Advertisement
E-Paper

‘সচিনের একশো সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙতে পারে শুধু কোহালিই’

ভারতীয় বোলাররা ভাল বলেই উইকেট তুলেছে, অহেতুক ভুল করেনি। তা ছাড়া ভুললে চলবে না, ওরা অত্যন্ত গরমের মধ্যে, নিষ্প্রাণ পিচে বল করছিল।

জেফ থমসন

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫০
প্রতীক্ষা: আজ সিরিজের ফয়সালার ম্যাচে বিরাট কোহালি এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুখে এই তৃপ্তির হাসিই দেখতে চাইছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ফাইল চিত্র

প্রতীক্ষা: আজ সিরিজের ফয়সালার ম্যাচে বিরাট কোহালি এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুখে এই তৃপ্তির হাসিই দেখতে চাইছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ফাইল চিত্র

অ্যাডিলেডে আগের ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা কী ভাবে ২৯৮ রান তাড়া করে জিতল, এখন এটাই আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার কিন্তু ওই ম্যাচে ভারতীয় বোলিং বেশ ভাল লেগেছে। শেষ দিকে দারুণ ভাবে ফিরে এসে অস্ট্রেলিয়াকে ওরা তিনশোর কমে আটকে রাখল। ৪৫ ওভারের পরে মনে হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়া ৩২৫ রানের আশে পাশে করে ফেলবে। কিন্তু গোটা মরসুম জুড়ে ভাল বল করে যাওয়া ভারতীয় বোলাররা আবার নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে দেখাল।

ভারতীয় বোলাররা ভাল বলেই উইকেট তুলেছে, অহেতুক ভুল করেনি। তা ছাড়া ভুললে চলবে না, ওরা অত্যন্ত গরমের মধ্যে, নিষ্প্রাণ পিচে বল করছিল। যশপ্রীত বুমরার অনুপস্থিতিতে ভারতীয় বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিল ভুবনেশ্বর কুমার। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ভুবনেশ্বরকে ডাকা হয় ভুবি বলে। সেই ভুবি এক ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর শন মার্শকে ফিরিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ওঠার গতি আটকে দেয়।

আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া গোটা কুড়ি রান কম তুলেছিল। কিন্তু ২৯৯ রানের লক্ষ্যটাও খুব অল্প কিছু নয়। ভারতীয় ওপেনাররা ভাল শুরু করল। তার পরে প্রায় প্রতিটা উইকেটে একটা পার্টনারশিপ হয়েছে। এই সফরে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা মাথা খাটিয়ে ব্যাট করেছে। অ্যাডিলেডও কোনও ব্যতিক্রম হয়ে থাকল না।

বিরাট কোহালি প্রসঙ্গে আসি। ওকে নিয়ে নতুন কথা আর কী বলব? অ্যাডিলেডে দেখলাম কোহালির জন্য একটা নতুন ছকে ফিল্ড সাজিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একটা সময় কোহালিকে আটকেও রেখেছিল। বাউন্ডারি খুব একটা পেতে দেয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেঞ্চুরি করে দলকে জয়ের রাস্তায় নিয়ে গেল ভারত অধিনায়ক। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কোহালির রেকর্ড প্রায় অবিশ্বাস্য পর্যায়ের। দলের জয়ে অবদান রাখার ব্যাপারে ও অনেক মহান ব্যাটসম্যানকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে।

এক জন খেলোয়াড় কত বড়, সেটা আমি বিচার করি দলের জয়ের পিছনে তার অবদান দেখে। শুধু কত রান করল, কটা উইকেট পেল বা সেঞ্চুরি করল কি না, এ সব আমার কাছে বিচার্য নয়। আমার কাছে বিচার্য হল, দলের জয়ে তোমার ভূমিকাটা কী। চাপের মুখে আর দলের প্রয়োজনে নিজের সেরাটা বার করে আনার একটা বিশেষ দক্ষতা আছে কোহালির। আমি ওর পরিসংখ্যানগুলো খতিয়ে দেখছিলাম। শেষ ১৯টি ওয়ান ডে ইনিংসে নয়টি সেঞ্চুরি করেছে কোহালি। কী ধারাবাহিকতা!

তিরিশ বছর বয়সেই ওর ওয়ান ডে-তে ৩৯টি সেঞ্চুরি হয়ে গেল। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকরের ৪৯টি সেঞ্চুরির চেয়ে দশটা কম। তিন নম্বরে রিকি পন্টিং ৩০টি সেঞ্চুরি করে অনেক পিছনে। কোহালির বিশেষত্ব হল, ও এতগুলো সেঞ্চুরি করেছে অনেক কম সংখ্যক ম্যাচে আর অবিশ্বাস্য গতিতে। সচিনের ৪৯টি সেঞ্চুরি এসেছে ৪৬৩ ম্যাচে। ৩০টি সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে পন্টিংয়ের লেগেছিল ৩৭৫ ম্যাচ। আর কোহালির ৩৯টি সেঞ্চুরি এসেছে মাত্র ২১৮ ম্যাচে।

এ বার টেস্ট আর ওয়ান ডে সেঞ্চুরির হিসেবটা দেখা যাক। কোহালি এখানেও একটা বিশাল রেকর্ড তাড়া করছে। সচিনের ১০০ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির রেকর্ড কোনও দিন ভাঙা যাবে না, এ রকম একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কোহালি সেই রেকর্ডের পিছনেও দৌড়চ্ছে। সব ফর্ম্যাট মিলিয়ে ৩৬০ ম্যাচে ৬৪টি সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে কোহালির। সচিনের ১০০ সেঞ্চুরি এসেছে মোট ৬৬৪ ম্যাচ থেকে। আমি কখনওই বিভিন্ন যুগের ক্রিকেটারদের মধ্যে তুলনায় বিশ্বাস করিনি। কারণ পরিবেশ আলাদা, নিয়ম আলাদা, ক্রিকেটারেরাও আলাদা। কিন্তু সচিনের রেকর্ড কেউ যদি ভেঙে দিতে পারে, সে হল কোহালি।

অ্যাডিলেডে ধোনিকে ম্যাচ শেষ করে আসতে দেখে অনেক ভারতীয় ক্রিকেট ভক্ত নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছে। ধোনি শুরুতে কোহালিকে স্ট্রাইক দিয়ে গিয়েছে আর তার পরে শেষ ওভারে ওই দুর্দান্ত ছয়টা মেরে ম্যাচ শেষ করে দিয়েছে। তবে আমাকে প্রভাবিত করেছে যে ক্রিকেটারটি, তার নাম দীনেশ কার্তিক। ওর ১৪ বলে অপরাজিত ২৫ ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আমার তো দেখে মনে হল, ধোনির চেয়েও বেশি ভাল ব্যাট করেছে কার্তিক। খুব চাপের মুখে ব্যাট করতে এসেছিল কার্তিক। কয়েকটা ভাল শট খেলে ম্যাচের রাশ সব সময় নিজেদের হাতে রেখে দিল ও।

অ্যাডিলেডে রান তাড়া করে ওই জয় বিশ্বকাপ অভিযানে ভারতের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। তা ছাড়া আজ, শুক্রবার মেলবোর্নে নামার আগে ভারতের জয়ের খিদেটাও বাড়িয়ে রাখবে। কোহালিরা ইতিমধ্যেই উপমহাদেশের প্রথম দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে টেস্ট সিরিজ জিতেছে। এ বার সুযোগ এসেছে ‘গোল্ডেন ডাবল’ করার। টেস্টের পরে ওয়ান ডে সিরিজ জেতার। ভুলবেন না, ভারত কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজটা ১-১ করেছে। যার মানে হল, মেলবোর্নে না হারলে দীর্ঘ অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ভারত অপরাজিত অবস্থায় ফিরবে। জানি না, ক্রিকেট ইতিহাসে ক’টা দলের এ রকম কৃতিত্ব আছে।

আগ্রাসী এক অধিনায়কের নেতৃত্বে ভারত কিন্তু জয়ের গন্ধ পেয়ে গিয়েছে। সহজে এই সুযোগটা ওরা হাতছাড়া করবে না।

Jeff Thomson Cricket Cricketer Virat Kohli Sachin Tendulkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy