দাবিদার: শাস্ত্রী, সহবাগ। যে দু’জনের নাম উঠেছে। —ফাইল চিত্র।
অনিল কুম্বলেকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠার মধ্যেই কৌতূহল শুরু হয়ে গিয়েছে যে, বিরাট কোহালিদের পরবর্তী কোচ কে হতে পারেন? দু’টো নাম সবচেয়ে বেশি করে শোনা যাচ্ছে। এক জন কুম্বলের আগেই টিম ডিরেক্টর ছিলেন— রবি শাস্ত্রী। অন্য জন ‘নজফগড় কা নবাব’ বীরেন্দ্র সহবাগ।
ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা শাস্ত্রীকে ফেরত চান। কোহালির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সমীকরণ দারুণ। ডিরেক্টরের পদ থেকে যখন শাস্ত্রীকে সরানো হয়েছিল, কোহালির সেই অপসারণে কোনও ভূমিকা ছিল না। সেই সময় কোচ নির্বাচন নিয়ে তাঁর মতামতও কেউ নেয়নি। সেটা নেওয়া হলে হয়তো এখনকার গুমোট পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
সহবাগের নাম তুলছেন বোর্ডের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা। তাঁর খোলামেলা মনোভাব কোহালিদের ক্রিকেট দর্শনের সঙ্গে ভাল মিলবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কোচ হিসেবে তিনি ততটা পরীক্ষিত নন। কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব তাঁর অধীনে দারুণ কিছু ফলও করেনি। তা ছাড়া সহবাগকে বোর্ড কর্তারা বাজিয়ে দেখে বুঝেছেন যে, তিনি আবেদন করে বসে থাকতে চান না। যদি নিশ্চয়তা পান যে, তাঁকেই বেছে নেওয়া হবে তবেই আবেদন করবেন। দ্বিতীয়ত, কোচের পদে বিশ্বাসী নন তিনি। মেন্টর হিসেবে যোগ দিতে রাজি হতে পারেন বড়জোর।
রাহুল দ্রাবিড়? এ দিনই রিকি পন্টিং বলেছেন, দ্রাবিড়ই ভারতীয় দলের পরবর্তী কোচ হওয়ার সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত যা খবর, রাহুল এখনই কোহালিদের কোচ হতে চান না। রাহুল জানিয়ে রেখেছেন, পনেরো বছর ধরে ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সময় শুধুই বাইরে বাইরে থেকেছেন। এখনই আবার পরিবারকে ছেড়ে ট্র্যাভেল করার ঝক্কি নিতে চান না।
আরও পড়ুন: কোহালি-কুম্বলে এখন দুই মেরুতে
ওদিকে শাস্ত্রীও ঘনিষ্ঠমহলে বলে দিয়েছেন, তিনি নিজে থেকে আবেদন করবেন না। তাঁকে দরকার হলে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে ফেরাতে হবে। বোর্ড থেকে ফোন আসতে হবে তাঁর কাছে, তিনি আবেদনপত্র পাঠাবেন না। সেটা সম্ভব হবে যদি কোহালি নিজে স্পষ্ট করে বোর্ড কর্তা বা সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের জানিয়ে দেন যে, তিনি শাস্ত্রীকেই ফেরত চাইছেন।
আজ, বুধবারই ভারতীয় বোর্ডের কাছে আবেদনপত্র পাঠানোর শেষ দিন। চূড়ান্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে আগ্রহী প্রার্থীদের নিয়ে। সম্পূর্ণ আলাদা একটি ই-মেল বক্সে প্রার্থীদের আবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে বোর্ডের পদাধিকারী, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে তা খোলা হবে।
বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, কোচ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ বারও প্রধান দায়িত্ব থাকবে তিন সদস্যের ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির হাতে। তিন কিংবদন্তি— সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভি ভি এস লক্ষ্মণকে নিয়ে জগমোহন ডালমিয়ার আমলে এই কমিটি তৈরি হয়েছিল। শাস্ত্রীকে সরিয়ে কুম্বলেকে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সচিন-রা। এক বছরের মধ্যেই আবার নতুন কোচ নির্বাচন করতে বসতে হচ্ছে তাঁদের।
এ বারে যদিও অধিনায়কের মতামতকেই সচিন, সৌরভরা গুরুত্ব দিতে চাইছেন। আগের বার শাস্ত্রীকে সরিয়ে কুম্বলেকে আনার সময় বোর্ড থেকেই নির্দেশ ছিল, নতুন কোচ বেছে নাও। শোনা যায়, বোর্ডের এক শীর্ষ কর্তাই চাননি শাস্ত্রীকে রাখতে। তাঁর ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতেই অধিনায়ককে অন্ধকারে রেখে নতুন কোচ বেছে ফেলা হয়েছিল। এ বারে একই ভুল আর করতে চান না ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বিখ্যাত থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। তা সে যতই তাঁরা কুম্বলের বহুদিনের সতীর্থ হোন, যতই তাঁরা নিজেরা কুম্বলেকে কোচ বেছে থাকুন।
যদিও মনে করা হচ্ছে, সে রকম হলে কুম্বলে নিজেই হয়তো জল অতদূর গড়াতে দেবেন না যাতে সচিন-সৌরভরা তাঁকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন। তিনি নিজে থেকেই সরে দাঁড়াতে পারেন। তখন সৌরভদের কাজ তুলনামূলক ভাবে সহজ হয়ে যাবে। তবে কোহালি যদি নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলেন, তাঁর সেই মতকে অগ্রাধিকার দিতে চাইবে ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি। যদি কোহালি চান শাস্ত্রীকে ফেরানো হোক, সেটাও মেনে নিতে পারেন সচিন-সৌরভরা।
যা পরিস্থিতি, ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ক্রিকেটীয় নাটক চলবে। ভারতে তখন কোচ নির্বাচন নিয়ে একের পর এক নাটকীয় দৃশ্য মঞ্চস্থ হওয়ার সম্ভাবনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy