Advertisement
E-Paper

রোহিতের বিধ্বংসী ব্যাটিং, কুড়ি ওভারে ২১টা ছক্কা!

এমন ছয়ের বৃষ্টি শুরু হলে তো তা হতেই পারে। এই প্রথম একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হওয়া শুরু হয় এ বার দর্শকদেরও হেলমেট মাথায় দিয়ে গ্যালারিতে বসা উচিত।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৬
বিধ্বংসী: ইনদওরে বিশ্ব রেকর্ড করে উল্লাস রোহিতের। ছবি: এএফপি।

বিধ্বংসী: ইনদওরে বিশ্ব রেকর্ড করে উল্লাস রোহিতের। ছবি: এএফপি।

শুক্রবার ইনদওরে ‘রোহিত শর্মা শো’ দেখতে দেখতে যেমন বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম, তেমনই ভয়ও হচ্ছিল, কোনও দর্শক না গুরুতর আহত হয়ে যান।

এমন ছয়ের বৃষ্টি শুরু হলে তো তা হতেই পারে। এই প্রথম একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হওয়া শুরু হয় এ বার দর্শকদেরও হেলমেট মাথায় দিয়ে গ্যালারিতে বসা উচিত। বিশ্বাস করুন, আইপিএলেও কখনও এমন মনে হয়নি। যা এ দিন রোহিত শর্মার বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখতে দেখতে মনে হল। কুড়ি ওভারে ২১টা ছক্কা! অন্য কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে এত ছয়ের বৃষ্টি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। শুক্রবারের ম্যাচটা আসলে হয়ে উঠল ‘রোহিত শর্মা শো’। কেউ যদি ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে, মোট ৪৩ বলের ইনিংসে এক ডজন চার আর দশটা ছয় হাঁকায়, তা হলে তা মনে হবে না? রোহিতের এই আগ্রাসী ব্যাটিং দেখে তেড়েফুঁড়ে উঠল লোকেশ রাহুলও। রোহিতের ঝোড়ো ১১৮ আর রাহুলের ৪৯ বলে ৮৯ রানের ইনিংস। পরে ধোনির ২১ বলে ২৮।

দ্রুততম শতরান

• রোহিত শর্মা (ভারত): ৩৫ বলে। বনাম শ্রীলঙ্কা।

• ডেভিড মিলার (দক্ষিণ আফ্রিকা): ৩৫ বলে। বনাম বাংলাদেশ।

• রিচার্ড লেভি (দক্ষিণ আফ্রিকা): ৪৫ বলে। বনাম নিউজিল্যান্ড।

• ফাফ ডু প্লেসি (দক্ষিণ আফ্রিকা): ৪৬ বলে। বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

• কে এল রাহুল (ভারত): ৪৬ বলে। বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

• অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া): ৪৭ বলে। বনাম ইংল্যান্ড।

• ক্রিস গেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ): ৪৭ বলে। বনাম ইংল্যান্ড।

*আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে

এ সব মিলিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি-তে তাদের সেরা রান ২৬০ তুলল এদিন। যেটা প্রত্যাশা অনুযায়ীই টপকাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। হেরে যায় ৮৮ রানে। দু’ওভারে ছ’টা উইকেট খোয়ালে আর কী করে জিতবে ওরা? এক ওভারে কুলদীপ ও আর এক ওভারে চহাল তিনটে করে উইকেট নিয়ে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে চলে আসে। আর চারটে রান করলেই অস্ট্রেলিয়ার ২৬৩ রানের নজিরটা ভেঙে ফেলত রোহিতরা, যেটা ওরা গত বছর করেছিল এই শ্রীলঙ্কারই বিরুদ্ধে। আর ২৬০-৫ তুলে শ্রীলঙ্কাকেই ছুঁয়ে ফেলল, যা তারা করেছিল কিনিয়ার বিরুদ্ধে দশ বছর আগে, জোহানেসবার্গে।

সেই শ্রীলঙ্কা আর এই শ্রীলঙ্কার মধ্যে অবশ্য আকাশ-পাতাল তফাৎ বললেও বোধহয় কম বলা হয়। এই দলটা বোধহয় এ বার রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠা দলগুলোকেও হারাতে পারবে না।

এ রকম আত্মবিশ্বাস আমি আর কারও ব্যাটিংয়ে কখনও দেখিনি। এই ইনিংস দেখলে ক্রিস গেল, ডেভিড মিলার, এবি ডিভিলিয়ার্স-রাও বোধহয় অবাক হয়ে যেত। ওদের সঙ্গে অবশ্য রোহিতের একটা জায়গাতেই তফাৎ রয়েছে। ওরা প্রবল শক্তিতে ব্যাট করে। কিন্তু রোহিতের আসল শক্তি টেকনিক। টেকনিকে কিন্তু ওদের পিছনে ফেলে দেবে রোহিত।

এ দিনের ইনিংসে প্রতিটি শটই ছিল নিখুঁত ক্রিকেটীয় শট। এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে পেসারকে ছয় মারতে দেখা গেল ওকে। সুইপ করে স্পিনারকে ছয় মারতে দেখলাম। যে তিন স্পিনার বল করেছে এ দিন, তাদের বেশির ভাগ বলই মাটিতে ফেলতে দেয়নি ও। আগের দিন যে ধনঞ্জয় গুগলিতে বোকা বানিয়েছিল ওকে। সেই ধনঞ্জয়কে এ দিন প্রথম বলেই স্টেপ আউট করে চার হাঁকিয়ে দেয়। বোলারদের যে কিছুতেই মাথায় চড়তে দেবে না, শুরুতেই তার ইঙ্গিত এ ভাবেই দিয়ে রাখে রোহিত। একটা বলে তো ফ্রন্টফুটে এসে পুলও করতে দেখলাম, যে শটটা পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান টম গ্রেভনিও নাকি ভাল মারতেন বলে শুনেছি।

প্রথম পঞ্চাশটা তুলতে ওর ২৩ বল লাগে। শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কার বোলাররা দিশাহারা হয়ে গিয়েছিল। এ ভাবে একটা টিমকে নিয়ে ছেলেখেলা কেউ কোনও দিন করেছে কি না কে জানে।

এই আত্মবিশ্বাস শুধু প্র্যাকটিসেই আসে বলে মনে হয় না। এর জন্য একটা ক্লাস থাকা চাই। সেই ক্লাস ব্যাপারটা রোহিতের আছে বলেই ও এমন ইনিংস মাঝে মাঝেই খেলতে পারে। রোহিত শর্মাকে আটকানোর কোনও উপায় কি আছে বোলারদের? শুধুমাত্র অফ স্টাম্পের বাইরে রাইজিং ডেলিভারি দিয়ে ওকে কাট করতে বাধ্য করা হলে ও একটু অস্বস্তিতে পড়ে দেখেছি। এটাই বোধহয় ওর একমাত্র দুর্বল জায়গা।

আর একটা উপায় আছে ওকে আউট করার। ওর ভুলের অপেক্ষায় থাকো। যেমন এ দিনও ভুল করে একটা শট নিয়েই আউট হল।

স্কোরকার্ড

ভারত ২৬০-৫ (২০ ওভার)

শ্রীলঙ্কা ১৭২-৯ (১৭.২ ওভার)

ভারত

রোহিত শর্মা ক ধনঞ্জয় বো চামিরা ১১৮

রাহুল ক ডিকওয়েলা বো প্রদীপ ৮৯

এমএস ধোনি বো থিসরা ২৮

হার্দিক ক সমরবিক্রম বো প্রদীপ ১০

শ্রেয়স এলবিডব্লিউ বো থিসরা ০

মণীশ পাণ্ডে ন.আ. ১

কার্তিক ন.আ. ৫

অতিরিক্ত

মোট ২৬০-৫ (২০)

পতন: ১৬৫-১ (রোহিত, ১২.৪), ২৪৩-২ (রাহুল, ১৮.৩), ২৫৩-৩ (হার্দিক, ১৮.৬), ২৫৪-৪ (ধোনি, ১৯.৪)।

বোলিং: ম্যাথিউজ ২.২-০-১৬-০, চামিরা ৪-০-৪৫-১, প্রদীপ ৪-০-৬১-২, ধনঞ্জয় ৩.৪-০-৪৯-১, পেরেরা ৪-০-৪৯-০,

চতুরঙ্গ ১-০-১৬-০, গুণরত্নে ১-০-২১-০।

শ্রীলঙ্কা

ডিকওয়েলা ক পাণ্ড্য বো উনাডকট ২৫

থরঙ্গা ক ও বো চহাল ৪৭

কুশল ক পাণ্ডে বো কুলদীপ ৭৭

থিসরা ক পাণ্ড্য বো কুলদীপ ০

গুণরত্নে স্টা. ধোনি বো কুলদীপ ০

সমরবিক্রম স্টা. ধোনি বো চহাল ৫

চতুরঙ্গ বো চহাল ১

ধনঞ্জয় ক পাণ্ডে বো চহাল ৫

চামিরা বো পাণ্ড্য ৩

প্রদীপ ন.আ. ০

ম্যাথিউজ আহত

অতিরিক্ত

মোট ১৭২-৯ (১৭.২)

পতন: ৩৬-১ (ডিকওয়েলা, ৪.৩), ১৪৫-২, (থরঙ্গা, ১৩.২), ১৫৫-৩ (থিসরা, ১৪.২), ১৫৬-৪,(কুশল, ১৪.২), ১৬১-৫ (গুণরত্নে, ১৪.৫), ১৬২-৬ (চতুরঙ্গ, ১৫.১), ১৬৪-৭ (সমরবিক্রম, ১৫.২), ১৭০-৮ (ধনঞ্জয়, ১৫.৫), ১৭২-৯ (চামিরা, ১৭.২)।

বোলিং: উনাডকট ৩-০-২২-১, বুমরা ৩-০-২১-০, কুলদীপ ৪-০-৫২-৩, পাণ্ড্য ৩.২-০-২৩-১, চহাল ৪-০-৫২-৪।

৮৮ রানে জয়ী ভারত
ম্যাচের নায়ক রোহিত শর্মা

Rohit Sharma India-Sri Lanka Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy