Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মহাচাপের ম্যাচে ‘মাঠে’ আজ সনিদের সঙ্গে সত্য

আই লিগ খেতাব যুদ্ধের বিজনেস এন্ড-এ দাঁড়ানো মোহনবাগান কতটা চাপে? দৃশ্য এক: ঠিক এই সময় ফুটবলার যদি ফুটবল সচিব হন, তবে তার চাপ কতটা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রাস্তাঘাটে, অফিস বা বাজারে যেখানেই যাচ্ছেন, বালির বুবুনকে ঘিরে ধরে বাগান সমর্থকরা দাবি তুলছেন, ‘‘আই লিগটা এনে দিন।’’

ফুটবল সচিবের দায়িত্ব নিয়েই ফুটবলারদের তাতানো শুরু সত্যজিতের। ছবি: উৎপল সরকার

ফুটবল সচিবের দায়িত্ব নিয়েই ফুটবলারদের তাতানো শুরু সত্যজিতের। ছবি: উৎপল সরকার

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

আই লিগ খেতাব যুদ্ধের বিজনেস এন্ড-এ দাঁড়ানো মোহনবাগান কতটা চাপে?
দৃশ্য এক: ঠিক এই সময় ফুটবলার যদি ফুটবল সচিব হন, তবে তার চাপ কতটা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রাস্তাঘাটে, অফিস বা বাজারে যেখানেই যাচ্ছেন, বালির বুবুনকে ঘিরে ধরে বাগান সমর্থকরা দাবি তুলছেন, ‘‘আই লিগটা এনে দিন।’’
দলকে তাতাতে তাই বুধবার বারাসত স্টেডিয়ামে রিজার্ভ বেঞ্চেই সঞ্জয় সেনের পাশে টিম ম্যানেজার হয়ে বসে পড়ছেন সত্যজিৎ।
দৃশ্য দুই: মঙ্গলবার সকালে অনুশীলন ম্যাচে একের পর এক গোল নষ্ট করছিলেন সনি-বোয়া-জেজেরা। গোটা ম্যাচে মাত্র একটি গোল হল। যা দেখে গ্যালারিতে সোদপুরের কট্টর বাগান সমর্থক অরূপ মিত্রের মাথায় হাত, ‘‘আরে এত গোল মিস করলে চ্যাম্পিয়ন হব কী করে!’’

দৃশ্য তিন: পাহাড় থেকে বারাসতে অনুশীলন করতে নেমে হাঁসফাঁস অবস্থা রয়্যাল ওয়াহিংডো ফুটবলারদের। শিলংয়ের দলটির প্রাক্তন বাগান কোচ সন্তোষ কাশ্যপ অবশ্য দমবার পাত্র নন। ‘‘ম্যাচ তো সন্ধে সাতটায়। আমাদের সুবিধেই। অত গরম থাকবে না।’’ যা শুনে এক বাগান প্লেয়ারের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘কর্তারা এত পেপটক না দিয়ে যদি ম্যাচটা সাড়ে চারটেয় করে দিতেন, তা হলেই বরং বেশি ভাল।’’

এক থেকে দুই নম্বরে নেমে এসে সঞ্জয় সেনের বাগান ট্রফির দৌড়ে কার্যত খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। পরিস্থিতি যা তাতে ওয়াহিংডোকে হারালে তবেই সনিদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা বেঁচে থাকবে। হারলেই বাপি বাড়ি যা!

দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর থেকে ছ’পয়েন্ট এগিয়ে থাকা টিম পরপর তিন ম্যাচে আট পয়েন্ট নষ্ট করে আচমকা কেন চাপে পড়ল, এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন বাগানের অন্যতম গেমমেকার বোয়া। ‘‘আমাদের মনোসংযোগের অভাব। এখন সেটা মেরামত করার দায়িত্বও আমাদেরই নিতে হবে।’’ একমত কোচ সঞ্জয় সেনও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের এখন সব ম্যাচই নক আউট ম্যাচ। জিতলে থাক, না হলে আশা কোরো না।’’

ওয়াহিংডো টিমটার মূল শক্তি তাদের গতি। সঙ্গে থিওবল্ডের মতো বিদেশির পাশাপাশি জ্যাকিচন্দের মতো এমন এক অস্ত্র তাদের আছে যা দিয়ে যে কোনও টিমকে শেষ করে দেওয়া যায়। শিলংয়ের মাঠে হেরেছিল বাগান। সেটা যেমন সনিদের চাপে রাখছে, তেমনই বারাসতে জিততে না পারলেই খেতাব মরীচিকা হয়ে দাঁড়াবে, সেটাও ফাঁস হয়ে চেপে বসছে সঞ্জয়ের টিমের গলায়। প্রতিপক্ষের বুদ্ধিমান কোচ সে দিকেই ইঙ্গিত করলেন ম্যাচের আগের দিন। ‘‘ওরা চ্যাম্পিয়ন হতে চায়, তাই যত চাপ সব ওদের। আমাদের যেটা নেই। খোলা মনে খেলব।’’

তীব্র চাপের পাশাপাশি বাগানের জন্য আরও দু’টো খারাপ খবর, চোটের জন্য এক সপ্তাহ মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন দেবজিৎ মজুমদার। কিপার তাই শিল্টন পাল। চোট পেয়েছেন ডেনসন দেবদাসও। তাঁর জায়গায় মাঝমাঠে সম্ভবত শেহনাজ। বলবন্ত না জেজে কে বোয়ার সামনে একমাত্র স্ট্রাইকার হবেন তাও প্র্যাকটিসে বুঝতে দেননি সঞ্জয়। ‘‘ম্যাচের আগে প্রথম দল বাছব। কিছু পরিবর্তন তো হবেই।’’

নির্বাচনে সাফল্যের পর বাগান কর্তাদের পরের লক্ষ্য, আই লিগে সাফল্য। এ দিন সকালে সমর্থকদের ভিড় তেমন না থাকলেও কর্তাদের ভিড় ছিল তাই চোখে পড়ার মতো। টেকনিক্যাল কমিটির শিবাজি, কম্পটন ছাড়াও নতুন কর্মসমিতির সদস্য বিদেশ বসুও এসেছিলেন টিমকে উৎসাহ দিতে। কর্তারা জানেন, নির্বাচনের বিপুল জয়ের উল্লাস ফিকে হয়ে যাবে যদি আই লিগে টিমের তীরে এসে তরী ডোবে।

বারাসতে আজ সত্যিই সঞ্জয়-সত্যজিতের অগ্নিপরীক্ষা!

গোল করলেই পঁচিশ হাজার

ক্লাবের নির্বাচনে সচিব-পদে দাঁড়িয়ে হারলেও মোহনবাগান যাতে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় চাইছেন বলরাম চৌধুরীও। টুর্নামেন্টের শেষ তিন ম্যাচে সনি-বোয়া বা যিনিই গোল করবেন তাঁকে গোল-প্রতি ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেবেন তিনি। জোড়া গোল করলে ৫০ হাজার। প্রতিটি ম্যাচের পর তিনি সেই টাকা পাঠিয়ে দেবেন কোচ সঞ্জয় সেনের কাছে। বলরাম বললেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে যদি শেষ ম্যাচে আমাদের টিম খেতাব জেতে তা হলে আরও বড় কিছু করার ইচ্ছা আছে।’’

বুধবারে আই লিগ

মোহনবাগান: রয়্যাল ওয়াহিংডো (বারাসত, ৭-০০)

ইস্টবেঙ্গল: মুম্বই এফসি (মুম্বই, ৭-০০)

ডেম্পো: সালগাওকর (মারগাও)

শিলং লাজং: স্পোর্টিং ক্লুব (শিলং)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE