Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নাওরেম-ম্যাজিকে মেসির ছোঁয়া

যাকে নিয়ে দেশজুড়ে এত হইচই সেই নাওরেম অবশ্য ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা কীর্তি করার পরে নিজেই অবাক। মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে বিস্মিত ভাবে বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এ রকম গোল করতে পারি।

নায়ক: দুরন্ত গোলে ভারতীয় ফুটবলে সাড়া ফেলে দিল নাওরেম।

নায়ক: দুরন্ত গোলে ভারতীয় ফুটবলে সাড়া ফেলে দিল নাওরেম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:২০
Share: Save:

বক্সিং ডে তে বিস্ময় গোল!

লা লিগা, ইপিএল বা সেরি আ-র মতো কোনও বিশ্বসেরা লিগে নয়। আই লিগে। আর যা নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়ায়। টুইটের পর টুইট। কেউ কেউ তো ইম্ফলের ছেলে নঙ্গাম্বা নাওরেমের চমকপ্রদ গোলকে লিওনেল মেসির গোলের সঙ্গেও তুলনা করতে শুরু করেছেন।

যাকে নিয়ে দেশজুড়ে এত হইচই সেই নাওরেম অবশ্য ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা কীর্তি করার পরে নিজেই অবাক। মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে বিস্মিত ভাবে বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এ রকম গোল করতে পারি। তবে মাতোস স্যার আমাকে ড্রিবলের সঙ্গে গোলও করতে বলতেন।’’ ইন্ডিয়ান অ্যারোজের কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস এ দিন রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন না। বড়দিনের ছুটি কাটাতে দেশে গিয়েছেন তিনি। থাকলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দেশের মাতোস দেখতে পেতেন, কী ভাবে বিপক্ষের ছয় জন ফুটবলারকে ড্রিবল করতে করতে গোল করেছে তাঁর ছাত্র।

আরও পড়ুন: ‘পুসকাস ট্রফির জন্য পাঠানো হোক ফিফায়’

এ বারের আই লিগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলা ও অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়েছে ফেডারেশন। যে দলে কোনও বিদেশি নেই। দিল্লিতে এ দিন ইন্ডিয়ান অ্যারোজ দলের খেলা ছিল শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচেই ছিয়াশি মিনিটে অবিশ্বাস্য গোলটি করেন নওরেম। লাজংয়ের আঠারো গজের বক্সের বাইরে বল ধরে দু’পায়ে সাপের মতো ড্রিবল করতে করতে ছয় গজের বক্সে ঢুকে প্লেসিংয়ে গোল করেন মাতোসের টিমের সুপার সাব মিডিও। শিলংয়ের দুই বিদেশি ডিফেন্ডার লরেন্স ডো-ই এবং ও জো হো তাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরাও আটকাতে পারেননি সতেরো বছর বয়সি নাওরেমকে। অ্যারোজের দু’নম্বর গোলটি যখন হয় তখন মাতোসের দল এগিয়ে ছিল ১-০। ওই গোলটি করেছিলেন কলকাতার টালিগঞ্জের ছেলে জিতেন্দ্র সিংহ। যে গোলকে আবার আই লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী ফুটবলারের গোল ধরা হচ্ছে। সেই গোল অবশ্য ফিকে হয়ে যায় নাওরেমের দুরন্ত গোলে ২-০ হয়ে যাওয়ার পর। এর পরে ৩-০ করে রাহুল কানোলি। শিলং তখন অবশ্য দশ জনে খেলছে।

নাওরেমের গোলের মতোই তার উত্থানটাও অবশ্য বেশ চমকপ্রদ। নিকোলাই অ্যাডাম তাঁকে দলে নেননি। গত ফেব্রুয়ারিতে নাওরেম প্রথম চোখে পড়েন মাতোসের। এবং বিশ্বকাপ শিবিরে তাঁকে ডেকে নেন। এটিই ক্লাবের জার্সিতে তার প্রথম গোল।

মণিপুরের ছেলে নাওরেম মূলত আই লিগের ক্লাব মিনার্ভা পঞ্জাবের অ্যাকামেডির ফুটবলার। ওই দলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ আই লিগ জিতেছে নাওরেম। তারপর গোয়ায় ফেডারেশনের এলিট অ্যাকাডেমিতে নেওয়া হয় তাকে। দিল্লিতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তাকে প্রথম দুটি ম্যাচে নামানো হয়েছিল পরিবর্ত বা সুপার সাব হিসাবে। মঙ্গলবারও নাওরেম নেমেছিলেন পরিবর্ত হিসাবে ৭৫ মিনিটে। মাতোসের মতো দলের সহকারী কোচ ফ্লয়েড পিন্টো সেই নিয়ম বদলাননি আই লিগে। আর নেমেই ইম্ফলের প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলে হয়ে গেলেন ‘বিস্ময় বালক’। নাওরেম ও ইন্ডিয়ান অ্যারোজ দল বুধবারই চলে আসছে শহরে। তাদের খেলা রয়েছে মোহনবাগানের সঙ্গে শুক্রবার। আই লিগের ওই ম্যাচে কলকাতার দর্শকরাও হয়তো দেখতে পাবেন নাওরেম-দ্যুতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE