পিঙ্কি মুর্মু। —নিজস্ব চিত্র
‘খেলো ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় রাজ্য স্তরের মূল খেলায় শটপাটে বীরভূমের প্রতিনিধিত্ব করবে মহম্মদবাজারের প্রত্যন্ত গ্রামের এক আদিবাসী মেয়ে পিঙ্কি মুর্মু। ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া মুরালপুর গ্রামের দশম শ্রেণির এই চমকপ্রদ উত্থানে উজ্জীবিত জেলার ক্রীড়ামহল। আজ, সোমবার কলকাতার সল্টলেকে সাই-এর (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) মাঠে নামবে সেই মেয়ে। সে দিকেই তাকিয়ে গোটা গ্রাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বলিহারপুর সম্মিলনী হাইস্কুলের ছাত্রী পিঙ্কির বাবা গোঁসাই মুর্মু পেশায় দিন মজুর। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে পরের জমিতে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। এমন পরিবারের মেয়ে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় খেলতে যাবে, সে কথা তার পরিবার কেন এলাকার কেউ-ই স্বপ্নে ভাবেননি। পিঙ্কি পড়াশোনা থেকে খেলাধুলা, সবেতেই ছোট থেকে লক্ষ্যে স্থির। অষ্টম শ্রেণিতে ভাল ফল করায় সরকার থেকে বৃত্তিও পেয়েছিল। এ বারে মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ডিসকাস ও শটপাটে প্রথম এবং বর্শা ছোড়ায় দ্বিতীয় হয়। প্যাটেলনগরে হওয়া ‘খেলো ইন্ডিয়া’র ব্লক স্তরে ১৫ জন এবং পরে জেলাস্তরে আরও ১৯ জন হারিয়ে শটপাটে প্রথম হয় পিঙ্কি। পিঙ্কির ছোট বোন রুপালিও পড়াশোনা ও খেলাধুলায় ভাল। পড়াশোনা ও খেলাধুলা, সবেতেই এমন সফল মেয়ের যদিও দুশ্চিন্তা কাটছে না। তার কথায়, ‘‘অভাবি ঘরের মেয়ে। শিক্ষা ও টাকা, কোনওটাই আমাদের নেই। স্কুলের শিক্ষক ও এলাকার কিছু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সহযোগিতায় এত দূর পড়ছি। খেলাধুলাও করছি। জানি না, আর কত দিন চালাতে পারব।’’
পিঙ্কির সাফল্যের পিছনে উঠে আসছে স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক চণ্ডীদাস চৌধুরীর কথায়। স্কুলের আর এক শিক্ষক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘চণ্ডীবাবু বছর দুয়েক আগে আমাদের স্কুলে যোগ দেন। তার পর থেকেই স্কুলের খেলাধুলার মান বেড়েছে। পিঙ্কির উত্থানের পিছনে ওঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে।’’ চণ্ডীবাবু বলেন, ‘‘পিঙ্কির হার না মানা মনোবলই ওকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। ওর মতো ছেলেমেয়েরা উপযুক্ত কোচ ও পরিকাঠামো পেলে বিশ্ব ক্রীড়া ময়দানে ভারতের মান উজ্জ্বল করবে।’’
পিঙ্কীর বাবা ও মা জানান, অভাবের কারণে দুই ছেলেকে তাঁরা পড়াতে পারেননি। তাই দুই মেয়েকে তাঁরা আরও পড়াতে চান। তাদের খেলার এই নেশাকেও সমর্থন করতে চান। ‘‘কিন্তু অভাব আমাদের নিত্যসঙ্গী। তাই কত দূর এগোতে পারব জানি না। সরকার বা কেউ পিঙ্কিদের পাশে এগিয়ে আসলে খুব উপকার হয়,’’—বলছেন তাঁরা। একই আর্জি রেখেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৈনাক দে-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy