Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩

ভারতীয় খাদ্যে মজে নোভাকের দেশের তারকা

তারকা: টেনিসে আগ্রহ নেই বাস্কেটবলার বোগদানের। ফাইল চিত্র

তারকা: টেনিসে আগ্রহ নেই বাস্কেটবলার বোগদানের। ফাইল চিত্র

শুভজিৎ মজুমদার
শার্লট শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৩
Share: Save:

নোভাক জোকোভিচের দেশে জন্ম তাঁর। অথচ টেনিসের প্রতি কোনও আগ্রহ নেই। বোগদান বোগদানোভিচের পছন্দ বাস্কেটবল ও অনলাইন ভিডিয়ো গেম ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফ্ট’। তবে এই মুহূর্তে সেক্রেমেন্টো কিংসের উঠতি তারকা ব্যস্ত ভারতীয় খাদ্যদ্রব্যের গবেষণায়!

Advertisement

অক্টোবরে মুম্বইয়ে ইন্ডিয়ানা পেসার্সের বিরুদ্ধে প্রি-সিজন ম্যাচ খেলবে সেক্রেমেন্টো কিংস। দলের সঙ্গে যাচ্ছেন বোগদানও। আর তাই এখন থেকেই খোঁজখবর নিতে শুরু করে দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার শার্লট শহরে বোজাঙ্গেলস কলেসিয়ামে এনবিএ রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচের প্রস্তুতির ফাঁকে ২৬ বছর বয়সি সার্বিয়া জাতীয় দলের বাস্কেটবল খেলোয়াড় বলছিলেন, “আমার প্রধান লক্ষ্য মুম্বই পৌঁছে বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় খাবার খেয়ে দেখা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শহরেই ভারতীয় রেস্তরাঁ রয়েছে। ভারতীয় খাবার আমার দারুণ পছন্দ। কিন্তু এ বার ভারতে গিয়েই ভারতীয় খাবার খাওয়ার সুযোগ এসেছে বলে বেশি আনন্দ হচ্ছে।” বোগদানের দাবি তিনি একা নন, তাঁর সতীর্থেরাও দারুণ উত্তেজিত মুম্বই সফর নিয়ে। বলছিলেন, “শুনেছি মুম্বই দারুণ শহর। তাই প্রত্যেকে মুখিয়ে রয়েছে প্রি-সিজন ম্যাচের জন্য।”

বছর দু’য়েক আগে সেক্রেমেন্টো কিংসে যোগ দেন বোগদান। অনেকেই তাঁকে ভবিষ্যতের তারকা মনে করছেন। এই কারণেই রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচে বিশ্ব দলের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। জোকোভিচের দেশের বাস্কেটবল তারকা অবশ্য মনে করেন, এখনও তাঁর অনেক কিছু শেখা বাকি। বলছিলেন, “এনবিএ-তে এটা আমার দ্বিতীয় মরসুম। রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই।”

বোগদানের সতীর্থ বেন সিমন্সের উত্থানের কাহিনি আরও আকর্ষণীয়। বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। প্রাক্তন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। মা অস্ট্রেলীয়। বেনের জন্ম মেলবোর্নে। শৈশবে স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হওয়ার। বাড়ির পিছনেই অনুশীলন করতেন প্রায় ছয় ফুট দশ ইঞ্চির বেন। কিন্তু ছুটিতে বাবার কাছে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে এসেই বদলে ফেলেন সিদ্ধান্ত। ক্রিকেট ছেড়ে বেছে নেন বাস্কেটবলকে। এই মুহূর্তে ফিলাডেলফিয়া ৭৬ ইয়ার্সের অন্যতম সেরা অস্ত্র বেন। রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে অভিভূত বেন বললেন, “ভেবেছিলাম ক্রিকেটার হব। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ খেলব। কিন্তু বাবার কাছে বেড়াতে যাওয়ার পরে আমার জীবনটা বদলে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাস্কেটবল খেলোয়াড়েরা জাতীয় নায়কের সম্মান পায়। আমিও সেই জায়গায় পৌঁছতে চাই।”

Advertisement

ভবিষ্যতের তারকাদের বিশ্বের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশেই প্রায় পঁচিশ বছর আগে রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচ শুরু করে এনবিএ। একটি দলে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়েরা। অন্য দলটি গড়া হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেলতে আসা খেলেোয়াড়দের নিয়ে। প্রথম বছর থেকেই প্রবল জনপ্রিয়তা এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে। এ বার রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব শার্লট পাওয়ায় তা অন্য মাত্রা পেয়েছে।

উত্তর ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উত্থান মাইকেল জর্ডানের। শুধু তাই নয়। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা বাস্কেটবল তারকা এই মুহূর্তে শার্লট হর্নেটের মালিকও। শহরের প্রাণকেন্দ্র স্পেকট্রাম এরিনায় এই ম্যাচের টিকিট কয়েক সপ্তাহ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস্কেটবলপ্রেমীরা এসেছেন। বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষকর্তারা এসেছেন ভবিষ্যতের তারকাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সেরে ফেলতে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে এনবিএ-র স্বেচ্ছাসেবকেরা রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড়দের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এনবিএ-র বিভিন্ন দলের ম্যাসকট সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। অনেকেই তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন।

উন্মাদনা কোন উচ্চতায় পৌঁছেছিল তা বোঝা গেল, স্পেকট্রাম এরিনার কাছে পৌঁছনোর পরে। শুক্রবার ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় রাত নয়টায়। কিন্তু স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বিকেল থেকেই। সন্ধে সাড়ে সাতটার মধ্যেই গ্যালারি প্রায় ভর্তি হয়ে গেল। প্রাক্তন বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাইক হোয়াইট এখন এনবিএ-তে চাকরি করেন। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে স্টেডিয়ামের লবিতে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “রাইজিং স্টার চ্যালেঞ্জ ম্যাচকে কোনও খেলোয়াড়ই হাল্কা ভাবে নেয় না। মরসুমের মাঝামাঝি এই ম্যাচে নজর কাড়ার অর্থ, পরের মরসুমে ড্রাফ্টিংয়ে ভাল দাম পাওয়া। দেখবেন, সবাই মরিয়া হয়ে খেলবে।”

মাইক যে একটুও বাড়িয়ে বলেননি, খেলা শুরু হওয়ার পরেই বোঝা গেল। প্রথম কোয়ার্টারে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ৩০-৪০ হেরে গিয়েছিল বিশ্বের অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দল। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফেরেন বেন-বোগদানেরা। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৪৪-১৬১ হারলেন তাঁরা। তবে উৎসবের রাতে কাঁটা হয়ে থাকল ইলিনয়ের আউরৌরায় দুস্কৃতীদের গুলিতে পাঁচ নির্মাণকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুর যন্ত্রণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.