Advertisement
E-Paper

সীতা-বন্দির বন দেখে নামছে ভারত

কোহালিরা এর মধ্যেই বুঝতে পারছেন, বিদেশে প্রথম বার কোনও তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশের সামনে দাঁড়িয়ে একমাত্র বাধা হতে পারে বৃষ্টিই।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৭
হোয়াইটওয়াশের ম্যাচে ভারতের চিন্তা বৃষ্টি। ফাইল চিত্র।

হোয়াইটওয়াশের ম্যাচে ভারতের চিন্তা বৃষ্টি। ফাইল চিত্র।

বিদেশ বিভুঁইকে আপন করে নেওয়ার নতুন প্রথা শুরু হয়ে গিয়েছে বিরাট কোহালির ভারতীয় দলে। ক্যান্ডি এবং পাল্লেকেলে সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় এসে তা বেশ গতিও পেয়ে গেল।

টিম ইন্ডিয়ার নতুন এই প্রোগ্রামিংয়ে রয়েছে স্থানীয় দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ এবং সেই জায়গায় ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। অভিনব সেই ভাবনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভারতীয় দলের বেশির ভাগ সদস্য গেলেন পৌরাণিক অভিযানে। নুয়ারা এলিয়া শ্রীলঙ্কার খুব বিখ্যাত হিল স্টেশন। ক্যান্ডি থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার পথ। একে তো ক্যান্ডির চেয়ে অনেক উপরে বলে পাহাড়ি শোভা আরও অনেক ভাল ভাবে নেওয়া যাবে। তার চেয়েও বেশি আকর্ষণ অবশ্য জায়গাটার ইতিহাস নিয়ে। জনপ্রিয় মত হচ্ছে, এখানেই নাকি সীতাকে বন্দি করে রেখেছিলেন রাবণ। তার মানে পৌরাণিক মতে, এটাই সেই ঐতিহাসিক অশোক বন। বৃহস্পতিবার সেই অশোক বনেই ঘুরে এলেন ভারতীয় দলের অনেক সদস্য।

গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো সব নিদর্শন রয়েছে সেখানে। সীতা যে সরোবরে স্নান করতেন, সেটা সুরক্ষিত করা আছে। এখনও সরু জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে সেই সরোবর দিয়ে। রাবণ অপহরণ করার পরে এখানেই নাকি স্নান করে উঠে রোজ প্রার্থনা করতেন সীতা আর অপেক্ষায় থাকতেন, কখন রাম এসে তাঁকে উদ্ধার করবেন। ট্যুরিস্টদের কাছে সেরা আকর্ষণ অবশ্যই হনুমানের লঙ্কা-আগমন এবং যে পাথরে তিনি প্রথম পা রেখেছিলেন, সেখানে আজও থেকে যাওয়া পায়ের ছাপ। পরবর্তী কালে জায়গাটিকে আরও দর্শনীয় এবং ধর্মীয় রূপ দেওয়ার জন্য রাম, সীতা, লক্ষ্মণ তিন জনের মূর্তি বসানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: শামি-ভুবিদের কৃতিত্ব উমেশের

বহির্জগতে এ সব ঘটনার সত্যতা নিয়ে কারও সংশয় থাকতে পারে। কিন্তু স্থানীয় মানুষদের মনে নেই। এখানে সীতা মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে এই সব পৌরাণিক তথ্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই। মন্দিরের কর্মীরা বিশ্বাস করেন, এটা কোনও আজগুবি গল্প নয়। এখানেই সীতাকে হরণ করে এনে রেখেছিলেন রাবণ। তাঁরা একের পর এক চিহ্নও দেখিয়ে যাবেন নিজেদের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এতটাই রোমহর্ষক আর কৌতূহল উদ্রেক করা সব ঘটনা যে, ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরাও মুগ্ধ হয়ে ইতিহাসের নানা কাহিনি শুনলেন। তা সে রামায়ণ নিয়ে তাঁদের আগ্রহ থাকুক বা না থাকুক।

এমনিতে আগ্রহ না থাকলেও জায়গাটা এমনই দর্শনীয় যে, কৌতূহলী হয়ে পড়তেই হবে। নানা প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করবে আর মনে হবে যেন টাইমমেশিনে চড়ে সময় পিছিয়ে গিয়েছে বহু বছর। পাহাড়ের কোলে ভাসতে থাকা মেঘের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত একটা অনুভূতি আসতে পারে যে, মেঘের আড়াল থেকে আচমকাই হয়তো আবির্ভাব ঘটবে রাবণের রথের। সীতাকে রক্ষা করার চেষ্টায় হয়তো এখনই উড়ে আসবে কোনও জটায়ু পাখি।

তিন-তিন ছয় ঘণ্টার যাত্রাপথ পেরিয়ে, সারা দিন হিল স্টেশনে কাটিয়ে সন্ধের দিকে ফিরে এসে ভারতীয় দল দেখল, ক্যান্ডি এবং পাল্লেকেলে-তে বৃষ্টি হচ্ছে। অর্থাৎ, ৩-০ হোয়াইটওয়াশের রাস্তায় অশনি সঙ্কেত। এমনিতেই ক্যান্ডিতে বরাবর টেস্ট ম্যাচ সম্পূর্ণ হওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ি়য়েছে বৃষ্টি। এখন ক্যান্ডিতে ম্যাচ হয় না, হয় পাল্লেকেলের নতুন মাঠে। যেটা কি না ক্যান্ডি থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের পথ। দু’টি জায়গায় আবহাওয়ার খুব অদলবদল হবে বলে মনে হয় না।

শ্রীলঙ্কায় প্রথা হচ্ছে, ইডেনের মতো পুরো মাঠ ত্রিপল বা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। যাতে বৃষ্টি এলেও মাঠকে রক্ষা করা যায়। ২০১৭ সালে দাঁড়িয়ে যেটাকে রাবণের আমলের সিস্টেম বলেই মনে হবে। উন্নত জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থা থাকলে এ সব লাগেই না।

কোহালিরা এর মধ্যেই বুঝতে পারছেন, বিদেশে প্রথম বার কোনও তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশের সামনে দাঁড়িয়ে একমাত্র বাধা হতে পারে বৃষ্টিই। না হলে কোনও রাবণ পুষ্পক রথে চড়ে তাঁদের প্রত্যাশা হরণ করে নিয়ে যেতে পারবে না। শ্রীলঙ্কা মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করবেই। তা সে যতই তারা সিরিজ হেরে গিয়ে থাকুক এবং দেশ জুড়ে সমালোচনা চলতে থাকুক। চণ্ডীমলদের দুর্ভাগ্য যে, প্রধান তিন ক্রিকেটারই চোট পেয়ে বাইরে চলে গিয়েছেন। বাঁ হাতি স্পিনার এবং এক নম্বর বোলিং অস্ত্র রঙ্গনা হেরাথ, প্রধান মিডিয়াম পেসার নুয়ান প্রদীপ এবং নতুন ব্যাটিং সম্ভাবনা আসেলা গুণরত্ন। পাল্লেকেলের সবুজ মাঠে কী ধরনের পিচ শ্রীলঙ্কা তৈরি করে, সেটা নিয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট মহলে অনেকের মত, রঙ্গনার উপর আস্থা রেখে পুরোপুরি ঘূর্ণি বানানো উচিত ছিল প্রথম থেকে। শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানেরা ভারতীয়দের চেয়ে সুইপ ভাল মারেন। সেটাও মাথায় রাখা উচিত ছিল।

বলে না, সেই লঙ্কাও নেই, সেই রাবণও নেই। কোহালিদের হেলায় লঙ্কা বিজয়ের স্বপ্ন হরণ করবে কে!

Indian Cricket Team Pallekele India Sri Lanka Third Test Virat Kohli Ravi Shastri বিরাট কোহালি Whitewash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy