ইউএস ওপেন জয়ের পর নোভাক জোকোভিচ। ছবি: রয়টার্স।
পুরস্কারের মঞ্চে উঠে প্রতিপক্ষকে হারানোর জন্য ক্ষমা চাইলেন নোভাক জোকোভিচ। এমনটাই দেখা গেল সোমবার ভোরে। ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে দুঃখিত জোকার, কারণ প্রতিপক্ষ দানিল মেদভেদেভকে হারতে হয়েছে বিবাহবার্ষিকীর দিনে।
ইউএস ওপেন জিতে নানা আবেগে ধরা দিলেন জোকোভিচ। জয়ের পরেই ছুটে গেলেন গ্যালারিতে। সেখানে তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছিয়ে দিলেন, হাওয়া করলেন মা। টেনিস কোর্টে বয়স ক্রমশ কমতে থাকা ৩৬ বছরের জোকোভিচ তখন আক্ষরিক অর্থেই যেন শিশু। কখনও আপনজনদের জড়িয়ে ধরলেন, কখনও চিৎকার করলেন। পুরস্কার জিতে আবার ক্ষমাও চাইলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেদভেদেভকে মজা করে বলেন, “আমি যদি জানতাম আজ তোমাদের বিবাহবার্ষিকী, তাহলে চাইতাম ফলটা অন্য রকম হোক। চাইতাম তুমি এই ম্যাচটা জিতে নাও।”
জোকোভিচ ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন জুতোয় ২৩ নম্বর লিখে। তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যা ২৩। সেটাই লেখা ছিল নীল রঙের জুতোয়। মেদভেদেভকে ফাইনালে ৬-৩, ৭-৬ (৭-৫), ৬-৩ গেমে হারিয়ে জোকোভিচ পরলেন পিঠে ২৪ লেখা একটি টিশার্ট। সামনে জোকোভিচ এবং প্রয়াত বাস্কেটবল খেলোয়াড় কোবি ব্রায়ান্টের ছবি। আমেরিকার বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের ছিল ২৪ নম্বর জার্সি। আমেরিকার মাটিতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে জোকোভিচ স্মরণ করলেন তাঁর বন্ধুকে। ২০২০ সালে কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়েছিল কোবির হেলিকপ্টার। ৪১ বছর বয়সে সেই দুর্ঘটনায় মারা যান কোবি। বন্ধু জোকোভিচের হাত ধরে ইউএস ওপেনে ফিরে এলেন সেই বিখ্যাত বাস্কেটবল তারকা, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘ব্ল্যাক মাম্বা’ নামে।
জোকোভিচ বলেন, “সাত দিন আগে আমার মনে হয় এই টিশার্ট বানানোর কথা। কাউকে কিছু বলিনি। দু’দিন আগে দলের লোকজনের কাছে সাহায্য চাই এটা বানানোর জন্য। কোবি আমার বন্ধু ছিল। আমরা জয়ের মানসিকতা নিয়ে কথা বলতাম। চোট পাওয়ার পর যখন ফিরে আসার চেষ্টা করছি, সেই সময় কোবি আমার পাশে ছিল। আমি ওর কথা মেনে চলতাম। আমার যখনই প্রয়োজন হয়েছে, তখনই পাশে পেয়েছি কোবিকে। দু’বছর আগে যা হয়েছে, তার জন্য আমি গভীর ভাবে দুঃখিত। ও ২৪ নম্বর জার্সি পরত। তাই আমার মনে হল এটাই সেরা উপায় কোবিকে সম্মান জানানোর।”
ম্যাচে স্ট্রেট সেটে মেদভেদেভকে হারিয়ে দেন জোকোভিচ। ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে মার্গারেট কোর্টকে ছুঁয়ে তিনি বলেন, “টেনিসে ইতিহাস গড়ে ভাল লাগছে। এই মুহূর্তটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল। যখন আমার সাত বছর বয়স, তখন ভাবতাম বড় হয়ে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হব। উইম্বলডন জিতব। সেটাই ছিল আমার এক মাত্র স্বপ্ন। পরে যদিও অনেক কিছু বুঝতে শিখি। তখন আমার লক্ষ্য পাল্টে যায়। নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। কখনও ভাবিনি এখানে দাঁড়িয়ে ২৪টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় নিয়ে কথা বলব।”
একটা সময় মনে হচ্ছিল ক্লান্তি গ্রাস করছে জোকোভিচকে। কিন্তু তাতেও কখনও ভেঙে পড়েননি তিনি। ফাইনাল জয়ের কাজটা সম্পূর্ণ করেন। চতুর্থ বার ইউএস ওপেন জেতেন। হার্ড কোর্টে এটি তাঁর ১৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। ১০ বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন তিনি। এ ছাড়াও ঘাসের কোর্টে উইম্বলডন জিতেছেন সাত বার। লাল সুরকির কোর্টে ফরাসি ওপেন জিতেছেন তিন বার। আগামী বছর তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। যে প্রতিপক্ষকে ইউএস ওপেনের ফাইনালে হারালেন সেই মেদভেদেভ বলেন, “আমার মনে হয় আরও অনেক বার তোমার সঙ্গে ফাইনালে দেখা হবে। কারণ তুমি তো এখনই থামবে না। তোমার গতি কমবে না। আরও অনেক ফাইনাল খেলবে তুমি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy