Advertisement
E-Paper

ওয়াংখেড়েতে নামার আগে দলকে তাতালেন শাহরুখ

তাঁর নিজের শহরে তাঁর প্রাণের কেকেআর। তবু তিনি থাকতে পারবেন না! খবর শুনে মুম্বই সাংবাদিকরাই তাজ্জব বনে গেলেন।গুঞ্জন শুরু হল, টিম নিয়ে কি মালিকের আগ্রহ কমছে নাকি ইদানীং?

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৭
নাইটদের প্র্যাকটিসে রাসেলের কসরত। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি

নাইটদের প্র্যাকটিসে রাসেলের কসরত। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি

তাঁর নিজের শহরে তাঁর প্রাণের কেকেআর। তবু তিনি থাকতে পারবেন না!

খবর শুনে মুম্বই সাংবাদিকরাই তাজ্জব বনে গেলেন।

গুঞ্জন শুরু হল, টিম নিয়ে কি মালিকের আগ্রহ কমছে নাকি ইদানীং?

আগের রাতে মালাবার হিলসে এক বিলাসবহুল বাংলোয় কী কী ঘটেছে, তা জানলে বোধহয় এই গুঞ্জন হত না।

কী হয়েছে মঙ্গলবার রাতে?

দল বেঁধে বেশ রাতের দিকে সেখানে গিয়েছিলেন নাইটরা। গম্ভীর থেকে শুরু করে উমেশ যাদব, সবাই। পীযূষ চাওলা, আন্দ্রে রাসেলরা সস্ত্রীক যান। দলের মালকিন জুহি চাওলার আমন্ত্রণে।

রিত্‌জ রোডে তাঁর ও তাঁর স্বামী জয় মেটার বীর ভবনে সশরীরে শাহরুখ বাদশাহ খানকে দেখে তো অবাক ক্রিকেটাররা। পার্টিতে থাকা এক নাইট সদস্য জানালেন, বাজিগরের ভেল্কিতে দলের প্রায় সবাই নাকি আশ্চর্য হয়ে যান। তিনি খুব ব্যস্ত, এটাই এত দিন ধরে শুনে আসছিলেন তাঁরা। তাই টুইটারে, ফোনে, এসএমএস, এমএমএস, হোয়াটস্যাপে যতটা পেরেছেন নিজেকে ক্রিকেটারদের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছেন শাহরুখ। এ দিন যে নিজেই চলে আসবেন, এ রকম আগাম খবর ছিল না বলেই এই বিস্ময়।

জানা গেল, শাহরুখ গম্ভীরদের বলেন, “তোমরা এত কাছে। তাই তোমাদের সঙ্গে দেখা না করে পারলাম না। কাজ থেকে একটু সময় বার করে চলে এলাম তোমাদের সঙ্গে হুল্লোড় করতে। কাম অন গাইজ, এনজয়।” তার পর দলের প্রায় সবাইকেই আলাদা আলাদা করে ডেকে কথা বলেন। প্রত্যেকের সঙ্গে সেলফি তোলেন। একাই জমিয়ে দেন পার্টি। হুল্লোড়বাজ রাসেল, ইউসুফ, হগ, সূর্যদেরও অবশ্য সঙ্গে পেয়ে যান। চুটিয়ে পার্টি চলে রাত পর্যন্ত। ওয়াংখেড়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা যদিও বা এখন তাঁর কাছে অতীত। তবুও যেন মনের কোনে কোথাও সেই কাঁটাটা খচখচ করে। সেই কারণেই বোধহয় মুম্বইয়ে নাইটদের আইপিএল ম্যাচ তাঁর কাছে অন্য রকমের চ্যালেঞ্জ। তাই কি হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও দলের ছেলেদের তাতাতে চলে এলেন?

“এই এক রাতেই ঘণ্টা খানেকের উপস্থিতি দিয়ে দলকে দারুণ ভাবে রিচার্জ করে গেলেন শাহরুখ ভাই,” বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াংখেড়েতে প্র্যাকটিসের পর বললেন মুম্বইয়ের তরুণ নাইট সূর্য কুমার যাদব। আগের ম্যাচেই যাঁর ব্যাট থেকে আসা রান জিতিয়েছে দলকে। সূর্য বলেন, “ওঁর মতো কিংবদন্তি যদি কাউকে ভাল ভাল কথা বলেন, তা হলে তো সে উদ্বুদ্ধ হবেই।” তাই বৃহস্পতিবার কেকেআর তারকারা ওয়াংখেড়েতে নেমে দলের ‘ডন’-কে গ্যালারিতে না দেখতে পেলেও বোধহয় হতাশ হবেন না।

যদিও ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীর শাহরুখের গ্যালারিতে থাকা বা না থাকার মধ্যে খুব একটা ফারাক দেখতে পাচ্ছেন না। তিনিও যে এখন সেই বিখ্যাত ডায়লগটা একটু পাল্টে নিয়ে বলতেই পারেন, ‘কেকেআর কো হারানা মুশকিল হি নেহি, নামুমকিন হ্যায়’। পাঁচটার মধ্যে চারটে ম্যাচ জিতেছে তাঁর দল। তিনি নিজে ২৩৭ রান করে প্রথম পাঁচ স্কোরারের মধ্যে। বলতেই পারেন।

তা অবশ্য বললেন না। যেটা বললেন, তা হল, “আমরা পেশাদার ক্রিকেটার, মাঠে ভাল খেলাটাই আমাদের কাজ। তার জন্য মাঠের বাইরে থেকে প্রেরণার দরকারই বা কী? শাহরুখ ম্যাচ দেখতে আসুক না আসুক, আমাদের ভাল খেলতেই হবে।”

যে হর্ষ ভোগলেকে বিসিসিআই সম্প্রতি ব্রাত্য করে দিয়েছে, সেই হর্ষর পক্ষে এক নিউজ চ্যানেলে প্রচুর ভাল ভাল কথা বলে যেমন স্রোতের বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা তাঁর টিম মালিকের, টিম ক্যাপ্টেনও সে ভাবেই যেন কিছুটা হলেও স্রোতবিরোধী। হর্ষ ভোগলেকে আবার এ দিন কেকেআরের এক টিভি অনুষ্ঠানেও দেখা গেল।

বৃহস্পতিবার ওয়াংখেড়েতে নেমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জেতাটাও সে রকমই একটা স্রোতের বিরুদ্ধে যাওয়া কাজই যেন হবে কেকেআরের। শেষ তিনবারের মুখোমুখিতে দু’বারই হেরেছেন গম্ভীররা। কয়েক দিন আগে ইডেনে বড় রান তুলেও হারতে হয়েছে তাঁদের। তাই মুম্বইকে হারাতে গেলে যে নিজেদের অন্য উচ্চতায় তুলতে হবে, তা যেন বুঝে নিয়েছেন নাইটরা।

বুধবার সন্ধ্যার প্র্যাকটিস দেখেও মনে হল, নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিই সারছেন গম্ভীররা। বাউন্ডারি লাইনে ছয় বাঁচিয়ে ক্যাচ নেওয়ার ড্রিলে যেমন মন দিলেন, তেমন ছোট ওয়াংখেড়েতে বড় শট নেওয়ারও প্র্যাকটিস চলল অনেকক্ষণ ধরে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে বৃহস্পতিবার রান ফোয়ারার আন্দাজ পেয়ে গিয়েছে দুই দলই।

মাঠের মাঝখানে হঠাৎ চোখে পড়ল ছোট্ট একটা জটলা। যা দেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় এক সাংবাদিক বললেন, “এই জটলাটাই না কালকের ম্যাচের ফয়সালা করে দেয়।” কে ওই জটলায়? আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, কায়রন পোলার্ড ও সদ্য আসা জেরম টেলর। দেশওয়ালি ভাইয়েরা সব এক জায়গায়। রাসেল আবার বৃহস্পতিবার জীবনের ২০০ নম্বর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছেন। দলের এক কর্তা মনে করিয়ে দিলেন, “১৯৯-টায় ওর স্ট্রাইক রেট কিন্তু ১৬০। এটা মনে রাখবেন।”

দেশওয়ালি জটলার ওখানেই শেষ নয়। একবার দেখা গেল মিচেল ম্যাকক্লেনাঘান, মার্টিন গাপ্টিল, কোরি অ্যান্ডারসন, টিম সাউদিদের দেখতে পেয়ে খোশ গল্প জুড়ে দিয়েছেন নাইট শিবিরের কিউয়ি তারকা কলিন মানরো। ইউসুফ পাঠান আবার যখন স্থানীয় এক বন্ধুকে নিজের ব্যাট সারানোর অনুরোধ করছিলেন, তখন পিছন থেকে পার্থিব পটেল তাঁকে ডেকে কুশল বিনিময় করে নিলেন।

এই বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়া দেখে অবশ্য মনে করার কোনও কারণ নেই যে বৃহস্পতিবার রাতে এর ছিটেফোঁটাও থাকবে। গম্ভীরের একটা কথাতেই সেটা পরিষ্কার। রোহিত শর্মার জন্য বিশেষ পরিকল্পনার প্রসঙ্গ তুলতেই প্রায় ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, “শুধু রোহিত কেন, সবার জন্যই আলাদা আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া আছে। কাল ম্যাচ শুরু হলেই সেটা বুঝবেন।”

অনেক দূরে থাকলেও নাইট শিবিরের তাপমাত্রা বোধহয় এখন কলকাতার মতোই।

আজ আইপিএলে

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স, ওয়াংখেড়ে, রাত ৮-০০

Wankhede IPL 2016 SRK
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy