প্রয়াত হলেন দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিল। শুক্রবার সকালে মহারাষ্ট্রের লাতুরে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। ৯০ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন শিবরাজ। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা (যা ২৬/১১-র হামলা নামেই পরিচিত)-র পর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যর্থতার নৈতিক দায় নিয়ে মনমোহন সিংহের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন শিবরাজ।
কয়েক দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন শিবরাজ। রাজনীতিতেও খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না। শুক্রবার সকালে নিজের বাসভবন ‘দেবঘর’-এ মৃত্যু হয় তাঁর। শিবরাজের এক পুত্র (শৈলেশ পাতিল), পুত্রবধূ (অর্চনা পাতিল) এবং দুই নাতনি রয়েছেন। প্রবীণ কংগ্রেস নেতার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “শিবরাজ পাতিলজির মৃত্যুতে মর্মাহত। তিনি এক জন অভিজ্ঞ রাজনীতিক ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিধায়ক, সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মহারাষ্ট্র বিধানসভা এবং লোকসভার স্পিকার হিসাবে দায়িত্বভার সামলেছেন।” প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে তাঁর বাসভবনে গিয়েছিলেন শিবরাজ। সেটাই শিবরাজের সঙ্গে তাঁর শেষ সাক্ষাৎ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৩৫ সালের ১২ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার চাকুর গ্রামে জন্ম হয় শিবরাজের। অল্প বয়সেই লাতুর পুরসভার প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত টানা সাত বার লাতুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন শিবরাজ। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসাবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বভার সামলেছেন শিবরাজ। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত লোকসভার স্পিকার ছিলেন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত পঞ্জাবের গভর্নর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চন্ডীগড়ের প্রশাসক ছিলেন।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের একটি বড় অংশ শিবরাজের পান্ডিত্য, বিশ্লেষণী ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন। সাংবিধানিক বিষয়ে তাঁর পাণ্ডিত্যের কথা স্বীকার করেন বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরাও। আরও একটি কারণে দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে শিবরাজের কদর ছিল। তা হল, প্রকাশ্য জনসভায় তো বটেই, ব্যক্তিগত আলাপচারিতাতেও কখনও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী সম্পর্কে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেন না তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই রাজনৈতিক সংযম এবং সম্ভ্রম বজায় রেখেছিলেন তিনি।