হ্যাটট্রিকের হাসি। শনিবারের ডুডু। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ইস্টবেঙ্গল ৬ (ডুডু-৩, র্যান্টি, দিওয়াস- আত্মঘাতী, বার্তোস)
সাই ০
ডুডু ওমাগবেমি মাঠে থাকা মানেই এখন হ্যাটট্রিক আর গোল!
‘হ্যাটট্রিক-ডুডু’ কি ক্রমশ গোয়ার মতোই কলকাতায় আতঙ্ক হয়ে উঠছেন? টালিগঞ্জ আগ্রগামীর বিরুদ্ধে খেতাবি ম্যাচে নামার বাহাত্তর ঘণ্টা আগে এই প্রশ্নে তোলপাড় ময়দান।
ইস্টবেঙ্গলের নতুন নাইজিরিয়ান গোলমেশিন লাল-হলুদ জার্সি পরে মাঠে নামার পরই যেন ‘গোলের উৎসব’ লেগেছে ইস্টবেঙ্গলে। পাঁচ ম্যাচে দু’টি হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে আট গোল। মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচের আগে ডুডু-র ফর্ম কি আপনার ঘুম কেড়ে নিল? প্রশ্ন শুনে টালিগঞ্জ আগ্রগামীর টিডি সুব্রত ভট্টাচার্যের চিন্তিত মুখের প্রতিক্রিয়া, “শুধু ডুডু কেন, পুরো ইস্টবেঙ্গল টিমই আমার কাছে ফ্যাক্টর।”
সুব্রত নিজের ভাবনার কথা প্রকাশ্যে না জানাতে চাইলেও দু’নম্বর হ্যাটট্রিক করার পর ডুডু কিন্তু বলে গেলেন, “গোল করার জন্যই তো আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। দলকে খেতাব জেতানোই এখন আমার লক্ষ্য। টালিগঞ্জ ম্যাচ জিতে লিগ পেতে চাই।”
ডার্বি জেতার পর টানা পাঁচ ম্যাচে জয়। ডুডু-র্যান্টি যুগলবন্দির গোলের পর গোল। লিও বার্তোসের গোল পাওয়া। রক্ষণে ক্রমশ উন্নতি। মাঝমাঠ মসৃণ এবং কার্যকর। শনিবার আর্মান্দোর ইস্টবেঙ্গলকে দেখে মনে হল টিমটা সত্যিই চ্যাম্পিয়নের মতো খেলছে। আর খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে সেটাই বলে গেলেন ডগলাস দ্য সিলভা। “ডুডু-র্যান্টি যে ভাবে খেলছে, তাতে ওদের আটকানো মুশকিল,” বলছিলেন ময়দানের পরিচিত প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার।
কলকাতা লিগকে পরের টুর্নামেন্টগুলোর জন্য পরীক্ষাগার বানিয়েছেন আর্মান্দো। এ দিন তাঁর ইচ্ছের বেলুন ফুলিয়ে দিলেন, ত্রিফলা হয়ে ওঠা বিদেশি ব্রিগেড। ডুডু-র্যান্টি এবং লিও বার্তোস। তিন জনের পা থেকেই যে গোল এল।
ঝড় উঠতে পারে ভেবে শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল সাই। টিমে কোনও বিদেশি নেই। ফলে এমনিতেই মানসিক ভাবে পিছিয়ে ছিল তারা। তার পর আবার ডুডু আর র্যান্টির কথা ভেবে আলাদা কোনও অঙ্ক করেই মাঠে নামেননি সাই কোচ সঞ্জীব পাল। যার ফল হাতেনাতে পেলেন তিনি। নিট ফল, হজম করতে হল হাফ ডজন গোল।
শুরুতেই ডুডুর ২৫ গজের দুরন্ত গোল দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আজ লাল-হলুদেরই দিন। ডুডু গোল করে ফেলেছেন, র্যান্টি করবেন না তা হয় না কি? সেটাও হয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। শুরু থেকেই মাঠে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। ডুডু-র্যান্টির গোলের পর সেটা প্রবল হল। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ল ইস্টবেঙ্গলের দৌরাত্ম। ডুডুর দু’নম্বর গোলটার পর যা হয়ে উঠল সুনামি। আর তা এতটাই যে, সাইয়ের যে ফুটবলারকে এ বার লিগের সেরা আবিষ্কার বলা হচ্ছিল, সেই লক্ষ্মীকান্ত মান্ডিও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। তাঁকে বাধ্য হয়েই বিরতির আগে তুলে নেন সাই কোচ।
মান্ডি রিজার্ভ বেঞ্চে চলে যাওয়ার পর সাই যেন আরও ফ্যাকাশে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে লড়াই করতে করতে আত্মঘাতী গোলও খেয়ে যায় তারা। দিওয়াস তামাং নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দেন। লাল-হলুদ জার্সির আগুনে হওয়ার দিনে সব থেকে মজায় ছিলেন তাদের কিপার অভ্র মণ্ডল! কেন? কারণ তাঁকে তো বলই ধরতে হল না। অভ্রকে দেখে মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছিল, যেন গঙ্গার পাড়ে হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন। তার মধ্যেই হয়ে গেল ডুডুর হ্যাটট্রিক এবং বার্তোসের গোল। নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপারের গোলটা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে দেখা গেল স্বয়ং কোচ আর্মান্দোকেও। তাঁর হাততালি দেওয়া দেখে মনে হল, যা চাইছেন সেটা কার্যকর হচ্ছে।
ইস্টবেঙ্গল ছয় গোলে জেতায় লিগ খেতাবের শেষ যুদ্ধ পঞ্চমাঙ্কে পৌঁছল। পরিস্থিতি যা তাতে ইস্টবেঙ্গল বা টালিগঞ্জ যে-ই শেষ ম্যাচ জিতবে সেই চ্যাম্পিয়ন হবে। দেখার আর্মান্দো-সুব্রত যুদ্ধে শেষ হাসি হাসেন কে?
ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, অভিষেক, গুরবিন্দর, সফর (ওয়াসিম), ধনরাজন, সুখবিন্দর, অবিনাশ, সুবোধ, প্রহ্লাদ, র্যান্টি (বার্তোস), ডুডু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy