Advertisement
E-Paper

বিরাট মন্ত্রেই বদলে গিয়েছেন ফিকরু

প্রথম ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এ এটিকে-র সাফল্যের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন ফিকরু। গোলের পরে তাঁর সমারসল্ট হয়ে উঠেছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা আকর্ষণ।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৫:৪৫
ভক্ত: ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জোহানেসবার্গের টিম হোটেলে কোহালির সঙ্গে ফিকরু।

ভক্ত: ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জোহানেসবার্গের টিম হোটেলে কোহালির সঙ্গে ফিকরু।

বদলে যাওয়া এক তারকার কাহিনি।

উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য যিনি বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। বাদ পড়েছেন দল থেকেও। সেই ফিকরু তেফেরা লেমেসা এখন একেবারে অন্য মানুষ। আর তাঁর এই পরিবর্তনের নেপথ্যে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি!

প্রথম ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এ এটিকে-র সাফল্যের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন ফিকরু। গোলের পরে তাঁর সমারসল্ট হয়ে উঠেছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। কিন্তু কেরল ব্লাস্টার্স এফসি-র বিরুদ্ধে ফাইনালের আগে সেই ফিকরু-কেই দল থেকে ছেঁটে ফেলেছিলেন এটিকে কোচ আন্তোনিও লোপেস হাবাস। জানা গিয়েছিল, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্যই দলের প্রধান স্ট্রাইকারকে বাদ দিয়েছিলেন তিনি। চার বছর আগের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে না চাইলেও ফিকরু জানিয়ে দিলেন, এখন তিনি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছেন।

শনিবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে মহমেডানের অনুশীলন শেষ হওয়ার পরে ফিকরু বললেন, ‘‘চার বছর আগে আমার বয়স অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন আমি পরিণত। দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘এখন আর আমি উচ্ছৃঙ্খল কি না, সতীর্থদের জিজ্ঞেস করুন।’’

তা হলে কি মাঠে ফিকরু-র সেই ভয়ঙ্কর রূপ আর দেখা যাবে না? হাসতে হাসতে মহমেডান স্ট্রাইকারের জবাব, ‘‘মাঠে বিরাট কোহালি আগ্রাসী। কিন্তু মাঠের বাইরে ও একেবারে অন্য মানুষ। আমিও চাই বিরাটের মতো হতে।’’

ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময়ই বিরাট কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-দের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ফিকরু-র। বলছিলেন, ‘‘ডারবানে ওদের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল। তার পরে জোহানেসবার্গে ভারতের টিম হোটেলেও গিয়েছিলাম। একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করেছিলাম।’’ কেমন হল বিরাট, ধোনি-র সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা? উচ্ছ্বসিত ফিকরু বললেন, ‘‘আমি ভাবতেই পারিনি যে, ওরা আমাকে চিনতে পারবে। অসাধারণ কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছি ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে।’’

এটিকে ছেড়ে ধোনির চেন্নাইয়িন এফসি-তে যোগ দিয়েছিলেন ফিকরু। কিন্তু শেষ দু’টো আইপিএলে তাঁকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি কোনও ফ্রাঞ্চাইজি। যা শুনে বিরাট-ও নাকি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ফিকরু বলছিলেন, ‘‘দেখা হওয়ার পরে বিরাটের প্রথম প্রশ্ন ছিল, তোমাকে কেন আইএসএলে দেখছি না? আমাকে নিয়ে কেউ আগ্রহ দেখায়নি শুনে বিস্মিত বিরাট বলল, হতাশ হবে না। তোমাকে আবার আইএসএলে দেখতে চাই।’’ তা হলে কি আগামী মরসুমে বিরাটের এফসি গোয়া-র হয়ে খেলতে দেখা যাবে আপনাকে? হাসতে হাসতে ফিকরু-র জবাব, ‘‘এই মুহূর্তে আমি শুধু মহমেডানকে নিয়েই ভাবতে চাই। ক্লাব কর্তারা অনেক আশা নিয়ে আমাকে সই করিয়েছেন। আমার লক্ষ্য মহমেডানকে আই লিগের প্রথম ডিভিশনে তোলা।’’

প্রথম ডিভিশন আই লিগের অনেক ক্লাবই এই মরসুমে দেখিয়েছিল। তা হলে কেন দ্বিতীয় ভিভিশন আই লিগের দল মহমেডানে সই করলেন? ফিকরু শোনালেন আশ্চর্য কাহিনি, ‘‘বিরাট আমাকে শিখিয়েছে, সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে চলবে না। লড়াই করতে হবে। এই কারণেই মহমেডানে প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই।’’ আর ধোনির কাছে কী শিখলেন? ‘‘চেন্নাইয়িনে খেলার সময়ই ধোনির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও কী ভাবে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়, তা ওর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’

নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেললেও গোল করে উৎসবের ভঙ্গি পরিবর্তন করতে চান না। খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন, দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগের ম্যাচে সাদা-কালো জার্সিতেও গোল করে সমারসল্ট দেবেন। বললেন, ‘‘ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা-য় জন্ম আমার। ছোটবেলায় ফুটবলের পাশাপাশি জিমন্যাস্টিক্সও করতাম। ফলে সমারসল্ট দেওয়াটা আমার কাছে কোনও সমস্যাই নয়।’’

ফিকরু-র ফুটবলার হয়ে ওঠার কাহিনিও আকর্ষণীয়। সচ্ছল পরিবারে জন্ম তাঁর। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। বাবা-মা দু’জনেই চাইতেন তাঁদের বাকি চার ছেলের সঙ্গে ফিকরু-ও লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু ফিকরু-র লেখাপড়ায় একেবারেই আগ্রহ ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘লেখাপড়া করতে ভাল লাগত না। সারা দিনই বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় ফুটবল খেলতাম। আমার যখন বছর দশেক বয়স, পাড়ার এক জন স্থানীয় একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন। বলেছিলেন, ফুটবলার হিসেবে যদি প্রতিষ্ঠিত হতে চাও, তা হলে রাস্তায় খেললে হবে না। ফুটবল শিখতে হবে।’’

২০০৪ সালে ইথিওপিয়ার সেন্ট জর্জ এফসি-তে সই করেন ফিকরু। অভিষেকের মরসুমেই নজর কেড়ে নেন। সুযোগ পান ইথিওপিয়া-র জাতীয় দলে। ২০০৬ সালে সই করেন দক্ষিণ আফ্রিকার অরল্যান্ডো পাইরেটস এফসি-তে। সেখানেই চোখে পড়ে যান হাবাসের। তিনি-ই ফিকরু-কে নিয়ে এসেছিলেন এটিকে-তে। যদিও বিদায় নিতে হয়েছিল যন্ত্রণা নিয়ে। দলকে আইএসএলের ফাইনালে তুলেও খেলতে না পারার দুঃখ ভুলতে পারেননি। এ বার সেই ছবিটা বদলাতে চান মরিয়া ফিকরু। বলে দিলেন, ‘‘মহমেডানকে দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করতে চাই। এ বার কলকাতা ছাড়তে চাই নায়কের সম্মান নিয়েই!’’

Fikru Teferra football Cricket Virat Kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy