তাঁর দিকে সমালোচকদের তির ছুটে এলেও তিনি কিন্তু শান্ত, স্বাভাবিক। দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে যে ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে বিপক্ষের গোলাগুলি সামলেছেন, সে ভাবেই এখন সামলাচ্ছেন সমালোচকদের ‘বাউন্সার’ও।
কেন এখনও তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে চলেছেন? কী তাঁকে এখনও উদ্দীপিত করে ক্রিকেট খেলে যেতে? এ প্রশ্ন এখন অনেকেই তুলছেন। শনিবার দুবাইয়ে তাঁর নিজের ক্রিকেট স্কুলের উদ্বোধনের সময় এই একই প্রশ্নই উঠেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সামনে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক যার জবাবে বলে গেলেন, ‘‘আমাকে সব চেয়ে বেশি উদ্দীপিত করে একটা ব্যাপারই। ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অংশ হয়ে থাকা।’’
ধোনি আরও বলেন, ‘‘আমরা জীবনের খুব অল্প সময়ই ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাই। ধরে নেওয়া যেতে পারে, এক জনের সামনে ক্রিকেট খেলার সুযোগ থাকে এক থেকে পনেরো বছর পর্যন্ত। কেউ কেউ হয়তো বা কুড়ি বছর পর্যন্তও খেলে। কিন্তু এক জনের ৭০ বছরের জীবনে ১০-১৫ বছর তো কিছুই নয়। অথচ আমরা, ক্রিকেটাররা ওই অল্প সময়ই হাতে পাই, যখন গর্বিত ভাবে বলতে পারি, আমরা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছি, দেশের হয়ে খেলছি।’’ ধোনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা অনেক ক্রিকেটার দেখেছি, যাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত দক্ষতা নেই। কিন্তু তাও দীর্ঘ দিন ধরে খেলে গিয়েছে। কারণ খেলাটার প্রতি তাদের আবেগ। কোচেদের এটাই খুঁজে বার করতে হবে।’’
তাঁর সমালোচকদের উদ্দেশে ধোনির একটাই কথা, ‘‘সবার নিজস্ব মতামত আছে। সেগুলোকে শ্রদ্ধা করা উচিত।’’ ধোনির কথা থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, টি-টোয়েন্টি থেকেও কোনও ভাবে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এখন তাঁর নেই। নিজের ক্রিকেট দর্শনের কথা বলতে গিয়ে ধোনি বলেছেন, ‘‘আমি সব সময় ফলের চেয়ে প্রক্রিয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি কখনওই ফলের কথা ভাবিনি। সব সময় যে পরিস্থিতিতে যে কাজটা করা উচিত, তার ওপরই নজর দিয়েছি। তা সে ১০ রানই দরকার হোক, কী ১৪ রানই হোক কী ৫ রানই হোক। আমি প্রক্রিয়া নিয়েই এত ব্যস্ত থাকি যে কখনও ভাবিনি সেটা ভুল হলে ফলটা কী হবে।’’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথায় উঠে আসে ধোনির সেই ট্রেডমার্ক হেলিকপ্টার শটের কথাও। ধোনিকে অনুরোধ করা হয়, বাচ্চাদের সামনে একবার ওই বিশেষ শটটা দেখানোরও। যা শুনে ধোনি বলেছেন, তিনি চান না কোনও বাচ্চা ওই শটটা খেলে। কারণ তাতে চোট পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘‘রাস্তায় টেনিস বলে ক্রিকেট খেলার সময় আমিওই শটটা মারতে শিখি। এটা খুব কঠিন শট। টেনিস বল ক্রিকেটে ব্যাটের কানায় লাগলেও বল অনেক দূর গিয়ে পড়ে। কিন্তু আসল ক্রিকেটে বল ঠিক ব্যাটের মাঝখানে লাগাতে হয়। যেটা খুব কঠিন কাজ। আমি অনেক চেষ্টার পরে ব্যাপারটা আয়ত্তে আনি। আমি কখনওই চাই না বাচ্চারা এই হেলিকপ্টার শটটা খেলুক। ওদের চোট পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে,’’ বলেছেন ভারতের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক।