Advertisement
E-Paper

ভয়ের নাম জাম্পা, ভরসার নাম নারিন

অ্যাডাম জাম্পাকে দেখলে মনেই হবে না অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রভিন্সের ডাকাবুকো লোকটার সঙ্গে তাঁর ন্যূনতম মিল থাকতে পারে!

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:৩৬
প্র্যাকটিসের ফাঁকে আন্দ্রে রাসেল।

প্র্যাকটিসের ফাঁকে আন্দ্রে রাসেল।

অ্যাডাম জাম্পাকে দেখলে মনেই হবে না অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রভিন্সের ডাকাবুকো লোকটার সঙ্গে তাঁর ন্যূনতম মিল থাকতে পারে!

তাঁর অ্যাকশন হুবহু শেন ওয়ার্নের মতো। কিন্তু তা বলে ওয়ার্নির মতো ঠোঁটে সিগারেট? কল্পনা অসম্ভব। শেন ওয়ার্নের ভাবশিষ্য বলতে পারেন নিজেকে। কিন্তু তা বলে ওয়ার্নির মতো ব্যাটসম্যানকে তেড়ে স্লেজিং? বিশ্বাস হয় না। অ্যাডাম জাম্পাকে দেখলে বরং শিশুসুলভ লাগে, নিপাট শান্ত কলেজপড়ুয়া মনে হয়। যিনি ইংরেজি নিয়ে উচ্চশিক্ষায় যেতে পারেন। সিনেমা-সিরিয়ালে চকোলেট বয়, তা-ও ঠিক আছে। কিন্তু দাপুটে মেজাজের আগুনে লেগস্পিনার— ভাবা খুব কঠিন।

বৃহস্পতিবারকে ধরা যাক। পার্ক সার্কাসের এক অভিজাত শপিং মলে রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টসের কয়েক জন ক্রিকেটার গেলেন ফ্যান ইভেন্টে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, উসমান খোয়াজা, অজিঙ্ক রাহানে, অশোক দিন্দার সঙ্গে জাম্পাও ছিলেন। দুপুরে পুণের সুপারজায়ান্টসের সঙ্গে কলকাতাবাসীর যে সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি দেখা গেল, তাতে আগামী শনিবারের ইডেনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা সমর্থনের ‘হেড টু হেডে’ কেকেআরের বিরুদ্ধে দুর্বল থাকবেন না, এখনই লিখে ফেলা যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরের কলকাতা সূচক হলে, শনিবারের ছেষট্টি হাজার ইডেন দর্শক ধোনিদের জন্যও সমান চেঁচাবে।

আর নয়ও বা কেন? কেকেআর অবশ্যই শহরের হোম টিম। কিন্তু পুণে মালিকেরও এটা ‘হোম’। এটা তো সঞ্জীব গোয়েন্কারও শহর। মজার যদিও উপরেরটা নয়, দুপুরের কলকাতার দ্বিতীয় ছবিটা। ফ্যান সেশন থেকে ফটোসেশন— পুণে ক্রিকেটারদের মধ্যে এ দিন কাকে সবচেয়ে চুপচাপ, সবচেয়ে বিহ্বল দেখিয়েছে সেটাও বোধহয় শপিং মলে উপস্থিত জনতা অনায়াসে বলে দিতে পারবে।

তিনি অবশ্যই অ্যাডাম জাম্পা। ডেভিড ওয়ার্নারের হায়দারাবাদের বিরুদ্ধে ছ’উইকেট নেওয়া অ্যাডাম জাম্পা।

পুণে কর্তারা এক কথায় আশ্চর্য। এটা ভেবে বিস্মিত যে, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ও রকম পারফর্ম করলে বিশ্বের যে কোনও বোলার উচ্ছ্বাস দেখাত। আবেগে ভেসে যেত। কিন্তু তিনি, জাম্পা কিনা ন্যূনতম প্রতিক্রিয়াও দেখালেন না! এক দিক থেকে ঠিকই। গত ম্যাচে যদি কোনও বোলার ১৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে কোনও অনুষ্ঠানে আসে, আইপিএলে রেকর্ড করে আসে, নায়কোচিত আদবকায়দা থাকা প্রত্যাশিত। প্রত্যাশিত, কিন্তু নেই। শোনা গেল, এটাই নাকি আসল জাম্পা। যাঁর ধর্মই হল, দেখনদারি নয়, কর্মে মন দাও। কথা কম বলো, শো-বিজনেসে ঢুকো না। মনটা কাজে রাখো। এবং ব্যাটসম্যানের মগজের সঙ্গে খেলতে খেলতে তার উইকেট নিয়ে বেরিয়ে যাও।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— শোনা গেল তিনিও জাম্পায় মুগ্ধ। ঘনিষ্ঠমহলে নাকি বলেও ফেলেছেন যে, আইপিএল নাইনে পুণের আবিষ্কার এই এক জনই। পুণে কর্তাদের কেউ কেউ সেটা আর একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। বলতে চান, পুণে নয়। গোটা আইপিএলেরই তিনি সেরা আবিষ্কার। কে আর তাঁর মতো ১৯ রানে ছ’টা নিয়েছে?

এর পর বলার দরকার নেই শনিবারের ইডেন মহাযুদ্ধে পুণে সুপারজায়ান্টসের ‘গো টু ম্যান’ কে হতে যাচ্ছেন। এটাও সত্যি যে, কেকেআর লকাররুমেও জাম্পা সমান সমাদৃত হচ্ছেন। নাইটদের সহকারি কোচ সাইমন কাটিচ এ দিন বলে গেলেন, ‘‘অসাধারণ তরুণ প্রতিভা। আইপিএলে বেশি সুযোগ পায়নি। কিন্তু গত ম্যাচে দারুণ বল করেছে।’’ কিন্তু তাই বলে এটাও ভাবা যুক্তিহীন যে, জাম্পা-আতঙ্কে কুঁকড়ে আছে কেকেআর।

সুনীল নারিন কিন্তু তৈরি হচ্ছেন।

এ দিন প্র্যাকটিস-পর্ব মিটিয়ে গঙ্গাবক্ষ-সফরে বেরিয়ে পড়লেন নাইটরা। স্ত্রী-বান্ধবী সহ ঘণ্টা তিনেকের সফর, পার্টির সঙ্গে ডিনার— পুরোটাই হল যুদ্ধের আগে টিমকে রিল্যাক্সড রেখে দেওয়া। কিন্তু শুধুমাত্র সংসারে ফুরফুরে হাওয়ার আমদানি নয়, কড়া প্রস্তুতিও চোখে পড়ল। নারিনকে যেমন এ দিন নাগাড়ে বল করতে দেখা গেল। কখনও ব্যাটসম্যান রেখে। কখনও তিনটে স্টাম্প এবং নারিন। এবং তিন ঘণ্টার প্র্যাকটিসে দশ মিনিটও বিশ্রাম নিতে দেখা যায়নি ক্যারিবিয়ান স্পিনারকে। স্পিনিং ফিঙ্গারে চোট পাওয়ার পর দু’টো ম্যাচ নামেননি নারিন। টিম একটা জিতেছে, হেরেছে একটা। নাইটদের প্রেক্ষিতে পুণে ম্যাচ অতীব গুরুত্বের। ওই ম্যাচে কোনও গণ্ডগোল মানে প্লে অফ রাস্তা কঠিন হয়ে যাওয়া। শোনা গেল, পুণে ম্যাচে নারিনকে পাওয়া নিয়ে আশাবাদী কেকেআর। বলা হল, গুজরাত ম্যাচের পর দিন পাঁচেকের বিশ্রামে উপকৃত হয়েছেন নারিন। খুব ওলটপালট না হলে শনিবার খেলে দেবেন।

এবং তখনই শনিবাসরীয় যুদ্ধের ট্যাগলাইনটাও পাওয়া যাবে। এমনিতে পুণে বনাম কেকেআর বরাবর মর্যাদার ম্যাচ। ৫ মে—তারিখটাই তো আইপিএল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ রত্ন হিসেবে ঢুকে গিয়েছে এই যুদ্ধের সৌজন্যে। সে বার পুণের মুখ ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এ বার ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁরই উত্তরসূরি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সে বার ইডেনে পুণের কলকাতা কানেক্ট ছিল তার অধিনায়ক। এ বার ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক। কিন্তু তবু বোধহয় ধোনি বনাম রাসেল নন। খোয়াজা বনাম মর্কেল নন। গম্ভীর বনাম অশ্বিন নন। ফ্যাটফ্যাটে সাদা ইডেন উইকেটে সেরা ডুয়েল বোধহয় এই দু’জনের। ক্যারিবিয়ান রাজকুমার বনাম অস্ট্রেলীয় রূপকথার।

রহস্য স্পিন বনাম চিরমোহিনী লেগস্পিনের।

ছবি: উৎপল সরকার।

ipl 2016 Adam Zampa Sunil Narine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy