Advertisement
E-Paper

অ্যাকাডেমি নয়, যেন আশ্রম

নিজের খেলোয়াড় জীবনে গোপীচন্দকে অনেক ঝড়ঝাপ্টা সামলাতে হয়েছে। তাঁর ট্রেনিংয়ের জন্য টাকা বাঁচাতেন ওঁর মা। লাল বাহাদুর ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সেই সময় ভাল পরিকাঠামো ছিল না। ২০০৫ থেকে কোচ হয়ে গোপীচন্দ ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মানচিত্রটাই পাল্টে দিয়েছেন।

এন জগন্নাথ দাস

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০৪:২১
অস্ট্রেলিয়ায় সুপার সিরিজ জিতে নতুন নায়ক শ্রীকান্ত। ফাইল চিত্র

অস্ট্রেলিয়ায় সুপার সিরিজ জিতে নতুন নায়ক শ্রীকান্ত। ফাইল চিত্র

ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় কিদম্বি শ্রীকান্তের টানা দুটো জয় প্রমাণ করছে পুল্লেলা গোপীচন্দ ভারতীয় কোচেদের মধ্যে অবিসংবাদিত রাজা। ২০০৫ থেকে কোচ হয়ে গোপীচন্দ ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মানচিত্রটাই পাল্টে দিয়েছেন।

গোপীচন্দের সবচেয়ে বড় গুণ স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন। শৃঙ্খলা রেখে চলতে পছন্দ করেন। লক্ষ্য বজায় রাখেন। নিজের খেলোয়াড় জীবনেও গোপীচন্দ ঠিক এ রকমই ছিলেন। কিন্তু ভারতের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের এই সাফল্যের পিছনে কারণ কী? গোপীচন্দের মতে কোনও চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে গেলে তাঁকে সঠিক পথ দেখাতে হয়। ‘‘বছরের পর বছর পরিশ্রমের পরেই সাফল্য আসে। প্লেয়ারদের বিশ্বাস রাখতে হয় আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তারা পারবে। কেউ জিতলে আমি খুব খুশি হই। কিন্তু তাতেও রাশ হাল্কা করি না। একটা টুর্নামেন্ট শেষ হলে পরেরটা নিয়ে ভাবি,’’ একবার বলেছিলেন গোপীচন্দ।

নিজের খেলোয়াড় জীবনে গোপীচন্দকে অনেক ঝড়ঝাপ্টা সামলাতে হয়েছে। তাঁর ট্রেনিংয়ের জন্য টাকা বাঁচাতেন ওঁর মা। লাল বাহাদুর ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সেই সময় ভাল পরিকাঠামো ছিল না। গোপীচন্দ বলেন, ‘‘ইয়োনেক্সের শাটলের জন্য টাকা বাঁচাতাম যাতে কোনও বড় ম্যাচের আগে প্র্যাকটিস করতে পারি। ভাল পরিকাঠামো ছিল না। এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা ভাল প্লেয়ার তৈরি করেছি।’’

অবসর নেওয়ার পরেই গোপীচন্দ তাঁর লক্ষ্য স্থির করে ফেলছিলেন— এমন সমস্ত প্রতিভা খুঁজতে হবে, যাঁরা কঠিন পরিশ্রমের মধ্যেও লড়াই করে যাবেন। ‘‘ভারতীয়দের স্কিল আছে। কিন্তু গতি, শক্তি আর সহ্যক্ষমতায় পিছিয়ে আছে। এই তিনটে জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নামতে হলে।’’

আধুনিক মানের ইন্ডোর অ্যাকাডেমি তৈরি করার চ্যালেঞ্জ নেন গোপীচন্দ। ‘‘আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল অ্যাকাডেমিতে যাতে প্লেয়াররা সঠিক পরিকাঠামো পায় যেমন খেলার জায়গা, স্পা, জিম, সুইমিং পুল। আমি বিশ্বের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে গিয়েছি। একটা ধারণা ছিল কী ভাবে কোনও অ্যাকাডেমি তৈরি করতে হয়,’’ বলছিলেন গোপীচন্দ।

অ্যাকাডেমি তৈরি হওয়ার পরে শুরু হল প্রতিভা খুঁজে আনার কাজ। প্রথম দিকের সেরা নাম সাইনা নেহওয়াল। ট্রেনিং নিয়ে কখনও আপস করতেন না গোপীচন্দ। হার মেনো না— এটাই ব্যাডমিন্টন কোচ গোপীচন্দের দর্শন। খেলোয়াড় হিসেবেও অনেক বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছে। চোটের জন্য প্রায় কেরিয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু তাতেও হার না মেনে নিজের স্বপ্নপূরণ করেছেন। গোপীচন্দের শিষ্যদের মধ্যেও এই জেদটাই ফুটে ওঠে।

অবশ্যই গোপীচন্দের পাশে স্তম্ভের মতো ছিলেন তাঁর মা সুব্বারাভাম্মা। ‘‘আমার জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছে মা,’’ বলেন গোপীচন্দ। বর্তমানে গোপীচন্দের অ্যাকাডেমি দেখাশোনা করেন তিনি। ট্রেনিং নিতে আসা তরুণ খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেন। গোপীচন্দ বাইরে থাকলে অ্যাকাডেমি মায়ের দায়িত্বেই ছেড়ে দিয়ে যান।

প্রতিভা তুলে আনার চোখটা আছে গোপীচন্দের। অনেকেই জানেন না শ্রীকান্ত ডাবলস খেলতেন আর ওঁর দাদা নন্দগোপাল ছিলেন সিঙ্গলস প্লেয়ার। কিন্তু গোপীচন্দের পরামর্শেই শ্রীকান্ত সিঙ্গলস খেলতে শুরু করেন। বাকিটা ইতিহাস।

দায়বদ্ধতার উদাহরণ রেখে অ্যাকাডেমিতে প্রত্যেক দিন সবচেয়ে আগে আসেন কোচ। পিভি সিন্ধুর বাবা পিভি রামানাও মনে করেন গোপীচন্দের থেকে বাকি কোচেদের শেখা উচিত। ‘‘অ্যাকাডেমিতে ভোর চারটের মধ্যে আসে গোপীচন্দ। প্লেয়ারদেরও শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে চায়। সিন্ধু অনেক বার গোপীচন্দের রাগের মুখে পড়েছে যখন দেরি করে ট্রেনিংয়ে এসেছে। এটা খেলোয়াড়দের সাফল্যের পিছনে অন্যতম কারণ,’’ বলেন সিন্ধুর বাবা রামানা।

গোপীচন্দ নিজেই ঠিক করেন শিষ্যদের ট্রেনিংয়ের পদ্ধতি। ‘‘রিও অলিম্পিক্সের আগে সিন্ধু আর শ্রীকান্তের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনিং পদ্ধতির ছক কষা হয়েছিল,’’ বলছিলেন আরএমভি গুরুসাইদত্ত। সেই দু’মাসের ট্রেনিংয়ের জন্যই অলিম্পিক্সে অন্য এক সিন্ধু আর শ্রীকান্তকে দেখতে পেয়েছিল সবাই। গুরুসাইদত্ত যোগ করেন, ‘‘আমি সিন্ধুর খেলা দেখেছি। কিন্তু রিওর মতো এত ভাল খেলতে দেখিনি। সিন্ধুর মধ্যে প্রতিভা আছে কিন্তু এতটা আগ্রাসী ওকে কখনও দেখায়নি। কোর্টেও খুব দ্রুত মুভ করছিল। শ্রীকান্তের ক্ষেত্রেও তাই। শরীরী ভাষাটাই পাল্টে গিয়েছিল। রিও যাওয়ার আগেও দু’জনকে দেখে খুব আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল।’’

সিঙ্গলস আর ডাবলসের ওপর মন দিতে ইন্দোনেশিয়ার মুলয়ো হান্দোয়ো আর মালয়েশিয়ার ডাবলস কোচ তান কিম হারকে আনেন গোপীচন্দ। কোচেরা যোগ দেওয়ার পরে তাঁর ওপরেও চাপ কমেছে। কয়েক দিন আগে গোপীচন্দ বলছিলেন, ‘‘রোজ বাইরে গিয়ে কাজ করে আবার অ্যাকাডেমি সামলানো এক জনের পক্ষে খুব কঠিন। এই কোচেরা যোগ দেওয়ার পরে আমার কাজ সহজ হয়েছে। দু’জনেই দারুণ কোচ। বড় বড় টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক ভাবে আরও ভাল ফল পাচ্ছি।’’

লেখক ‘তেলঙ্গনা টুডে’র ডেপুটি এডিটর

Kidambi Srikanth Pullela Gopichand badminton পুল্লেলা গোপীচন্দ কিদম্বি শ্রীকান্ত
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy