ফেডেরার-নাদাল লড়াই অতীত। ফেডেরার-জোকোভিচ লড়াই দেখারও সুযোগ নেই আর। নাদাল-জোকোভিচ লড়াইও চলে গিয়েছে আর্কাইভে। টেনিসপ্রেমীরা মুখিয়ে আছেন রবিবার আলকারাজ়-জোকোভিচ লড়াই দেখার জন্য। উইম্বলডনে কাঙ্ক্ষিত সেই লড়াইয়ের সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে পারেন সিনার।
৩৮ বছরের নোভাক জোকোভিচ ৫২তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল খেলবেন। অসংখ্য টেনিস খেলোয়াড় এতগুলি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মূলপর্বেই খেলার সুযোগ পাননি। সেমিফাইনাল তো বহু দূরের কথা। জোকার খেলবেন। নজির গড়ে খেলবেন। ৫২ বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব তাঁর একার। শুক্রবার সেন্টার কোর্টে জোকারের প্রতিপক্ষ রজার ফেডেরার বা রাফায়েল নাদাল নন। চ্যালেঞ্জ জানাবেন ইয়ানিক সিনার। ২৩ বছরের ইটালীয়র সপ্তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল।
দুই প্রতিপক্ষকে পরিসংখ্যান দিয়ে মাপতে যাওয়া অর্থহীন। দু’জনে দুই প্রজন্মের খেলোয়াড়। সিনারের বয়স যখন বছর দেড়েক, তখন পেশাদার টেনিস খেলতে শুরু করেন জোকোভিচ। সিনার পেশাদার টেনিসে এসেছেন ২০১৮ সালে। তত দিনে জোকারের ঝুলিতে গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যা এক ডজন। তার পর আরও এক ডজন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। সিনার এত দিনে তিনটি। কোনও অর্থেই দু’জনের তুলনা হয় না।
জোকোভিচ-সিনার মুখোমুখি হয়েছেন ন’বার। পাঁচ বার জিতেছেন ইটালির তরুণ। চার বার প্রবীণ সার্ব। শেষ চার বার জিতেছেন সিনার। সেই হিসাবে উইম্বলডন সেমিফাইনালে এগিয়ে নামবেন সিনার। টেনিস দক্ষতায় না হলেও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে। আবার ২০২৫ সালে দু’জনেই মাত্র একটি করে খেতাব জিতেছেন।
কোয়ার্টার ফাইনালে চেনা মেজাজে দেখা যায়নি জোকোভিচকে। সিনার সহজ জয় পেয়েছেন। তবু এই লড়াই হয়তো দেখতেই পেতেন না টেনিসপ্রেমীরা। প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে ৩-৬, ৫-৭, ২-২ ব্যবধানে সিনার পিছিয়ে থাকার সময় চোটের জন্য ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন গ্রিগর দিমিত্রভ। পুরো ম্যাচ হলে কী হত, বলা যায় না! অঘটনের উইম্বলডনের অন্যতম বড় অঘটনটা ঘটে যেতে পারত ৭ জুলাই।
দিমিত্রভের চোট বাঁচিয়ে দিয়েছিল পুরুষ সিঙ্গলসের শীর্ষ বাছাইকে। চোটই সেমিফাইনালে সমস্যায় ফেলতে পারে সিনারকে। বৃহস্পতিবার অবশ্য তিনি আস্বস্ত করেছেন ভক্তদের। বিবিসি স্পোর্টসকে তিনি বলেছেন, ‘‘কনুইয়ের ব্যথাটা অনেক কম। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছি। দ্রুত গতির সার্ভিস রিটার্ন করতে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নয়। আমিও খুব একটা ভাবছি না। সেমিফাইনালের আগে সময় আছে। বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাব। ভালই হয়েছে। শুক্রবার ১০০ শতাংশ ফিট হয়ে কোর্টে নামতে পারব।’’ আত্মবিশ্বাসী সিনার হয়তো কোর্টে নামার আগে প্রতিপক্ষকে বাড়তি মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা দিতে চান না। পেশাদার খেলোয়াড়েরা এমনই। ভাঙার আগে মচকান না।
চোট নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জোকোভিচকে ঘিরেও। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাচ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে পা হড়কে কোর্টে পড়ে যান জোকার। দুই পা দু’দিকে চলে যায়। সেন্টার কোর্টের দর্শকেরা আঁতকে উঠেছিলেন। জোকোভিচ চোট নিয়ে বলেছেন, ‘‘খারাপ ভাবে পড়ে গিয়েছি। খুবই বিশ্রী ভাবে। ঘাসের কোর্টে এ রকম হয়। আমার টেনিস জীবনে ঘাসের কোর্টে এমন ঘটনা বেশ কয়েক বার ঘটেছে। পড়ে যাওয়ায় নিশ্চিত ভাবেই আমার শরীর আগের জায়গায় নেই। সেমিফাইনালের আগে সময় আছে। আশা করি এটুকু ক্ষতি সামলে নেওয়া যাবে।’’
এক জনের চোট কনুইয়ে। এক জনের কুঁচকিতে। আধুনিক ক্রীড়া চিকিৎসা হয়তো শেষ চারের লড়াইয়ের আগে দু’জনকেই ম্যাচ ফিট করে দেবে। তবু টেনিসের মান নিয়ে হালকা সংশয় থাকছেই। উইম্বলডনে কাউকেই যে সেরা ফর্মে দেখা যাচ্ছে না! মাস খানেক আগে ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন জোকোভিচ-সিনার। সরাসরি সেটে জিতেছিলেন সিনার। এ বার বদলা নেওয়ার সুযোগ জোকারের। যদিও ২০২৩ সালের ডেভিস কাপ ফাইনাল থেকে সিনারের কাছে হেরেই চলেছেন জোকোভিচ। তাঁর সুনামের সঙ্গে বেমানান। গত দেড় বছর ধরে এমন বেমানান আরও অনেক কিছুই ঘটছে। টানা ছ’টি গ্র্যান্ড স্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের অপেক্ষা বেড়েই চলেছে। সিনার আবার কখনও উইম্বলডন ফাইনাল খেলেননি। শুধু ২০২৩ সালে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন।
জোকোভিচ আগ্রাসী টেনিস খেলতে পছন্দ করেন। ঘাসের কোর্টে বেস লাইনের মতো নেটের কাছেও বিপজ্জনক। হাতে বিষাক্ত টপ স্পিন রয়েছে। খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। লম্বা র্যালি খেলতে পারেন। সিনার খানিকটা রক্ষণাত্মক। মূলত বেস লাইন থেকে খেলেন। নেটের কাছে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন। ঘাসের কোর্টও তাঁর প্রিয় সারফেস নয়। প্রতিপক্ষকে পাওয়ার টেনিসে কোণঠাসা করে রাখতে চান। দ্রুত কোর্টের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারেন। জোকোভিচও পারেন। তবে বয়সের ভারে একটু মন্থর।
আরও পড়ুন:
এই পর্যায়ের ম্যাচে দুই প্রজন্মের দুই সেরা খেলোয়াড় মুখোমুখি হলে পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা যায় না। যে কোনও সময় ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে জোকোভিচ-সিনারদের র্যাকেট। উইম্বলডন সেমিফাইনালে সেই রংবদলের লড়াই দেখার অপেক্ষায় থাকবেন টেনিসপ্রেমীরা। জোকার কি পারবেন ২৫তম গ্র্যান্ড স্লামের দিকে আর একটু এগিয়ে যেতে? নাকি প্রথম বার উইম্বলডন ফাইনাল খেলবেন সিনার? উত্তর দেবে অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের সেন্টার কোর্ট। তার আগে কোর্টের প্রতিটি ঘাস পরীক্ষা নেবে দু’জনের।