Advertisement
E-Paper

হ্যাটট্রিক হল না সাবালেঙ্কার, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মহিলাদের নতুন চ্যাম্পিয়ন কিজ়

ফেভারিট হিসাবে ফাইনাল খেলতে নেমে ছিলেন শীর্ষবাছাই অ্যারিনা সাবালেঙ্কা। তাঁর সামনে ছিল হ্যাটট্রিকের সুযোগ। কিন্তু ২৯ বছরের আমেরিকার খেলোয়াড়কে হারাতে পারলেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৩
Picture of Aryna Sabalenka and Madison Keys

(বাঁ দিকে) অ্যারিনা সাবালেঙ্কা। ম্যাডিসন কিজ় (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হ্যাটট্রিক হল না অ্যারিনা সাবালেঙ্কার। মহিলাদের সিঙ্গলসে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। আমেরিকার ম্যাডিসন কিজ় জিতলেন ৬-৩, ২-৬, ৭-৫ ব্যবধানে। ২০০৯ সাল থেকে পেশাদার টেনিস খেলছেন কিজ়। এই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন। ২৯ বছর বয়সে প্রথম বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করলেন তিনি।

ফেভারিট হিসাবে ফাইনাল খেলতে নেমে ছিলেন শীর্ষবাছাই সাবালেঙ্কা। তাঁর সামনে ছিল হ্যাটট্রিকের সুযোগ। কিন্তু পারলেন না। তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার অভিজ্ঞতা কাজে এল না শনিবারের ফাইনালে। রড লেভার এরিনায় এ দিন প্রথম থেকেই খানিকটা নড়বড়ে দেখিয়েছে তাঁকে। বরং কিজ় ছিলেন অনেক আত্মবিশ্বাসী। সেমিফাইনালে ইগা সিয়নটেককে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন। খেতাবের লড়াইয়েও আগের দিনের ছন্দেই দেখা গিয়েছে প্রতিযোগিতার ১৯ নম্বর বাছাইকে।

মহিলাদের সিঙ্গলসে আমেরিকার বাজি ছিলেন কোকো গফ। তৃতীয় বাছাই গফ কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর কিজ়ই ছিলেন ভরসা। তবে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে পর পর বিশ্বের দুই সেরা প্রতিপক্ষকে হারিয়ে তিনি খেতাব জিততে পারবেন, এতটাও হয়তো আশা ছিল না। কারণ ২০১৭ সালে এক বার ইউএস ওপেন ফাইনাল খেলা ছাড়া কখনও কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠতে পারেননি তিনি। লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকতে পারলে যে পৌঁছনো সম্ভব, তার প্রমাণ ২৯ বছর বয়সে তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়।

চ্যাম্পিয়নেরা তৈরি হন লোকচক্ষুর আড়ালে। তাঁদের পরিশ্রম, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, প্রস্তুতির কিছুই দেখা যায় না। অধিকাংশ মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকেন, তখন খেলোয়াড়েরা পৌঁছে যান মাঠে, কোর্টে। কোচ বা ট্রেনারের কাছে নিঃশব্দে চলে অনুশীলন। নিজেদের সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করেন। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। প্রিয় খাবার, বন্ধু, পরিজন, কখনও কখনও হয়তো পরিবারকেও। ঘণ্টা, দিন, মাস, বছরের পর বছর অনুশীলন তাঁদের নিখুঁত করে তোলে। তবুও হয়তো সম্পূর্ণ নিখুঁত হওয়া যায় না। হাল না ছাড়া মানসিকতা অন্তত একটা জায়গায় পৌঁছে দেয়। কিজ়কেও দিয়েছে। ১৪ বছর বয়স থেকে পেশাদার টেনিস খেলতে শুরু করা কিজ়কে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্য অপেক্ষা করতে হল আরও ১৫ বছর।

আমেরিকার কিজ়কে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। বার বার ব্যর্থ হয়েছেন, হেরেছেন। তত বার শিখেছেন। তাঁর সাধনা বৃথা গেল না শেষ পর্যন্ত। হাজার হাজার টেনিস খেলোয়াড় সারা জীবন চেষ্টা করেও গ্র্য়ান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনাল বা ফাইনালে উঠতে পারেন না। কিজ় পেরেছিলেন আগেই। নিজেদের দেশের কোর্টে অবশ্য খেতাব জেতা হয়নি। তবু হাল ছাড়েননি। ফল পেলেন অবশেষে। আরও এক জন গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়নকে পেল আমেরিকা।

সাবালেঙ্কা সাধারণত প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেন না। প্রতিপক্ষের উপর চাপ বজায় রাখেন ম্যাচের শুরু থেকে। প্রতিটি পয়েন্টের জন্য লড়াই করেন। শক্তিশালী সার্ভিস এবং ব্যাকহ্যান্ডে প্রতিপক্ষকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করেন। শনিবার কিন্তু ততটা শক্তিশালী দেখাল না তাঁকে। পর পর তিন বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার বিষয়টি হয়তো তাঁকে চাপে রেখেছিল। নিজের চাপে নিজেই আটকে গেলেন। কিজ় প্রথম সেট জিতে নেন ৬-৩ ব্যবধানে। তখনই হয়তো টেনিসপ্রেমীদের মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। না, আশা তৈরি হয়েছিল। নতুন গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার আশা।

আসলে সব সম্ভাবনার মধ্যেই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দু’টি দিকই থাকে। সাবালেঙ্কার হ্যাটট্রিক অপূর্ণ থাকা যদি নেতিবাচক ভাবনা হয়, তা হলে ২৯ বছর বয়সে কিজ়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাবনা ইতিবাচক। ম্যাচের প্রথম থেকে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে দু’জনের। সাবালেঙ্কা এবং কিজ় চেষ্টা করেছেন প্রতিপক্ষের ভুল কাজে লাগাতে। ভুল করতে বাধ্য করতে। কখনও সাবালেঙ্কা সফল হয়েছেন। আবার কখনও কিজ়। প্রথম সার্ভিসের ক্ষেত্রে সাবালেঙ্কাকে আর পাঁচটা দিনের মতো ধারাবাহিক দেখায়নি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন কিজ়। ফাইনালের মতো ম্যাচে সাবালেঙ্কার চারটি ডাবল ফল্টও সুবিধা করে দিয়েছেন কিজ়কে। অন্য দিকে, কিজ় ‘এস’ সার্ভিস বেশি করেছেন। প্রথম সার্ভিসে বেশি পয়েন্ট জিতেছেন। ব্রেক পয়েন্ট বেশি কাজে লাগিয়েছেন। এ সবই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত।

প্রথম সেট হারার পর দ্বিতীয় সেট ৬-২ ব্যবধানে জিতে সমতা ফিরিয়ে ছিলেন সাবালেঙ্কা। তৈরি হয়েছিল তাঁর হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। তৃতীয় সেটে সমানে সমানে এগোচ্ছিল লড়াই। কিন্তু আসল সময় একাধিক ভুল করে বসলেন বেলারুশের খেলোয়াড়। ফাইনালের ব্রাহ্ম মুহূর্তে আনফোর্সড এররের খেসারত দিলেন। তৃতীয় সেট ৫-৫ হওয়ার পর নিজের সার্ভিস ধরে রেখে কিজ় ৬-৫ ব্যবধানে এগিয়ে যান। সার্ভিস পান সাবালেঙ্কা। কিন্তু সেই গেমের প্রথম দু’টি সার্ভিসই ঠিকঠাক হল না। আরও চাপে পড়ে গেলেন তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। অন্য দিকে, প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের গন্ধ পেয়ে যাওয়া কিজ় ছিলেন সতর্ক। মাথা ঠান্ডা রেখে ধরে খেলার চেষ্টা করলেন। সাবালেঙ্কার সার্ভিস ভেঙে বসে পড়লেন কোর্টে। আনন্দে আত্মহারা কিজ় বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। কী করা উচিত তাঁর।

চাপের কাছে হেরে গেলেন সাবালেঙ্কা। তাতে কিজ়ের কৃতিত্ব কমবে না এতটুকু। সাবালেঙ্কা নিজের সেরা টেনিস খেলতে পারেননি ফাইনালে। স্নায়ুর চাপ তাঁর উপরও কম ছিল না। সেই চাপ সামলে সুযোগ কাজে লাগানোটাও যথেষ্ট কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই সফল ভাবে করেছেন কিজ়। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছেন। দীর্ঘ দিনের অলক্ষের প্রস্তুতিই কিজ়কে পৌঁছে দিল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

Australian Open 2025 Aryna Sabalenka madison keys
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy