কোচ-নাটক জমে গেল, আবেদন করছেন শাস্ত্রী

ভারতীয় দলের পরবর্তী কোচ নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও নাটকীয় হয়ে উঠছে। তার কারণ? বিরাট কোহালিদের প্রাক্তন ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তিনি কোচের পদের জন্য আবেদন করবেন।

শাস্ত্রী খুব কঠিন সময়ে আঠেরো মাস ধরে ভারতীয় দলের ডিরেক্টর ছিলেন। সেই সময় অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে পর-পর আটটি টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত ধুঁকছিল। সেখান থেকে তিনি হাল ধরেন এবং টিমের মানসিকতাই পাল্টে দেন। ডিরেক্টর হিসেবে তখন ধোনি, কোহালি দুই অধিনায়কের সঙ্গেই কাজ করেছেন শাস্ত্রী। এখন কোহালি সব ফর্ম্যাটে একাই অধিনায়ক। এবং ক্রিকেট মহলে কারও অজানা নয় কোহালি-শাস্ত্রী সম্পর্কের সমীকরণ। দু’জনের বোঝাপড়া শুধু ভাল বললে কিছুই বলা হয় না। বলা উচিত, কোচ এবং অধিনায়কের এমন মধুর সম্পর্ক কার্যত নজিরবিহীন।

কোহালি এবং তাঁর দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার যে শাস্ত্রীকে ফেরত চাইছেন, তা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন প্রথম আনন্দবাজারেই লেখা হয়েছিল। এখন মেলবোর্নে অডি গাড়িজয়ী তারকা এবং প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলায় তিনি অন্যতম ফেভারিট প্রার্থী হয়ে উঠবেন। বছর খানেক আগে শাস্ত্রীকে সরিয়েই অনিল কুম্বলেকে আনা হয়েছিল। তখন ক্রিকেটারেরা কেউ মুখ না খুললেও অনেকেই এখন বুঝেছেন, কোহালিদের খুব একটা মত ছিল না সেই পরিবর্তনে।

সোমবার শাস্ত্রীকে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। জানা গেল, তিনি এখনও ইংল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছেন। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, তিনি কোচের পদে আবেদন করার পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনন্দবাজার-কে বলে দিলেন, ‘‘রবি অবশ্যই আবেদন করবে কোচের পদের জন্য। একশো ভাগ নিশ্চিত।’’ প্রথম অবস্থায় আগ্রহ না দেখালেও বর্ধিত সময়সীমা ৯ জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন পত্র পাঠাবেন শাস্ত্রী।

আরও পড়ুন: চায়নাম্যান বোলারে মুগ্ধ বিরাট

কুম্বলে নিয়ে বিতর্কের পরে বোর্ড কর্তারাও শিক্ষা পেয়েছেন যে, শান্তিপূর্ণ সংসার দরকার। কর্তারা চান না, এমন কাউকে কোচ করা হোক যাঁর সঙ্গে ফের অধিনায়ক কোহালির বনিবনা হবে না। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্‌সের প্রধান বিনোদ রাই বলে দিয়েছেন, যোগ্যতম লোককে কোচ বাছা হবে। এবং, ড্রেসিংরুমের শান্তি রক্ষা হবে এমন প্রার্থীই প্রাধান্য পাবেন।

এই নীতি মানা হলে শাস্ত্রীর সম্ভাবনা বেশ ভাল। তাঁর ‘সিভি’-তে থাকছে, আঠেরো মাস ধরে শান্তিপূর্ণ ড্রেসিংরুম ধরে রেখেছিলেন। এ দিন ইন্টারনেটে একটি কাহিনি ভাইরাল হয়ে যায়। শাস্ত্রীর অধীনে খেলা মুম্বইয়ের এক ক্রিকেটার এখন কর্পোরেট সংস্থার সিইও। তিনি বলেছেন, ‘‘১৯৯২ থেকে ১৯৯৫, রবি শাস্ত্রীর ক্যাপ্টেন্সিতে আমি মুম্বইয়ের হয়ে খেলেছি। ওই সময় ক্রিকেট মাঠে নেতৃত্বের যে পাঠ পেয়েছি, সেটা কোনও বোর্ড রুম বা ক্লাস রুমে পাইনি।’’

ডিরেক্টর বা কোচ হিসেবে শাস্ত্রীর স্কোরবোর্ডও বেশ প্রশংসনীয়। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজে শাস্ত্রী-কোহালি জুটি হেরে গেলেও খুব উত্তেজক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট উপহার দিয়েছিল। তার পরে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জিতেছে, দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ করেছে, অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজে ডেভিড ওয়ার্নারদের হোয়াইটওয়াশ করেছে, বাংলাদেশে এশিয়া কাপ জিতেছে, ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে, ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরেছে।

এ দিকে, রবিবার এবং সোমবার মুম্বইয়ে বোর্ডের বিশেষ সভা ছিল। সেখানে কোচ নিয়ে খুব বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। কোচ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি। সেই কমিটিতে আছেন তিন কিংবদন্তি। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভি ভি এস লক্ষ্মণ। এই কমিটিই এক বছর আগে শাস্ত্রীকে সরিয়ে কুম্বলেকে কোচ বেছেছিল। এ বারে কি তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত ঘুরিয়ে ফের শাস্ত্রীকে ফেরাতে পারেন? এই প্রশ্নই আগামী কয়েক দিনে মুখ্য হয়ে দাঁড়াতে চলেছে।

আবার কারও কারও পর্যবেক্ষণ, বোর্ড কর্তারা বা সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্‌স (সিওএ) কোচ নির্বাচন নিয়ে সচিন-সৌরভদের কোনও বার্তা দেয় কি না, সেটাও দেখার। এক প্রভাবশালী কর্তার কথায়, ‘‘ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি নিশ্চয়ই তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু বোর্ডের পক্ষ থেকে যদি কিছু ব্রিফ করার থাকে, সেটা তো দেওয়া যেতেই পারে।’’

কী হবে বোর্ড বা সিওএ-এর সেই ‘ব্রিফ’ বা আদৌ কোনও বার্তা থাকবে কি না, সময় বলবে। আপাতত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, কোহালিদের পরবর্তী কোচ নির্বাচন নিয়ে নাটক আরও জমে গেল। ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন বীরেন্দ্র সহবাগ, দুই বিদেশি টম মুডি এবং রিচার্ড পাইবাস, ভারতের লালচাঁদ রাজপুত।

কারও কারও মনে হচ্ছে, শাস্ত্রী আবেদন করা মানে ‘ম্যাচ’টাই পুরো ঘুরে গেল। জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে, সহবাগ কি আবেদন প্রত্যাহার করবেন?

কোচ নিয়ে এ বার থ্রিলার নম্বর টু!