Advertisement
E-Paper

ইলিশ আর মিষ্টিতেই জয়ে‌র উৎসব ভেতো পর্তুগিজদের

স্ট্রেচারে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ইউরো ফাইনালের সেই দৃশ্য গোটা বিশ্বের পর্তুগাল সমর্থকদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল। মধ্যরাতের স্তব্ধতা তখন মহিষাদলের মিরপুরেও। সেখানে হাহাকার শুধু রোনাল্ডো ভক্তদের নয়, নয় পর্তুগালের প্রতি আটপৌরে সমর্থনের। সেই বিষাদে মিশে শিকড়ের টান।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪২
‘পর্তুগিজ গ্রাম’ মিরপুরে জয়োল্লাস। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

‘পর্তুগিজ গ্রাম’ মিরপুরে জয়োল্লাস। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

স্ট্রেচারে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

ইউরো ফাইনালের সেই দৃশ্য গোটা বিশ্বের পর্তুগাল সমর্থকদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল। মধ্যরাতের স্তব্ধতা তখন মহিষাদলের মিরপুরেও।

সেখানে হাহাকার শুধু রোনাল্ডো ভক্তদের নয়, নয় পর্তুগালের প্রতি আটপৌরে সমর্থনের। সেই বিষাদে মিশে শিকড়ের টান। আর শিকড়ের শক্তিতেই বুঝি হাল ছাড়েননি সাহেব রোজারিও, সুদীপ্ত পেরেরারা। হোন না তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুরের অজ গাঁয়ের বাসিন্দা, কিন্তু রক্ত তো লড়াকু পর্তুগিজদের!

মহিষাদলের বেতকুণ্ডু পঞ্চায়েতের ‘পর্তুগিজ গ্রাম’ মিরপুর তাই রবিবার রাত জেগেছে রেনাতো, নানি, এডারদের জন্য। যিশুর কাছে প্রার্থনা করেছে, রোনাল্ডোর জন্যই যেন সতীর্থরা কাপটা ঘরে আনেন। সেই প্রার্থনা বিফলে যায়নি। এডারের দুরন্ত গোল সারা পৃথিবীর পর্তুগিজদের মতোই এই গ্রামে উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছে। খেলাশেষে পথে নেমেছে আট থেকে আশি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর অন্ধকারের মধ্যেই পরস্পরকে জড়িয়ে তারা মুখরিত হয়েছে পর্তুগালের নামে জয়ধ্বনিতে।

সেই জয়ধ্বনি ঝরঝরে বাঙলাতেই। মিরপুরে যে ১৭০টি পরিবারের বাস, তাদের পদবি তেসের, রোথা, পেরেরা, লোবো, ডি'ক্রুজ হলেও কেউ পর্তুগিজ ভাষা জানে না, পর্তুগালের মাটিতে পা-ও দেয়নি কেউ। পেশায় চাষি, শ্রমিক বা চাকুরিজীবী মানুষগুলো চলনেবলনে ভেতো বাঙালি। জয় উদ্‌যাপনেও তাই ষোলোআনা বাঙালিয়ানা। সকাল হতেই বাড়ির কর্তারা কেউ লাইন দিয়েছেন মাংসের দোকানে, কারও থলে ভরেছে টাটকা ইলিশে। সাহেব রোজারিওর বাড়িতে যেমন এ দিন মুরগির মাংস হয়েছে। সুদীপ্ত পেরেরার বাড়িতে ম ম করছে সর্ষে ইলিশ। দুপুরে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়ার পরে সন্ধেতেও ফের সবাই মিলে মিষ্টিমুখ। মহিষাদলের রথের মেলা থেকে জিলিপি, রসগোল্লা এসেছে।

সোমবার মিরপুরের স্কুল-কলেজে গণ-কামাই। ভোরের আলো ফোটার আগে গ্রামের রোমান ক্যাথলিক গির্জায় হাজির ব্যান্ড। বেলায় সেখানেই রোনাল্ডোর ছবিতে মালা দেন গির্জার সম্পাদক পল তেসরা।

এই আবেগের পিছনে রয়েছে তিনশো বছরের পুরনো ইতিহাস। ১৭৪২ সালে বাংলায় বর্গী আক্রমণের সময় নিজেদের সুরক্ষায় গোয়া সরকারের অধীন বন্দিদের থেকে ১২ জনের পর্তুগিজ গোলন্দাজ বাহিনী এনেছিলেন মহিষাদলের রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়। রাজার মৃত্যুর পরে রানি জানকী ওই পর্তুগিজদের গেঁওখালির মিরপুরে নদীর ধারে নিষ্কর জমিতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেই পর্তুগিজদের উত্তরসূরিরা কালের নিয়মে বাঙালি হয়ে গিয়েছেন। তবে মিরপুর সেই থেকেই ‘পর্তুগিজ গ্রাম’।

তাই পর্তুগালের প্রথম ইউরো কাপ জয়ে মিরপুরের ছেলেবুড়োরা দেশের জয় দেখছেন। মিরপুরে আজ অকাল বড়দিন! বিলকুল পর্তুগালের কোনও গ্রামের মতোই।

Portuguese village Euro Cup Ronaldo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy