Advertisement
E-Paper

সিন্ধুর সমস্যাটা মানসিক, মত প্রাক্তনদের

দু’বছর আগে রিও অলিম্পিক্সে যাঁর কাছে হেরেছিলেন, সেই ক্যারোলিনা মারিনের কাছেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হারের কারণ কী? কেন বারবার চূড়ান্ত খেতাব যুদ্ধে পরাস্ত হচ্ছেন সিন্ধু?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৫:১০
ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

ফের ফাইনালে হার পি ভি সিন্ধুর। ২০১৬ থেকে ধরলে এই নিয়ে আটটি বড় প্রতিযোগিতার শেষ বাধা টপকাতে পারলেন না অলিম্পিক্সে রুপোজয়ী। দু’বছর আগে রিও অলিম্পিক্সে যাঁর কাছে হেরেছিলেন, সেই ক্যারোলিনা মারিনের কাছেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হারের কারণ কী? কেন বারবার চূড়ান্ত খেতাব যুদ্ধে পরাস্ত হচ্ছেন সিন্ধু?

প্রাক্তন জাতীয় কোচ বিমল কুমার রবিবার বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হেরে গেল সিন্ধু। সব চেয়ে বড় কথা আবার একটা বড় প্রতিযোগিতার ফাইনালে হারল বলে সিন্ধুকে অনেকে হয়তো চোকার বলবে। আমি কিন্তু তাদের দলে পড়ছি না। আমার মনে হয় সিন্ধুর সমস্যাটা মানসিক। সেটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতাও রয়েছে ওর।’’

কেন বলছেন এ কথা তার ব্যাখাও দেন বিমল, ‘‘প্রথম গেমটা যদি দেখেন, সিন্ধু কিন্তু ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। প্রায় গোটা গেমটাতেই মারিনের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু গেমটার শেষ দিকে হঠাৎ করে ও ম্যাচটা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। ওই সময় দ্রুত তিনটে পয়েন্ট হারানোটাই কাল হল সিন্ধুর। এই পর্যায়ের ব্যাডমিন্টনে মারিনের মতো প্রতিপক্ষ কোনও সুযোগ পেলে সেটার পুরো ফায়দা তুলতে চাইবেই। ঠিক সেটাই হয়েছে। এর পরেই ছন্দ ফিরে পায় মারিন। দ্বিতীয় গেমে সেটাই কাজে লাগিয়ে জয় তুলে নিল।’’

প্রতিপক্ষের পরিকল্পনার কাছেই শুধু নয়, প্রশ্ন উঠছে বড় মঞ্চে কি বারবার চাপের কাছে হার মানছেন সিন্ধু? এ বছর টানা চারটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও খেতাব অধরা তাঁর। বিখ্যাত টেনিস তারকা বিলি জিন কিং এক বার বলেছিলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়নরা সব সময় হারতে ভয় পায়। আর বাকি খেলোয়াড়রা ভয় পায় জিততে।’’ বিমল মনে করেন, সিন্ধুর এই শেষ বাধায় আটকে যাওয়ার সমস্যাটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দেখুন, সবাই ফাইনালে হারটাই দেখছে সিন্ধুর। এ বার কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিফাইনালে দুই জাপানি খেলোয়াড় ওকুহারা আর ইয়ামাগুচিকে হারানোটা কম নয়। ওকুহারা তো আবার গত বারের চ্যাম্পিয়নও। তাই বলছি, গোটা প্রতিযোগিতায় একটা ম্যাচে ভুল হতেই পারে। সেটা বড় কিছু নয়। আমি নিশ্চিত সিন্ধু এই মানসিক সমস্যাটা কাটিয়ে উঠবে।’’

প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও কোচ মধুমিতা বিস্তও মনে করেন, সিন্ধুর ফাইনালে হারা নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। নয়াদিল্লি থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘সিন্ধু কিন্তু জুনে মালয়েশিয়া ওপেনে এই মারিনকেই হারিয়ে দিয়েছিল। আবার বিশ্বের এক নম্বর তাই জু ইং-কেই দেখুন। এত ধারাবাহিক খেলোয়াড় যে কি না গত ৩৬ ম্যাচে মাত্র এক বার হেরেছে, সেও কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সে দিক থেকে সিন্ধুর টানা দু’বার ফাইনালে ওঠা বড় কৃতিত্ব।’’

মধুমিতা মনে করেন, রবিবার প্রথম গেমে জেতার এত কাছাকাছি গিয়ে হারের ধাক্কাটা সিন্ধু নিতে পারেননি। তাই দ্বিতীয় গেমে কিছুটা নেতিবাচক ভাবে তাঁকে শুরু করতে দেখা যায়। সেখানেই ম্যাচটা পুরোপুরি হাতের মুঠোয় চলে আসে মারিনের। ‘‘মারিন বরাবরই প্রতিপক্ষকে মানসিক চাপে রেখে খেলতে ভালবাসে। সিন্ধু আমায় এক বার বলেছিল, মারিন পয়েন্ট নিয়ে ভীষণ চিৎকার করে। আমি বলেছিলাম, তুইও পাল্টা চেঁচাবি। আজ ম্যাচের প্রথম দিকে মারিন যখন পিছিয়ে ছিল, ওর চিৎকার কিন্তু থেমে গিয়েছিল। সিন্ধু প্রথম গেমটা জিতলে ম্যাচের ফল অন্য দিকেও গড়াতে পারত।’’

হঠাৎ ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাওয়ার এই সমস্যা কেন হচ্ছে সিন্ধুর? মধুমিতা বলেন, ‘‘আসলে প্রত্যাশার চাপ তো একটা থাকেই। গত বারও সিন্ধু ফাইনালে উঠেছিল। তাই নিজেও ভীষণ ভাবে চেয়েছিল এ বার পদকের রং পাল্টে দিতে। এত চাপ সামলানো সোজা নয়। তা ছাড়া টানা ম্যাচ খেলার ব্যাপারটাও রয়েছে। তাও দেখুন ও কিন্তু ফাইনালের আগে চারটে ম্যাচে একটাও গেম হারেনি। মেশিনও মাঝেমধ্যে বিগড়ে যায়, আর এ তো মানুষের শরীর! চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে শারীরিক, মানসিক ভাবে দিনটা তার হতে হয়। আজ সিন্ধুর দিন ছিল না।’’

মধুমিতা মনে করেন, এখন সিন্ধুর সমালোচনা না করে পাশে থাকতে হবে। বললেন, ‘‘আমাদের সবারই এই মানসিকতাটা থাকা দরকার। সিন্ধুর পাশে থাকতে হবে। আমি সিন্ধুকে ফাইনালের পরে বললাম, খুব ভাল খেলেছিস। দু’বার টানা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিস। চারটে পদক জিতেছিস। সেটা বিরাট ব্যাপার। এ বার সোনা আসেনি। পরের বার নিশ্চয়ই আসবে। এই বিশ্বাসটা রেখে এগিয়ে যা।’’

Badminton P.V. Sindhu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy