জয়দীপ-রজত। যাঁদের নিয়ে বিতর্ক।
প্রাক্তন টেনিস তারকা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সাউথ ক্লাবকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তুলে যে এফআইআর ক্লাব প্রেসিডেন্ট রজত মজুমদার করেছেন, তার বৈধতা নিয়েই বিশ্বের অন্যতম পুরনো ও সম্ভ্রান্ত ওই টেনিস ক্লাবে প্রশ্ন উঠেছে। সাউথ ক্লাবের গঠনতন্ত্রে ওই ভাবে ব্যক্তিগত এক্তিয়ারে এফআইআর দায়ের করার নিয়ম আছে কি না, তা নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার উডবার্ন রোডের টেনিস পরিমণ্ডলে বিতর্ক।
বরং প্রাক্তন ক্লাব প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ যিনি এনেছেন, সেই প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজতবাবুর বাড়িতে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তল্লাশি করার পর সাউথ ক্লাবের কোনও কোনও মহল থেকে পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে রজতবাবুই এই ক্লাবের শীর্ষপদে নৈতিক ভাবে আর থাকার অধিকারী কি না? ক্লাবের অন্দরমহলের কোথাও কোথাও এমন সন্দেহও দানা পাকাচ্ছে যে, জয়দীপ বনাম রজতের পিছনে আসল কারণ সারদা-ইস্যু!
সাউথ ক্লাবের একটি সূত্র রবিবার জানাচ্ছেন, জয়দীপের বিরুদ্ধে ভবানীপুর থানায় রজত মজুমদারের এফআইআর দায়ের করার ব্যাপারটা ক্লাবে প্রকাশ্যে আসে, যে দিন জয়দীপবাবু ‘এবিপি আনন্দ’-এ রজতের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন তার পরের দিনই। নিউজ চ্যানেলে জয়দীপ বলেছিলেন, “সারদা ইস্যুতে সিবিআই সাউথ ক্লাব প্রেসিডেন্ট রজত মজুমদারের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর সাউথ ক্লাবের মর্যাদাকে মাথায় রেখে তাঁর ক্লাবের শীর্ষপদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।” সাউথ ক্লাবে অনেকের ধারণা, ওই মন্তব্যের পর রজতবাবু প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে জয়দীপের বিরুদ্ধে এফআইআর করার খবরটা প্রকাশ্যে এনেছেন।
যে ধারণাকে উড়িয়ে দিয়ে রবিবার রজতবাবু বললেন, “জয়দীপবাবুর বিরুদ্ধে থানায় আমার এফআইআর করার তারিখটা একবার দেখে নিন। তা হলেই এই অসাড় ধারণার উত্তর পেয়ে যাবেন। সিবিআই আমার বাড়িতে আসার অন্তত সাত দিন আগে আমি ওই এফআইআর করেছিলাম।” কিন্তু আপনি কি সিবিআই-প্রেক্ষিতে সাউথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে আপনার সরে যাওয়া সমীচিন মনে করেন না? রজতবাবুর সাফ জবাব, “না, আমি পদত্যাগ করছি না।”
সাউথ ক্লাবের সচিব সতীনাথ বসু গোটা বিতর্কে হয়তো জয়দীপের পাশে সরাসরি না থাকতে পারেন, কিন্তু তিনি যে ক্লাব প্রেসিডেন্টের পাশেও আছেন, তাও বলা যাচ্ছে না। সাউথ ক্লাবের সর্বেসর্বা কর্তা যেখানে এফআইআর করেননি, সেখানে ক্লাব প্রেসিডেন্টের এফআইআর করা প্রসঙ্গে সতীনাথ রবিবার বললেন, “সাউথ ক্লাব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ঠিকই। কিন্তু আমাদের ক্লাবের গঠনতন্ত্রে যেমন কোথাও লেখা নেই, এই প্রতিষ্ঠানের কোনও সদস্য ব্যক্তিগত এক্তিয়ারে অন্য কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারেন, তেমনই পারেন না, সেটাও লেখা নেই। হ্যাঁ, এফআইআর করার একটা প্রস্তাব কমিটির কাছে এসেছিল। আমরা ক্লাবের গঠনতন্ত্র মেনে একটা জায়গায় পৌঁছতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই ক্লাব প্রেসিডেন্ট নিজে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।” আর সারদা নিয়ে সাউথ ক্লাব প্রেসিডেন্টের বাড়িতে সিবিআই হানার পর তাঁর ওই পদে নৈতিক ভাবে থাকার বিষয়টা? সাউথ ক্লাব সচিব এ বার বললেন, “সেটা ওঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কমিটি এ ব্যাপারে বলতে যাবে না।”
অনুরূপ বক্তব্য সাউথ ক্লাবের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় এনরিকো পিপার্নোর। “এটা যাঁকে নিয়ে ব্যাপার তাঁকে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না।” জয়দীপের বিরুদ্ধে রজতের এফআইআর করা নিয়ে পিপার্নো বললেন, “বিষয়টা যত দূর মনে হয় ভবিষ্যতে কমিটিতে আলোচনা হবে। দেখা যাক, আমরা সবাই মিলে কী করতে পারি।” সতীনাথ আবার বলছেন, “সাউথ ক্লাবের কোনও টুর্নামেন্ট বা অনুষ্ঠানে যাঁরা বড় স্পনসর জোগাড় করে আনেন, তাঁদের একটা ন্যূনতম কমিশন দেওয়ার নজির এর আগেও একবার আছে। তফাতের মধ্যে শুধু সে বার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে টাকাটা চেক-এ দেওয়া হয়েছিল। আর এ ক্ষেত্রে ক্যাশ-এ দেওয়া হয়েছে। এই যা।”
সাউথ ক্লাবের প্রভাবশালী সদস্য সত্যজিৎ বর্মন অবশ্য সরাসরি জয়দীপের পাশে। এ দিন তিনি বললেন, “জয়দীপ মুখার্জি সাউথ ক্লাব থেকে এক লাখ টাকা নেওয়ার লোক নন। বরং লাখ লাখ টাকা ক্লাবে এনে দেওয়ার লোক। সাউথ ক্লাবে বহু টুর্নামেন্ট হয়েছে, যেগুলো সফল করে তুলতে উনি নিজের পকেট থেকে পর্যন্ত প্রচুর টাকা খরচ করেছেন। ওঁর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ ঠিক যতটা শকিং ততটাই অন্যায্য!”
পুলিশের তরফেও এ দিন বক্তব্য, অভিযোগ যিনি করেছেন আর যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দু’জনেই যেহেতু বিখ্যাত ক্লাবের হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিত্ব, তাই খুব সতর্ক ভাবে সব দেখে তবেই তদন্ত এগোবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy