আরসিজিসিতে ট্রফি নিয়ে চিকারাঙ্গাপ্পা। ছবি শঙ্কর নাগ দাস
দু’টো সরল স্বীকারোক্তি। প্রথম, ‘‘অনির্বাণ পথ দেখায়, আমি অনুসরণ করি।’’ পরেরটা, ‘‘আমার ভিতরটা বদলে দিয়েছেন রাহুল স্যর।’’
রবিবার দুপুরে ম্যাকলিয়ড রাসেল ট্রফি উঠল যাঁর হাতে, সেই এস চিকারাঙ্গাপ্পার জীবনে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ তাঁর শহরের দু’জন। অনির্বাণ লাহিড়ী, তাঁর ‘গুরুভাই’। আর ব্যাটিং কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড়, তাঁর মেন্টর।
অনির্বাণকে নিজের ঋত্বিক মানা বেঙ্গালুরুর বাইশ বছরের তরুণ এ দিন যেন তাঁকে অনুসরণ করেই জিতলেন। ২০১৩-এ ট্রফিটা বেঙ্গালুরু নিয়ে গিয়েছিলেন অনির্বাণ। এ বার নিয়ে গেলেন গল্ফ সার্কিটের আদরের চিকা। বলছিলেন, ‘‘গত তিন সপ্তাহ নিজের ফর্মে সন্তুষ্ট ছিলাম না। অনির্বাণের প্রাক্তন ক্যাডি নরসিংহের সাহায্য নিই। এখানে ও আমাকে চাপের মুখে শান্ত থাকতে সাহায্য করেছে।’’
শেষ দিন শেষ হোল পর্যন্ত চাপে ছিলেন। আঠারো নম্বর হোলেও তাঁর দুই সঙ্গী, তারকা গল্ফার জ্যোতি রণধাওয়া এবং সতীর্থ খালিন জোশী ছিলেন মাত্র এক শট পিছনে। কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধটা শেষ পর্যন্ত চিকাই জিতলেন। সঙ্গে বিজয়ীর সাড়ে বাইশ লাখের চেক তাঁকে দিল রোলেক্স বর্ষসেরার সম্মানও।
রবিবারের তিন আন্ডার-সহ চিকারাঙ্গাপ্পার মোট স্কোর হল ১২-আন্ডার ২৭৬। গত তিন দিন এক নম্বরে থাকা রণধাওয়াকে পিছিয়ে দিল অসুস্থ শরীর।
পড়ুন এই সংক্রান্ত আরও খবর
অসুস্থতা নিয়ে খেলেও উজ্জ্বল রণধাওয়া
চিত্রাঙ্গদার চমকের দিনে শীর্ষে রণধাওয়া
ট্রফি বুকে জড়িয়ে উদ্ভাসিত চিকা বলেই ফেললেন, ‘‘অসম্ভব আবেগতাড়িত লাগছে। গত দু’বছর দ্বিতীয় হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। কিন্তু এই জয়টা সব দিক থেকে আমাকে অনেক এগিয়ে দিল।’’ বিকেলে আরসিজিসির লনে বসে জোড়া সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ দিলেন আরও এক জনকে। কোচ বিজয় দ্বিবেচা।
বলছিলেন, ‘‘এশিয়ায় অনির্বাণ এক নম্বর। ভারতে আমি। এটা আমাদের কোচ বিজয়ের জন্য দারুণ গর্বের মুহূর্ত!’’ গত ক’দিন অনির্বাণের সঙ্গে নিয়মিত টেলিফোনে কথা হয়েছে। ‘‘অনির্বাণ বলে গিয়েছে, তুই পারবি। শুধু শেষ দু’টো রাউন্ডে সেরাটা দেওয়া চাই।’’ নির্দ্বিধায় যোগ করলেন, ‘‘বিজয় আর অনির্বাণ আমার জীবনে দেবদূতের মতো।’’ ২০১৬ মরসুমের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করবেন এই দু’জনের সঙ্গে বসে।
বেঙ্গালুরু-মহীসূর জাতীয় সড়কের ধারের গ্রামে জন্ম। খেতমজুরের ছেলে দশ বছর বয়সে ঈগলটন গল্ফ কোর্সে গিয়েছিলেন রুজির খোঁজে। সঙ্গে চলত লুকিয়ে গল্ফ খেলা। এক দিন পড়ে যান দ্বিবেচার নজরে। জহুরি ভুল করেননি হিরে চিনতে। তাঁর শিষ্য প্রতিভার জোরে ভারতের সঙ্গে এশিয়ারও নজর কেড়েছেন ইতিমধ্যে।
তবু আক্ষেপ গলায়। ‘‘এশীয় ট্যুরে ভাল খেলিনি (৭৩তম)।’’ তবে ভারতীয় ট্যুরে সাতটা ইভেন্টে নেমে তিনটি জিতে এক নম্বর। চিকা বলছেন, রাহুল দ্রাবিড়কে মেন্টর পেয়ে মানসিকতায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে। ‘‘আগে টুর্নামেন্টের শুরুতে লক্ষ্য ঠিক করে নামতাম। রাহুল স্যর বললেন, তার বদলে প্রত্যেকটা মুহূর্ত ধরে এগোতে। যে দিন ভাল ছন্দে আছি, সে দিন লক্ষ্যটা আরও বাড়িয়ে নিতে হবে। যে দিনটা আমার নয়, সে দিন ভেসে থাকায় জোর দিতে হবে। এমনই ছোট ছোট কিছু মানসিক পরিবর্তন। আর সেগুলোই আমাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।’’
সপ্তাহ দুই পরে আবার বসার কথা রয়েছে দ্রাবিড়ের সঙ্গে। নতুন মরসুমে পা রাখার আগে এখন সেই দিকে তাকিয়ে গল্ফের চিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy