শাস্তি: জয়সূর্যকে নিয়ে কড়া সিদ্ধান্ত আইসিসির। ফাইল চিত্র
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে টালমাটাল পরিস্থিতি চলছেই। একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের উৎসবে কুশল মেন্ডিসরা যখন শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছেন, তখনই সে দেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তি, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক সনৎ জয়সূর্যকে ক্রিকেট দুর্নীতির তদন্তে অসহযোগিতা করার দায়ে দু’বছর নির্বাসিত করল আইসিসি।
শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অধিনায়ক দু’দফায় আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী আইন ভাঙার কথা মেনে নেওয়ার পরে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা এই শাস্তির কথা জানিয়েছে। এই দু’বছর ক্রিকেট সম্পর্কিত কোনওকিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না জয়সূর্য। ৪৯ বছর বয়সি জয়সূর্যকে গত বছর অক্টোবরে অভিযুক্ত করা হয়। আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী শাখার জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্স মার্শাল জানিয়েছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি বিরোধী আইনে যে ভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তা থেকে তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা পরিষ্কার। এই সহযোগিতা করাটাই দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে আমাদের অন্যতম বড় অস্ত্র।’’
শাস্তির কথা ঘোষণা হওয়ার পরে জয়সূর্যের বিবৃতি, ‘‘আইসিসি এসিইউ যা যা চেয়েছিল সব তথ্য দেওয়ার পরেও যে ভাবে আমায় অভিযুক্ত করা হল সেটা দুর্ভাগ্যজনক। যদিও দুর্নীতিতে জড়ানো, বেটিং বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করার কোনও অভিযোগ ছিল না।’’ তা হলে ঠিক কী অভিযোগ আনা হয়েছে জয়সূর্যের বিরুদ্ধে?
আইসিসির তরফে এ ব্যাপারে বিশদে যা জানানো হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে দুর্নীতির তদন্তে এর আগে আইসিসির তরফে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল জয়সূর্যকে। আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখার (এসিইউ) জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্সের মনে হয়েছিল তদন্তে জয়সূর্যের দুটি মোবাইল ফোন কাজে লাগতে পারে। সেই অনুযায়ী জয়সূর্যকে মোবাইল ফোন দুটি জমা দিতে বলা হয়। এসিইউ জয়সূর্যকে তাঁর দুটি মোবাইল ফোনের ব্যাপারে বিশদে জানাতেও বলেছিল।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ জয়সূর্য তদন্তকারীদের জানান, তাঁর দুটি মোবাইল ফোন রয়েছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান পরের দিনই তাঁর বিবৃতি পাল্টে ফেলেন (২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭)। তিনি জানান আরও দুটি মোবাইল ফোন রয়েছে তাঁর। সেই দুটি মোবাইল ফোন সে বছরের মে মাসের ১৫ থেকে ২৩-২৪ তারিখের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে। দুটি মোবাইল নম্বরের শেষ তিনটি সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ‘৮৮৮’ এবং ‘০৮৮’। এই দুটি নম্বর তিনি ব্যবহার করছেন না বলেও এসিইউকে জানান তিনি। তবে জয়সূর্যের নাকি জানা ছিল না তদন্তকারীরা শেষ তিনটি সংখ্যা ‘৮৮৮’ থাকা নম্বরটিতে ফোন করেছিলেন এবং দেখা গিয়েছিল সেটি চালু রয়েছে। ফলে জয়সূর্যের বিবৃতির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। পরে আবার যখন ওই নম্বরে আইসিসির তদন্তকারী অফিসারেররা ফোন করেন, যান্ত্রিক উত্তর পাওয়া যায়।
এর পরে ৫ অক্টোবর জয়সূর্য তাদের জানান, তিনি আগের ফোন নষ্ট করে ফেলেন। কারণ একটি গোপন ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে তিনি চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে জয়সূর্যের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, প্রাক্তন ক্রিকেটারের গাড়ির চালক মোবাইলের সিমটি আর একটি ফোনে ফের চালু করেন ও পরে সেটি জয়সূর্যের হাতে ফিরে যায় এবং ‘৮৮৮’ সংখ্যার সিমটি জয়সূর্য আবার ব্যবহার করা শুরু করেন টেক্সট মেসেজ
দেখার জন্য।
কিন্তু এসিইউ-এর কাছে প্রমাণ ছিল ১৫ মার্চ, ২০১৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ পর্যন্ত শয়ে শয়ে ফোন এবং মেসেজ ‘৮৮৮’ নম্বরের ফোনে এসেছে। তার রেকর্ডও রয়েছে। যা প্রমাণ করে জয়সূর্য সত্যি বলছেন না। এর পরে জয়সূর্যের আইনজীবী যখন মেনে নেন তদন্তকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করেছেন তাঁর মক্কেল, তখনই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
এই অপরাধে তাঁর সর্বোচ্চ পাঁচ বছর নির্বাসনের শাস্তি হওয়ার কথা। কিন্তু জয়সূর্যের ‘অতীতের ভাল আচরণ’-এর কথা মাথায় রেখে দু’বছর নির্বাসনের শাস্তি দেওয়া হয়। যা শুরু হয়েছে ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ থেকে। শুধু তদন্তে অসহযোগিতায় নির্বাসিত করা নয়। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত করতে আরও পদক্ষেপ নিয়েছে এসিইউ। তদন্তে সাহায্য করলে ক্ষমা করার ঘোষণা করা হয়। যাতে সাড়া দিয়ে এগারো জন ক্রিকেটার-সহ আরও অনেকে এগিয়ে আসেন। যাতে খুশি এসিইউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy