Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইডেনে প্রশ্ন, সবুজ উইকেট হল না কেন

ইডেনের বাংলা-হিমাচল ম্যাচও যেন আর এক ‘হযবরল’। বাংলার প্রধান শক্তি যেখানে শামি-ডিন্ডার জোরে বল, সেখানে তাঁদের জন্য সঠিক মঞ্চ নেই ইডেনে! তাই সেরা দল নিয়েও ছ’পয়েন্ট থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়ার উপক্রম মনোজ তিওয়ারিদের।

যুগলবন্দি: ইডেনে হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে আশা জাগিয়েও প্রত্যাশাপূরণে ব্যর্থ ডিন্ডা ও শামি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

যুগলবন্দি: ইডেনে হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে আশা জাগিয়েও প্রত্যাশাপূরণে ব্যর্থ ডিন্ডা ও শামি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৮
Share: Save:

হযবরল-র সেই ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল’ মনে আছে? এও যেন সে রকমই।

ছিল সবুজ পিচ, হয়ে গেল পাটা উইকেট।

ইডেনের বাংলা-হিমাচল ম্যাচও যেন আর এক ‘হযবরল’। বাংলার প্রধান শক্তি যেখানে শামি-ডিন্ডার জোরে বল, সেখানে তাঁদের জন্য সঠিক মঞ্চ নেই ইডেনে! তাই সেরা দল নিয়েও ছ’পয়েন্ট থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়ার উপক্রম মনোজ তিওয়ারিদের।

শুক্রবার হিমাচলকে ফলো-অন করিয়েও তাদের বাগে আনা গেল না। ইনিংস জয় তো দূর অস্ত্, তার ধারে কাছেও আপাতত নেই বাংলা। প্রায় ৫৮ ওভার বল করেও দুটোর বেশি উইকেট ফেলতে পারলেন না বাংলার বোলাররা। অথচ সকালে প্রায় ১৭ ওভারে বিপক্ষের পাঁচ উইকেট ফেলে দিয়েছিলেন শামিরা। ডিন্ডার শিকার ৫ ও শামির তিন। কিন্তু ফলো-অন করে ভারতীয় টেস্ট দলের পেসারের বিরুদ্ধে দিব্য ব্যাট করলেন প্রশান্ত চোপড়ারা। বাংলার চেয়ে মাত্র ছ’রান দূরে তাঁরা। হাতে এখনও আট উইকেট। শনিবার শেষ দিন সকালে বিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারলে ছ’পয়েন্টের আশা ছাড়তে হতে পারে বাংলাকে।

ম্যাচের তৃতীয় দিনে যখন এই অবস্থা, তখন প্রশ্ন উঠে গেল, রঞ্জি ট্রফির অন্যতম সেরা পেস বিভাগ থাকা সত্ত্বেও বাংলার ঘরের মাঠে পেস সহায়ক উইকেট নেই কেন?

হিমাচল ওপেনার প্রশান্ত চোপড়া প্রায় আড়াই ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ৮১ রান তুলে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে মাঠ ছাড়ার পরেও বলেন, ‘‘এই উইকেট ব্যাটিংয়ের পক্ষে বেশ ভাল। একটু নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং করলেই এখানে রান তোলা যায়।’’

যেখানে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানরা এ কথা বলতে পারেন, সেখানকার পিচ আর যাই হোক, পেস সহায়ক নয় নিশ্চয়ই। তা হলে আর ঘরের মাঠের সুবিধা কোথায়? রঞ্জিতে হোম ম্যাচ ফিরে এলেও বাংলা ‘অতিথি দেব ভব’ মন্ত্র আঁকড়ে ধরেই আছে!

শুক্রবার দুপুর ও বিকেলের দুই সেশনে মহম্মদ শামি ও মুকেশ কুমার একটা করে উইকেট নেওয়ার পরে যখন অশোক ডিন্ডাকে এই প্রশ্ন করা হল, তিনি বললেন, ‘‘উইকেট কেমন চাওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত তো টিম ম্যানেজমেন্টের। আমাদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করা হয় না।’’

টিম ম্যানেজমেন্ট, মানে ক্যাপ্টেন, কোচ কি তা হলে এমনই উইকেট চেয়েছিলেন? ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও পরে বলেন, ‘‘টিম ম্যানেজমেন্ট তো এমনই উইকেট চেয়েছিল। শক্ত উইকেট, যাতে অল্প ঘাস থাকবে।’’ সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও মন্তব্য, ‘‘উইকেট তো খারাপ নয়। ঘাস রয়েছে উইকেটে। বাউন্স, গতিও রয়েছে। বল তো ভালই যাচ্ছে।’’ দোষ কি তা হলে বোলারদের?

অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি আগের দিন স্বীকার করে নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘সবুজ পিচে যদি ওদের বোলাররা শামি-ডিন্ডা হয়ে উঠত? তাই পুরো সবুজ উইকেট চাওয়া হয়নি।’’ দলের ব্যাটিং বিভাগে কি পুরো আস্থা নেই ক্যাপ্টেনের? না হলে এ কথা কেন বললেন তিনি?

একেই উইকেট নিয়ে ধন্দ। তার ওপর জঘন্য আম্পায়ারিং। এক দিকে, প্রশান্ত চোপড়াকে লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে এলবিডব্লিউ দেওয়া হচ্ছে, তো নিখিল গাঙ্গটার ব্যাটে ছোঁয়া বল ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসে জমা হওয়া সত্ত্বেও আঙুল উঠল না। একবার তো শামির ইয়র্কার সোজা ওপেনার প্রিয়াংশু খান্ডুরির পায়ে আছড়ে পড়ে তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেও তাঁকে আউট দেওয়া হল না। সারা দিনে ক্যাচও পড়েছে বার তিনেক। অভিমন্যু ঈশ্বরন ক্যাচ ধরতে গিয়ে আবার হাতে চোটও পান।

এ সবে যেন হতাশই হয়ে পড়েছিলেন মনোজ। নিখিলকে আউট না দেওয়ায় রাজস্থানের আম্পায়ার তপন শর্মার সঙ্গে তর্কাতর্কি জুড়ে দেন তিনি। শেষ দিকে বল করতে এসে দু’ওভারে একটা নো বল, একটা ওয়াইড আর চারটে বাই রানও দিয়ে দেন মনোজ। তখন ডিন্ডা মাঠের বাইরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মন কষাকষি নয়, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে আসেন ডিন্ডা। দু’দিনে ৩১ ওভার বল করার পর তো বিশ্রাম দরকার হতেই পারে। শামিও করলেন ৩২ ওভার।

এই পরিশ্রমের পরেও শেষে তিন পয়েন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে না তো? ‘‘কাল ডিন্ডা জ্বলে ওঠে কি না দেখুন’’, বক্তা আর কেউ নন, স্বয়ং অশোক ডিন্ডাই। বাংলার আশা এখন এটুকুই।

ঋত্বিক, সৌরভের সেঞ্চুরি: অনূর্ধ্ব ২৩ কর্নেল সিকে নাইডু ট্রফির ম্যাচে বাংলাকে টেনে তুললেন দুই ব্যাটসম্যান ঋত্বিক রায়চৌধুরী ও সৌরভ সিংহ। চতুর্থ উইকেটে ১৮৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বাংলাকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান তাঁরা। বেলগাঁওয়ে প্রথম দিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দশ রানে তিন উইকেট পড়ে যায় বাংলার। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন ঋত্বিক ও সৌরভ। আগের ম্যাচেও ৯০ রান করা ঋত্বিক ১০৯ রান করে আউট হয়ে গেলেও সৌরভ ক্রিজে রয়েছেন ১০৩ রান করে। তাঁর সঙ্গে অধিনায়ক অগ্নিভ পানও অপরাজিত আছেন।

স্কোরকার্ড

বাংলা ৪১৯

হিমাচল প্রদেশ ২০৬ ও ২০৭-২

হিমাচল প্রদেশ (১৬৩-৫-এর পর)

অঙ্কুশ বেইন্স ক অভিমন্যু বো ডিন্ডা ৫

অমিত কুমার এলবিডব্লিউ মুকেশ ১৮

ঋষি ধবন বো শামি ১৪

পঙ্কজ জয়সওয়াল ক মনোজ বো ডিন্ডা১০

গুরুবিন্দর সিংহ ক ঋদ্ধি বো ডিন্ডা ০

সিদ্ধার্থ শর্মা ন.আ. ০

অতিরিক্ত

মোট ২০৬

পতন: ৯-১ (প্রশান্ত, ২.৫), ১০১-২ (সুমিত, ২৩.২), ১২৪-৩ (ডোগরা,৩০.১), ১৫৯-৪ (প্রিয়াংশু, ৩৮.৫), ১৫৯-৫ (নিখিল, ৩৯.১) ১৬৮-৬ (অঙ্কুশ, ৪১.১), ১৮৭-৭ (ঋষি, ৪৬.২), ১৯৮-৮ (পঙ্কজ,৫১.১), ২০৪-৯ (গুরুবিন্দর, ৫৩.৬), ২০৬-১০ (অমিত, ৫৬.২)।

বোলিং: ডিন্ডা ২২-৫-৬১-৫, মহম্মদ শামি ২০-২-৯৪-৩, মুকেশ ১৩.২-২-৪৪-২, আমির গনি ১-০-২-০।

হিমাচল প্রদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)

প্রিয়াংশু খান্ডুরি ব্যাটিং ৬৭

প্রশান্ত চোপড়া এলবিডব্লিউ মুকেশ ৮১

সুমিত ভার্মা ক ঋদ্ধি বো শামি ০

নিখিল গাংটা ব্যাটিং ৪৩

অতিরিক্ত ১৬

মোট ২০৭-২

পতন: ১২৫-১ (প্রশান্ত, ৩২.১), ১২৯-২ (সুমিত, ৩৬.৬)।

বোলিং: ডিন্ডা ১২-২-৫৩-১, মহম্মদ শামি ৯-০-৩০-০, মুকেশ ১৬-৫-২৮-১, আমির গনি ১৬.৫-০-৬৭-০, কৌশিক ঘোষ ২-০-৯-০, মনোজ তিওয়ারি ২-০-১১-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Ashoke Dinda Mohammed Shami Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE