আগের দিন জমজমাট প্রথম লেগ সেমিফাইনাল জিতে তাঁর ফূর্তি যে আরও বেড়েছে তা চব্বিশ ঘণ্টা পর বাইপাসের ধারের হোটেলের ‘মিট দ্য প্রেস’-এ নিজেই স্বীকার করে নেন। ‘‘আমরা এখন সুখে আছি। আর এই মজাটাই ধরে রাখতে হবে।’’ হাবাসের থেকে মলিনার হাতে টিমের ব্যাটন বদলে কি এই সুখ? মুহূর্তে আসে পস্টিগার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর। যেখানে নাম না করে পরোক্ষে বর্তমান কোচকে ভোট টিমের মার্কির। ‘‘দু’জন দু’রকমের। হাবাস একটু উত্তেজিত থাকতেন। মলিনা সেখানে আইস কুল। কোচ হলেন দলের লিডার। ড্রেসিংরুমের বাঁধুনিটা তাঁর হাতে থাকে। আমাদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা টিমের এ বারের পারফরম্যান্সে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
একটু থেমে এর পর ফাঁস করলেন ফোরলানদের মুম্বই সিটিকে শনিবার চমকপ্রদ হারানোর রহস্য। পস্টিহার কথায়, ‘‘মুম্বই ম্যাচ দারুণ খেলে জিতেছি ট্রফির জন্য আমাদের গোটা দলের মরিয়া তাগিদটা মাঠে ঠিকরে বেরনোর জন্য।’’
এক গোলের লিড নিয়ে মঙ্গলবার মুম্বইয়ের মাঠে ফিরতি সেমিফাইনালে এটিকে নামলেও ডিফেন্সে অর্ণব মণ্ডলকে তো ফের পাবে না। প্রথম পর্বে ঠিক যে জায়গাটায় টার্গের করেছিলেন সুনীল ছেত্রীরা! শুনে এটিকের পর্তুগিজ তারকা বললেন, ‘‘অ্যাওয়ে সেমিফাইনাল এমনিতেই খুব টাফ। শনিবারের রেজাল্ট ভুলে আমরা তাই এখন থেকেই ফোকাসড। অর্ণব তিনটে আইএসএলেই ভাল খেলেছে। ওর না থাকাটা আমাদের জন্য সত্যিই খারাপ খবর। আমরা মুম্বইয়ে জিততে চাই অর্ণবের জন্য।’’ সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে এনে পস্টিগা যোগ করলেন, ‘‘অর্ণবের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। গত বছর তো এই অবস্থাই আমার হয়েছিল। তাও গোড়াতেই।’’
গোটা টিমের সঙ্গে সকালে জিম আর পুল সেশন সেরে পস্টিগার পাশে বসে একমনে এতক্ষণ তাঁর কথা শুনছিলেন আগের দিন কলকাতাকে ম্যাচের গোড়াতেই এগিয়ে দেওয়া লালরিন্দিকা। পস্টিগাকে দেখিয়ে সেই ডিকার শংসাপত্র, ‘‘ম্যাচে কী ভাবে নিজেকে নিংড়ে দিতে হয় তা পস্টিগাদের কাছ থেকে রোজ শিখছি। পস্টিগা তো সব চাপ কাঁধে নিয়ে আমাদের ফ্রি রাখছে পরের সেমিফাইনালের জন্য।’’
সোমবার সকালের বিমানে মুম্বই উড়ে যাচ্ছে এটিকে। তার আগে রবিবার বিকেলে সেন্ট্রাল পার্কে গোটা টিম নিয়ে ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলনে নিজের স্ট্র্যাটেজি ঝালিয়ে নেন কলকাতার কোচ মলিনা। আটলেটিকো টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের মাঠে নাকি বিপক্ষ ডিফেন্সের বাঁ দিকে আক্রমণের স্টিম রোলার চালিয়ে দেওয়া আর মাঝমাঠে সনি-সুনীল-দিফেদেরিকো ত্রিভুজকে থামানোর নীল-নকশা আঁকা হয়েছে। স্বভাবতই টিমের গোপন অঙ্ক কষা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ পস্টিগা। শুধু বললেন, ‘‘মুম্বইতেও জেতার লক্ষ্যেই নামব। আমাদের লক্ষ্য একেবারে কোচি থেকে আইএসএল ট্রফিটা নিয়ে কলকাতায় ফেরা।’’
কিন্তু মাত্র এক গোলে পিছিয়ে থাকা মুম্বই তো ঘরের মাঠে কলকাতার উপর ঝাঁপাবে? পর্তুগাল টিমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর একদা সতীর্থ বলে দেন, ‘‘হিউমও কী করতে পারে সেটা তো গতকালই দেখলেন।’’ আর আপনি নিজে? পস্টিগা বলে ওঠেন, ‘‘একটু নীচের দিক থেকে থেকে খেলে টিমের কাজে লাগতে পারছি। প্রথম লেগে তাই করেছি। মুম্বইতেও সেটাই করব।’’
আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হলে পস্টিগা কী করবেন? সেটা নিয়ে অবশ্য হেঁয়ালি করছেন এতক্ষণ সোজাসাপ্টা উত্তর দেওয়া কলকাতার পর্তুগিজ তারকা। ‘‘আইএসএল ট্রফিটা আগে আমার প্রাপ্তির তালিকায় উঠুক। তার পর ভাবা যাবে। পনেরো বছর দেশে-বিদেশে খেলে বেড়াচ্ছি। পরিবারের সঙ্গেও তো সময় কাটাতে হবে না কি!’’