Advertisement
E-Paper

টেস্ট সিরিজের লজ্জার বোঝা নেই বলেই রায়না এত চনমনে

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারত যে কতটা স্বচ্ছন্দ, বুধবার সেটা আবার বুঝিয়ে দিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম। ওরা জানে, এখানে সেশন বাই সেশন টিকে থেকে লড়ার দরকার নেই। পনেরো-কুড়ি ওভারের একটা স্পেল ভাল গেলেই ম্যাচের রং বদলে যাবে। কার্ডিফে একটা সময় তাই ১৯-২ হয়ে গেলেও ভারতীয়দের শরীরী ভাষা পজিটিভই ছিল। দেখে মনেই হবে না, এই টিমটা দিনকয়েক আগে টেস্ট সিরিজে ১-৩ হেরেছে।

রান ১০০ ৭৫ বল ১২ বাউন্ডারি ৩ ছক্কা

রান ১০০ ৭৫ বল ১২ বাউন্ডারি ৩ ছক্কা

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৪
Share
Save

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারত যে কতটা স্বচ্ছন্দ, বুধবার সেটা আবার বুঝিয়ে দিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম। ওরা জানে, এখানে সেশন বাই সেশন টিকে থেকে লড়ার দরকার নেই। পনেরো-কুড়ি ওভারের একটা স্পেল ভাল গেলেই ম্যাচের রং বদলে যাবে। কার্ডিফে একটা সময় তাই ১৯-২ হয়ে গেলেও ভারতীয়দের শরীরী ভাষা পজিটিভই ছিল। দেখে মনেই হবে না, এই টিমটা দিনকয়েক আগে টেস্ট সিরিজে ১-৩ হেরেছে। আমার মনে হয় ব্যাপারটা অনেকটাই মানসিক। নীল জার্সি পরলেই ওদের মানসিকতা একদম পাল্টে যায়। নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামে টিম ইন্ডিয়া। যে আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন, ওয়ান ডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটা ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে ১৩৩ রানে জেতা।

অজিঙ্ক রাহানে আর রোহিত শর্মা যেমন। টেস্ট সিরিজে একটা সেঞ্চুরি-সহ ভাল পারফরম্যান্স আছে রাহানের। রোহিত তেমন সুযোগ পায়নি। কিন্তু নীল জার্সিতে ওরা যেন একেবারে আলাদা। রোহিত আজ ভাল খেলেছে, কিন্তু ভারতীয় সমর্থক হিসেবে আমার বেশি ভাল লেগেছে রাহানের ব্যাটিং। জাত বোলিংয়ের সামনে এই টিমে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ কিন্তু রাহানেই। প্রথম দিকে বল যখন মুভ করছিল, তখনও ওকে দেখে মনে হয়নি খুব একটা সমস্যায় পড়েছে। ওর টাইমিং আর পজিশনিং নিখুঁত। দেখুন, বড় রানের পাশাপাশি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেই রান করার ধরন। রাহানেকে যে জন্য আমার এত ভাল লাগে। রাহানে-রোহিত জুটিই পরে সুরেশ রায়না আর ধোনির কাজ সহজ করে দিয়েছিল।

উপমহাদেশের বাইরে রায়নার প্রথম সেঞ্চুরিটা নিয়ে এ বার বলি। ৭৫ বলে ১০০ রানের ইনিংসটা আমার দেখা বিদেশে অন্যতম সেরা ভারতীয় সেঞ্চুরি। ভাল বোলিংয়ের বিরুদ্ধে, কঠিন পরিবেশে একটাও ভুল করতে দেখলাম না রায়নাকে। ওর এই ইনিংসে তিনটে জিনিস লক্ষণীয়।

“এক জন বাঁ-হাতিকে এত ভাল খেলতে দেখে দারুণ লাগছে।
অসাধারণ একটা ইনিংস খেলল রায়না। একেবারে আউট অব দ্য বক্স...
রাহুল দ্রাবিড়ের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে আমার দেখা সেরা ইনিংস।”
—সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

এক, ক্রিজে সারাক্ষণ রায়নাকে খুব ব্যস্ত দেখিয়েছে। প্রথম থেকেই ওর লক্ষ্য ছিল তাড়াতাড়ি রান তুলব। সিঙ্গলসগুলো দুইয়ে পাল্টে নেব। ম্যাচ রিডিংটা দুর্দান্ত ছিল রায়নার। ও বুঝে গিয়েছিল, প্রথম দিকে বেশি বাউন্ডারি পাব না। যতটা পারব স্ট্রাইক রোটেট করব। বল মুভ করলেও তাই কিন্তু ওর স্ট্রাইকরেট একশোর বেশি। ক্রিজে ব্যস্ত থাকে বলে রায়নার উপর রান করার চাপটা কখনও খুব বেশি হয়ে যায় না। যখন বাউন্ডারি মারতে পারে না, তখনও না। ও জানে উল্টো দিকের বোলার যত ভয়ঙ্করই হোক, দু’একটা ওভারে বাউন্ডারি দেবেই। অনেক ব্যাটসম্যান দেখেছি যারা এ রকম পরিস্থিতিতে খুব চাপে পড়ে যায়। কারণ তাদের হাতে শুধু বড় শটই আছে। চটজলদি এক-দু’রান নেওয়াটা তারা অত ভাল পারে না।

দুই, ট্যাকটিক্যালি রায়নাকে দুর্দান্ত লাগল আজ। নিজের ক্ষমতার উপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আছে বলেই রায়না জানে, কয়েকটা ওভার খারাপ গেলেও আমি ঠিক ফিরে আসব। শুধু একটা ভাল ওভার চাই। মনে হয় এটা ও ধোনির কাছ থেকে শিখেছে। আজ যেমন ৩৬-৪০ ওভারের পাওয়ার-প্লেটাকে একেবারে নিংড়ে নিল ধোনি-রায়না। ওই পাঁচ ওভারে উঠল ৬২! এই জুটির সাফল্য ওদের স্ট্রাইক রোটেট করায়। বাঁ-হাতি-ডান হাতির কম্বিনেশন সামলাতে সামলাতে যে কোনও বোলার সমস্যায় পড়ে যাবে। দু’জনে দু’ধরনের প্লেয়ার, তাদের কী ভাবে বল করতে হবে, সেটা ভাবতে ভাবতে চাপটা কিন্তু বোলারের উপরই বেশি পড়বে। বোলাররা এই অবস্থায় ভেবে পায় না যে তার কী করা উচিত। সে কি রানের গতি আটকাবে, না উইকেট তোলার দিকে মন দেবে?

ধোনির সঙ্গে এক বার রান তাড়া করা নিয়ে কথা হচ্ছিল। ও বলেছিল, চেজ করার অঙ্কটা ও শতাংশের হিসেবে দেখে। ধরুন ও যখন নেমেছে তখন ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনা সত্তর শতাংশ, ভারতের মাত্র তিরিশ। সেই পরিস্থিতিতে ধোনি দেখে ওভার প্রতি একটু একটু করে শতাংশের হিসেবটা নিজেদের দিকে কী ভাবে নিয়ে আসব। আজ ওরা রান তাড়া করছিল না, কিন্তু ধোনি-রায়না জুটি মনে হয় এই অঙ্ক মেনেই এগোচ্ছিল।

এক ওভারে দু’উইকেট। ছন্দে ফিরলেন শামি। ছবি: এএফপি

রায়নার ইনিংসে আর একটা ব্যাপার দেখলাম। কোনও বোলার ভাল স্পেলের মধ্যে থাকলে তার সামনে কখনও এক স্পটে দাঁড়াচ্ছিল না। স্টাম্প ছেড়ে স্টেপ আউট করে খেলছে, লেগস্টাম্পের বাইরে চলে আসছে, কখনও অফে ঢুকে যাচ্ছে। এ ভাবে বোলারকে সেট্ল করতে দেয়নি ও। বোলার কী বল করল, তাতে রিঅ্যাক্ট না করে প্রোঅ্যাক্টিভ ব্যাটিং করে গিয়েছে। ক্রিজ থেকে এগিয়ে আসায় বোলার কোনও নির্দিষ্ট গুড লেংথ স্পট পায়নি ওর বিরুদ্ধে। ক্রিকেটের ছোট ফর্ম্যাটের কোচেরা এই ব্যাটিংয়েরই টোটকা দেন।

তিন, রায়নার মানসিকতা। টেস্ট বিপর্যয়ের টিমে ছিল না বলেই হয়তো রায়নাকে বাকিদের চেয়ে বেশি ফ্রেশ মনোভাব নিয়ে খেলতে দেখলাম। নিজে লম্বা সফরে গিয়েছি বলে জানি, এ সব ক্ষেত্রে পরের দিকে টিমে একটা মানসিক ক্লান্তি চলে আসে। বিশেষ করে সফরটা যখন খুব ভাল যায় না। রায়নাকে সেই বাড়তি বোঝাটা বইতে হচ্ছে না বলে ওর যে কতটা সুবিধা্য হয়েছে, বুধবারের ১০০ তার প্রমাণ। রায়নাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি বলে জানি, ও মানুষ হিসেবে খুব পজিটিভ। ড্রেসিংরুম শেয়ার না করলেও ওর সঙ্গে যেখানেই সময় কাটিয়েছি, লাঞ্চে বা ডিনারে বা কমন বন্ধুর বাড়িতে আড্ডায়, সব সময় দেখেছি রায়না ভীষণ হাসিখুশি। ওর এই ছোঁয়াচে উচ্ছলতা বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে জানে ছেলেটা। নিজের খেলাতেও সেই উচ্ছলতাটা আমদানি করেছে। যেটা ভারতের প্রচণ্ড দরকার ছিল।

কার্ডিফে শামিকে দেখে মনে হল আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছে। কিন্তু আমি আগেও বলেছি, ওকে আরও বেশি খাটতে হবে। ভুবনেশ্বর কুমার যদি ৪০ শতাংশ প্রতিভা আর ৬০ শতাংশ পরিশ্রম হয়, তা হলে শামি ৭০ শতাংশ প্রতিভা আর ৩০ শতাংশ পরিশ্রম। যত মরসুম গড়াবে তত ওর ছন্দ ফিরবে। কিন্তু এই কাজটা ওর আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল। ওর উচিত ছিল নেটে আরও বেশি বল করে আরও আগে নিজের ছন্দটা ফিরে পাওয়া। বছরদুয়েক আগে শামিকে আমি এটা বলেও ছিলাম। কিন্তু ইংল্যান্ড সফরের আগে এই দেড় মাস যে বিশ্রাম পেল, সেটাকে শামি আদৌ কাজে লাগিয়েছে কি না সন্দেহ আছে। অন্য দিকে রায়নাকে দেখুন। টিম থেকে বাদ পড়ার সময়টা কী দারুণ ব্যবহার করেছে। শর্ট বলের বিরুদ্ধে টেকনিক, পেসারদের খেলা, সব কিছু নিয়ে খেটেছে। মনে হচ্ছে কার্ডিফের সেঞ্চুরিটা ওর কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াবে।

কার্ডিফের স্কোর

ভারত

রোহিত ক ওকস বো ট্রেডওয়েল ৫২

শিখর ক বাটলার বো ওকস ১১

বিরাট ক কুক বো ওকস ০

রাহানে স্টাঃ বাটলার বো ট্রেডওয়েল ৪১

রায়না ক অ্যান্ডারসন বো ওকস ১০০

ধোনি বো ওকস ৫২

জাডেজা নঃআঃ ৯

অশ্বিন নঃআঃ ১০।

অতিরিক্ত ২৯।

মোট ৫০ ওভারে ৩০৪-৬।

পতন: ১৯, ১৯, ১১০, ১৩২, ২৭৬, ২৮৮।

বোলিং: অ্যান্ডারসন ১০-১-৫৭-০, ওকস ১০-১-৫২-৪, জডার্ন ১০-০-৭৩-০,

স্টোকস ৭-০-৫৪-০, রুট ৩-০-১৪-০, ট্রেডওয়েল ১০-১-৪২-২।

ইংল্যান্ড

কুক এলবিডব্লিউ শামি ১৯

হেলস ক অশ্বিন বো জাডেজা ৪০

বেল বো শামি ১

রুট বো ভুবনেশ্বর ৪

মর্গ্যান ক শামি বো অশ্বিন ২৮

বাটলার ক বিরাট বো জাডেজা ২

স্টোকস ক রাহানে বো জাডেজা ২৩

ওকস স্টাঃ ধোনি বো জাডেজা ২০

জর্ডান এলবিডব্লিউ রায়না ০

ট্রেডওয়েল ক জাডেজা বো অশ্বিন ১০

অ্যান্ডারসন নঃআঃ ৯।

অতিরিক্ত ৫।

মোট ৩৮.১ ওভারে ১৬১।

পতন: ৫৪, ৫৬, ৬৩, ৮১, ৮৫, ১১৯, ১২৬, ১২৮, ১৪৩, ১৬১।

বোলিং: ভুবনেশ্বর ৭-০-৩০-১, মোহিত ৬-১-১৮-০, শামি ৬-০-৩২-২,

অশ্বিন ৯.১-০-৩৮-২, জাডেজা ৭-০-২৮-৪, রায়না ৩-০-১২-১।

deep dasgupta india-england one day cricket raina suresh raina sports news online sports news india england ODI series Test series

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}