Advertisement
E-Paper

স্পাইস গার্ল থেকে ভারতের পরশপাথর

দু’বছর বয়সে হাতে র‌্যাকেট তুলে নেওয়া। চার বছরে প্রথম টুর্নামেন্ট। বারোয় প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জুনিয়র খেতাব। চোদ্দোয় পা দিতে না দিতেই পেশাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৫

দু’বছর বয়সে হাতে র‌্যাকেট তুলে নেওয়া। চার বছরে প্রথম টুর্নামেন্ট। বারোয় প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জুনিয়র খেতাব। চোদ্দোয় পা দিতে না দিতেই পেশাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ষোড়শ জন্মদিনের তিন মাস আগে সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী। এক বছরের মধ্যে টেনিসের রাজরানীর সিংহাসনে সদম্ভ আরোহণ মার্টিনা হিঙ্গিসের!

রঙিন কেরিয়ারের জন্য যদি কোনও ট্রফি থাকত, তা হলে নিশ্চিত ভাবে সেটার মালিকানাও চলে যেত সুইস সেনসেশনের জিম্মায়। একের পর এক ট্রফির পাশাপাশি ভাগ্যে জুটেছে নানা বিতর্ক, গোড়ালির চোটের নির্মম ধাক্কায় মাত্র বাইশ বছর বয়সে অবসর নিতে বাধ্য হওয়া, জুতো স্পনসরের গাফিলতিকে সেই চোটের কারণ হিসেবে দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা, নিজের মাকে কোচের চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার দু’মাসের মধ্যে তাঁকে আবার ফেরানো, এক ধরনের কোকেন নেওয়ার শাস্তি হিসেবে দু’বছরের নির্বাসন, একাধিক বার অবসর ভেঙে কোর্টে ফেরা এবং সব শেষে স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন। ভারতীয় টেনিসপ্রেমীর অন্যতম প্রিয় মুখ হয়ে ওঠা। তাঁর হাত ধরেই উইম্বলডনে এসেছে জোড়া খেতাব। এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের মিক্সড ডাবলস ট্রফি। রবিবার এল মেয়েদের ডাবলস খেতাবটাও।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

অথচ এই মার্টিনা হিঙ্গিস নাকি এক সময় এতটাই দাম্ভিক, এতটাই অহংকারী ছিলেন যে, তাঁকে নিয়ে একটা চুটকি চালু হয়ে গিয়েছিল। বলা হত, হিঙ্গিসের প্রতিভা তর্কাতীত। তবে ডাবলসে একটাই দুর্বলতা— ওটা অন্য আর একজনের সঙ্গে মিলে খেলতে হয়!

১৯৯৮-এ যেমন তাঁর জেতা চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে তিনটেয় হিঙ্গিসের সঙ্গী ছিলেন চেক প্লেয়ার ইয়ানা নোভত্না। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতে তিরিশ বছরের ইয়ানাকে ‘বড্ড বুড়ো, বড্ড স্লো’ বলে পত্রপাঠ বিদায় করে দেন সুইস তারকা। এর পরের পার্টনারের নাম আনা কুর্নিকোভা। পপস্টার এনরিকে ইগলেসিয়াসের বান্ধবী আনা এবং হিঙ্গিস নিজেরাই নিজেদের ‘স্পাইস গার্লস অব টেনিস’ আখ্যা দিয়ে ফেলেছিলেন। তাই বলে যে তাঁদের সম্পর্ক খুব মসৃণ ছিল, বলা যাবে না। ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ডাবলস চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ওঠার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী সিঙ্গলস ম্যাচ খেলতে নেমেই যা প্রকাশ্যে চলে আসে। একটা লাইন কল নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে হিঙ্গিস চেঁচিয়ে উঠে কুর্নিকোভাকে বলে বসেন, ‘‘তুমি কি ভাবছ তুমি রানি? কারণ ওটা কিন্তু তুমি নও, রানি আমিই!’’ লকাররুমে গিয়েও চেঁচামেচি তো থামেইনি, বরং তাতে যোগ হয়েছিল ফুলদানি ছোড়া!

আনা কুর্নিকোভার পরে মোনিকা সেলেস, সেলেসের পরে সাবিন লিসিকি, লিসিকির পরে ফ্লাভিয়া পেনেত্তা, পেনেত্তার পরে ভেরা জোনারেভা— যত ঘনঘন প্রেমিক পাল্টেছেন হিঙ্গিস, প্রায় সেই গতিতে পাল্টেছে তাঁর কোর্ট-সঙ্গীদের নামও।

এত কিছুর পরেও টেনিস মহল মনে করছে, হিঙ্গিস পাল্টে গিয়েছেন। আগের সেই অহং এখন তাঁর মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। বরং এই হিঙ্গিসের মুখে দেখা যাচ্ছে সদা বিরাজমান হাসি। বিপক্ষ ভলি উইনার হিট করলে হিঙ্গিস এখন হাসতে হাসতে নিজের দিকে আঙুল তুলে বোঝাচ্ছেন, আমার ভুলেই পয়েন্টটা পেলে। তোমার গুণে নয়। প্র্যাকটিস কোর্টে দর্শকরা তাঁর বয়স নিয়ে ঠাট্টা করলেও সে দিকে কান দিচ্ছেন না পঁয়ত্রিশ ছুঁইছুঁই সুইস। লিয়েন্ডারের সঙ্গে বছরে তিন-তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কৃতিত্ব সবার আগে দিচ্ছেন ভারতীয়কে।

সানিয়ার সঙ্গে তাঁর পার্টনারশিপও কম ঈর্ষণীয় নয়। গত মার্চ থেকে একসঙ্গে খেলছেন দু’জনে। এই সাত মাসে পরপর কুড়িটা সেট জিতে এসেছে ইন্ডিয়ান ওয়েলস, মায়ামি ওপেন, চার্লেসটন ফ্যামিলি সার্কল কাপ। তার পরে উইম্বলডনও। ফ্লাশিং মেডোয় দুই ভারতীয়ের সঙ্গে সুইসকে যখনই দেখা গিয়েছে, তাঁদের মুখে হাসি। শরীরী ভাষায় অন্তরঙ্গতা। যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতে হিঙ্গিস বলেও দিয়েছেন, ‘‘লিয়েন্ডার একমাত্র মানুষ যে ছুটির দিনেও আমাকে কোর্টে টেনে নিয়ে যেতে পারে। বৃষ্টি পড়ছে, তবু আমাকে ওর কোর্টে নামানো চাই। আমিও আপত্তি করি না, কারণ জানি এতটা মজা আর কোথাও পাব না!’’

নাভ্রাতিলোভার নামে মেয়ের নাম রেখেছিলেন হিঙ্গিসের টেনিস প্লেয়ার বাবা-মা। নাভ্রাতিলোভার সরণি ছুঁতে পারেননি তো কী, টেনিসের ইতিহাস বইয়ে হিঙ্গিস নিজের জন্য বড়সড় জায়গা ছিনিয়ে নিয়েছেন। আর তাঁর সঙ্গী হিসেবে যদি এ ভাবেই দুই ভারতীয় নতুন শৃঙ্গ ছুঁয়ে চলেন, তাতে আপত্তি কীসের!

spice girl tennis spice girl touchstone martina hingis us open womens doubles martina hingis success
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy