Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিপক্ষ হলেও নীরব যোদ্ধার নামে আজ জয়ধ্বনি চলবে ইডেনে

সিএসকে-র বাস থেকে এক এক জন করে বেরিয়ে ক্লাব হাউসের ভিতরে চলে গেলেন। আর ধোনি ভক্তদের নিরাশ করে হলুদ জার্সির অধিনায়ক অনুশীলনেই এলেন না।

নিজেকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করেছেন ধোনি।

নিজেকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করেছেন ধোনি।

সুমিত ঘোষ 
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ০৪:১৪
Share: Save:

মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে স্বাগত জানানোর জন্য বুধবারের ইডেনেই পোস্টার নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ভক্তরা। চেন্নাই সুপার কিংসের বাস ইডেনের গেটের সামনে এসে দাঁড়াতেই তাঁরা ধোনির নামে জয়ধ্বনি শুরু করে দিলেন।

সিএসকে-র বাস থেকে এক এক জন করে বেরিয়ে ক্লাব হাউসের ভিতরে চলে গেলেন। আর ধোনি ভক্তদের নিরাশ করে হলুদ জার্সির অধিনায়ক অনুশীলনেই এলেন না। কেউ কেউ সাংবাদিকদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে থাকলেন, ধোনি কি সত্যিই আসবেন না? সম্ভাবনা কম শুনে যে ভাবে তাঁরা হতাশ মুখে ক্লাব হাউসের দোতলায় গিয়ে ধুপ করে বসে পড়লেন, কে বলবে, আজ ইডেনে ধোনি কলকাতার প্রতিপক্ষ!

দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এ বারের আইপিএলের শুরুতে সেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ম্যাচের মতোই কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের সামনে ফের সংকট উপস্থিত! সে রাতে ছিলেন বিরাট কোহালি। বৃহস্পতিবার থাকছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ফের কলকাতার সেই এক স্লোগান— মন চায় কেকেআর, হৃদয় বলছে ধোনি!

কট্টর নাইট সমর্থকদের জন্য চিন্তার কারণ হল, গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার অভাবে ভোগা বুড়োটে ধোনি নন, ইনি সেই দামাল ধোনি সংস্করণ। যাঁর ধুন্ধুমার ব্যাটিং দেখার জন্য স্কুল ছুটি হয়ে যেত, শাটার নামিয়ে মাঠে ছুটতেন দোকানিরা আর পাড়ায় পাড়ায় উঠে যেত রব, ‘মাহি মার রহা হ্যায়’। ছত্রিশ বছর বয়সেও যিনি চলতি আইপিএলে ছক্কা মারার তালিকায় চার নম্বরে। ক্রিস গেল, এ বি ডিভিলিয়ার্স, আন্দ্রে রাসেল মেরেছেন ২৩টি করে ছক্কা। ধোনি ২০টি।

ভারতীয় ক্রিকেটের রোল্‌স রয়েস বলা হচ্ছে তাঁকে। আইপিএলের তৃতীয় বর্ষে ইডেনে এসে নিউজিল্যান্ডের পেসার শেন বন্ডকে পিটিয়ে কলকাতাকে হারিয়েছিলেন ধোনি। আট বছর পরে বন্ড এখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং কোচ, ধোনি এখনও ছক্কা মেরে জিতিয়ে যাচ্ছেন। সেই ম্যাচেই বন্ডের বল কনুইতে লেগে হাড়ে চিড় ধরে তাঁর। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই এক ওভারে বন্ডকে দু’টো চার ও একটা ছক্কা মারেন। সেই ম্যাচে নাইটদের হয়ে খেলা লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছিলেন, ‘‘যত বড় চোটই হোক আর যতই যন্ত্রণা পাক, ধোনিকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়া খুব কঠিন। কখনও ওকে বাইরে বসতে দেখিনি। কোমরের চোট নিয়ে বিশ্বকাপে জিতিয়েছে। আঙুলে চোট নিয়ে খেলেছে। চোট পাওয়া ধোনি যেন আরও জেদি।’’

বরাবরের এক নীরব যোদ্ধা ধোনি। ছোটবেলায় ঘুম ভেঙে উঠে যিনি আবিষ্কার করেছিলেন, বাবা পান সিংহ মাঠে জল দিচ্ছেন! আর মাঝরাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখেই ভিতরে ভিতরে শপথ নিয়েছিলেন, ‘বাবাকে এই কাজটা করতে দেওয়া যাবে না! বড় ক্রিকেটার হতেই হবে আমাকে!’ আজও একই নীরব ভঙ্গিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর পুণের অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। এক বারও মুখ খোলেননি। কখনও মাঠে স্লেজিং করতে দেখা যায়নি তাঁকে। কখনও আউট হয়ে আম্পায়ারের সংকেতের জন্য দাঁড়ান না।

ছক্কা মেরে বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিয়েও নির্লিপ্ত! ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রী এক বার বলেছিলেন, ‘‘যখন ধোনি ছক্কাটা মেরে বিশ্বকাপ জেতাল, কমেন্ট্রিতে আমি ছিলাম। আমি আবেগে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। অথচ, ধোনিকে দেখে মনে হল যেন অফিসে আর একটা দিন কাটিয়ে ফিরছে। আবেগকে কী ভাবে যে এত বশে রাখতে পারে, এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করতে পারেন।’’

ধোনি যেন রাডইয়ার্ড কিপলিংয়ের সেই ‘ইফ’ কবিতাটির আদলে গড়া। বাস্তবে এমন কেউ থাকতে পারেন, ভাবাই যায় না! ‘ইফ ইউ ক্যান মিট উইথ ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ডিসাসটার অ্যান্ড ট্রিট দোস টু ইমপোস্টর্স জাস্ট দ্য সেম’— যদি বিজয় এবং বিপর্যয়ে একই রকম থাকতে পারো...এটাই তো ধোনি! অধিনায়ক হিসেবে কী অসাধারণ রেকর্ড! দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন, চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সিতে দু’বার আইপিএল জিতেছেন। তবু কখনও বন্য উৎসবের তোলা যায়নি!

ক্রিকেটের মাইকেল জর্ডান তিনি। জর্ডান যেমন বাস্কেটবলে প্রচুর ম্যাচ জিতিয়েছেন অন্তিম সেকেন্ডগুলোতে, ‘ফিনিশার’ ধোনি তেমনই দুরন্ত শেষের ওভারে। কোটি কোটি মানুষের আবেগের বিস্ফোরণ ঘটিয়েও যিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন নিজের আবেগকে। ভিতরে প্রতিজ্ঞার আগুন নিয়েও যিনি বাইরে বরফশীতল!

দাঁড়ান, এখনও শেষ হয়নি। ক্রিকেট ম্যাচ শেষ করে ধোনি হয়তো ছুটবেন মধ্যমগ্রামে। পিস্তল চালাতে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের থেকে শোনা, গুলি চালানোতে ধোনি পাল্লা দিতে পারেন পেশাদারদের সঙ্গে। ইডেনের মতো পুলিশ বা সেনা ছাউনিতেও তাই জয়ধ্বনি উঠলে অবাক হওয়ার নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE