্যানার যেন ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাঁদের কোচ, ‘‘একশো ভাগেরও বেশি কিছু থাকলে দাও, না হলে খেতাবের স্বপ্ন দেখা ভুলে যাও।’’ ম্যাচ শুরুর আগের দিন অনুশীলন শেষে শঙ্করলালের গলাতেও আশা এবং আশঙ্কার এক অদ্ভুত মিশেল। ‘‘এই ম্যাচটা জিতলে সেটা হবে আমাদের টার্নিং পয়েন্ট। হারলে ওরা এগিয়ে যাবে অনেকটাই। তবে বিশ্বে এমন কোনও দল নেই যে হারে না। হারানো যায় না।’’
কথা বললেই বোঝা যায়, বাস্তবের জমিতে থাকা ডিকাদের কোচের মনে আশঙ্কার কালো মেঘের ছায়াই বেশি। যা থাকা স্বাভাবিকও। কারণ কয়েকদিন আগে যুবভারতীতেই লাল-হলুদ মশাল নেভানোর বাইরেও দক্ষিণের দলটার লিগ টেবলে অভিমুখ রকেটের গতির মতো উঠছে। ছয় ম্যাচে পাঁচটা জয়, একটা ড্র। মোহনবাগানের যা পয়েন্ট (৮) তার দ্বিগুণ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শীর্ষে রয়েছে চেন্নাই। ছয় ম্যাচে পনেরো গোলের দশটাই তিন স্প্যানিশ ফুটবলার—পেদ্রো মানজ়ি (৪), সান্দ্রো রদ্রিগেজ (৩), নেস্তর গর্দিয়োর (৩)। সামনে এ রকম তিকিতাকার দেশের গোলদাতারা থাকলে কী করা উচিত সেটাই গত কয়েকদিন ধরে করছেন মোহনবাগান কোচ। রক্ষণ সংগঠন। কী ভাবে? স্টপারে কিংসলের সঙ্গে ফেরাচ্ছেন কিম কিমাকে। তাদের সামনে রক্ষণ পর্দা হিসাবে থাকবেন দুই বিদেশি ওমর হুসেইনি এবং ইউতা কিনওয়াকি। যাঁরা চেন্নাইয়ের দুই ভয়ঙ্কর স্প্যানিশ মিডিও সান্দ্রো আর নেস্তরকে থামাবেন মাঝ মাঠে। সনি নর্দে কি শুরু থেকেই নামবেন? মোহনবাগান কোচ ধোঁয়াশা রেখেছেন। ‘ভাবছি’ বলেই থেমেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, পাল্টা চাপের জন্য সনিকে রাখা হবে শুরুতেই। অনুশীলনে তার ইঙ্গিতই রয়েছে। হেনরি কিসেক্কা এ দিন অনুশীলন না করলেও খেলবেন।
চেন্নাইয়ের এই দলটা তিন বছর খেলছে আই লিগে। কিন্তু এ বার হঠাৎ-ই তাদের এই উল্কার মতো উত্থানের কারণ কী? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তাদের সাফল্যের মূল রসদ, একতা। আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে নয়, বিদেশি এবং স্বদেশী সব ফুটবলারই কোয়ম্বত্তূরের একটি সাততারা হোটেলে থাকেন এক সঙ্গে। যা ড্রেসিংরুমের রসায়নে কাজে দিচ্ছে। পুরো দলটি পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছে। খেলায় তার ছাপ পড়ছে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করানো এবং মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য রয়েছেন দু’জন শিক্ষিকা-তামিলা ও কণিকা। দলের কোচ আকবর নওয়াস সিঙ্গাপুরের হলেও সহকারি কোচ জর্ডি ভিলা স্পেনের। তিনিই তিকিতাকার দেশ থেকে বিদেশি বেছে এনেছেন।
তা সত্ত্বেও আই লিগের অন্যতম অপরাজিত দলের কোচ নওয়াস গুরুত্ব দিচ্ছেন মোহনবাগানকে। বলে দিলেন, ‘‘লিগ শীর্ষে থাকা দলের উপর সব সময় চাপ বেশি থাকে। চার্চিলের কাছে হেরে যাওয়ার পর মোহনবাগান জেতার জন্য মরিয়া হবে। আমরা সতর্ক।’’ এর আগে কোচ হিসাবে মোহনবাগানে বিরুদ্ধে রিজার্ভ বেঞ্চে বসার অভিজ্ঞতা আছে নওয়াসের। এএফসি কাপে টাম্পাইন্স রোভার্সের সহকারী কোচ হয়ে একবার জেতার পাশাপাশি পেয়েছেন একবার হারার স্বাদও। সে জন্যই তিনি সতর্ক। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কত পয়েন্টে পৌঁছলে খেতাব পাবেন? চেন্নাই কোচ বলে দিলেন, ‘‘কত পয়েন্ট হলে খেতাব পাব তার হিসাব করিনি। কাল তিন পয়েন্ট কী ভাবে পাওয়া যায় সেই অঙ্কই করছি। টুইটারে দেখেছি পাসিং দক্ষতায় সবার আগে আছে মোহনবাগান।’’ দক্ষিণের ক্লাবটির কোচের অঙ্কে অবশ্য ঢুকে পড়েছে মোহনবাগানের দুই ছোটখাটো চেহারার সাইডব্যাককে নাস্তানাবুদ করে উইং-এ পাখনা মেলার ভাবনা। সঙ্গে ফ্রিকিকের সফল রূপায়ণ।
চেন্নাইয়ের স্প্যানিশ আমার্ডা যে, এই দুই অস্ত্রেই এখনও অপরাজেয়।
শনিবার আই লিগ ফুটবল: মোহনবাগান বনাম চেন্নাই সিটি এফ সি (যুবভারতী ৫-০০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy