শহরে সচিন। কলকাতা ম্যারাথনে। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
পরনে স্পনসরদের সাদা রাউন্ড নেক টি শার্ট, ব্লু জিন্স। এই পোশাকেই ছুটির সকালে শহরের ঘুম ভাঙার অনেক আগেই প্রায় কাকভোরে তিনি হাজির হয়ে গিয়েছিলেন রেড রোডে। কলকাতা ফুল-ম্যারাথনের স্টার্টিং পয়েন্টে।
ঘড়ির কাটায় তখন সকাল চারটে পঞ্চান্ন। ভোরের আলো ফোটেনি। রেড রোডে তখন ম্যারাথনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অ্যাথলিটরা। ঠিক তখনই ‘কেমন আছ কলকাতা? আমি ভাল আছি’ বলতে বলতে মঞ্চে উঠে পড়লেন সচিন তেন্ডুলকর। ততক্ষণে দৌড় শুরু করার জন্য লিটল মাস্টারের হাতে চলে এসেছে চেকারড ফ্ল্যাগ।
প্রিয় স্পোর্টস আইকনকে হাতের কাছে পেয়ে ততক্ষণে মনঃসংযোগকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন অ্যাথলিটরাও। মুহূর্তে তাঁরা ব্যস্ত লিটল মাস্টারকে মোবাইল বন্দি করতে। ম্যারাথনের ফ্ল্যাগ অফের পরেও তাই স্টার্টিং পয়েন্টে দৌড়ের বদলে সেলফি, গ্রুপফি তোলার ভিড়। সেই ভিড়ের উদ্দেশে হাত নেড়ে তাদের মাথায় ফের দৌড়ের-মন্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজটা করলেন সচিনই। এ বার ক্রিকেট কিংবদন্তি মাইক্রোফোনে বলতে শুরু করলেন, ‘‘আরে দৌড়ান। এই দৌড় তো আপনাদের নিজের রেকর্ড ভাল করার দৌড়। পারফরম্যান্স ভাল করার দৌড়। শুরুতে থেমে গেল চলবে! আপনাদের সাফল্য দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকব।’’ মুহূর্তে পাতলা হয়ে যায় ভিড়। দেড় ঘণ্টা পরের ছবি। সকাল সাড়ে ছ’টা। পুরুষ, মহিলা— দু’য়েরই হাফ ম্যারাথন শুরু হওয়ার সময়েও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এ বার অ্যাথলিটদের দেখে লিটল মাস্টার বলে ফেললেন, ‘‘শীতের সকালে উঠে এসে আপনারা ম্যারাথনের স্পিরিটটাকেই জিতিয়ে দিয়েছেন। এটা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। অনেক মহিলাকেও দেখতে পাচ্ছি। সমাজের জন্য একটা দারুণ বার্তা।’’
এত অবধি সব ঠিকঠাকই ছিল। ভিড় উপচে পড়ল এর ঠিক এক ঘণ্টা পরে। ১০ কিমি দৌড়ের সময়। ততক্ষণে ম্যারাথনের বিজয়ীরা ফিনিশিং পয়েন্টে আসতে শুরু করেছেন। কিন্তু ১০ কিমির প্রতিযোগীরা সচিনকে দেখে স্টার্টিং পয়েন্টে আঠার মতো যেন আটকে গিয়েছেন। সকলেই স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে ছবি তুলতে চান। সচিন প্রথমে ইশারায় তাঁদের দৌড়াতে বললেন। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ হচ্ছে না দেখে এক সময় মঞ্চের এক কোণে এসে বসেই পড়লেন হাঁটু গেড়ে। ভক্তদের কারও কারও কাছ থেকে চেয়ে নিলেন তাঁদের স্মার্ট ফোন। তুলে দিলেন গ্রুপফি। দৌড় ভুলে তখন রেড রোড মুখরিত ‘সচিন, সচিন...’ কোলাহলে।
যা দেখে ম়ঞ্চ থেকেই নিজের ফোনে ফের সেই উৎসাহী কলকাতার ছবি ক্যামেরাবদ্ধ করে টুইট লিটল মাস্টারের টুইট। সঙ্গে ছোট্ট নোট, ‘‘আমি এখন কলকাতা ফুল-ম্যারাথনে। পরিবেশ দুর্দান্ত। আপনারা এ ভাবে দলে দলে ম্যারাথনে অংশ নিতে আসার জন্য ধন্যবাদ।’’
এ বার পুরস্কার দেওয়ার পালা। সচিনের হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে হাফ ম্যারাথনের চ্যাম্পিয়ন শুভঙ্কর ঘোষ বলেই ফেললেন, ‘‘জীবনের স্বপ্ন আজ সফল।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শত সেঞ্চুরির মালিক তখন ফিটনেস ট্রেনারের অবতারে হাজির মিডিয়ার সামনে। শর্ত, ক্রিকেট নিয়ে কোনও প্রশ্ন নয়। এর পর নিজেই বলে যান, ‘‘শরীরটা ফিট রাখলে জীবনে অনেক না হওয়া কাজ করে ফেলতে পারবেন। কিন্তু শরীর আর ফিটনেস যদি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় তা হলে কিন্তু জীবনটা অনেক কঠিন হয়ে মুখের হাসি মুছে যায়। এই বার্তাটাই ছড়িয়ে দিন চার দিকে।’’ শীতের সকালে মিঠে রোদে সচিনের এই ফিটনেস মন্ত্রে কলকাতা কতটা উজ্জীবিত হয় এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy