Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Jasprit Bumrah

বুমরা-অ্যান্ডারসনদের সঙ্গে নজর দুই অধিনায়কের কৌশলেও

ইডেনে ভারত বনাম বাংলাদেশের পরে এ বার আমদাবাদে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় দিনরাতের টেস্ট। দর্শক বিনোদনের পাশাপাশি গোলাপি দ্বৈরথ কিন্তু ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তারও পরীক্ষা নেবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:০৮
Share: Save:

যত সময় যাচ্ছে, গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট কিন্তু জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রিকেট ভক্তদের কাছে অন্য রকম আকর্ষণ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে দিনরাতের টেস্ট। আর সব দেশেই তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। টি-টোয়েন্টির রমরমার যুগে যখন টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে, তখন দিনরাতের টেস্ট একটা দারুণ বিকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে। অফিস ফেরার পথেও এখন মাঠে এসে লোকে টেস্ট ম্যাচ দেখতে পাচ্ছে।

ইডেনে ভারত বনাম বাংলাদেশের পরে এ বার আমদাবাদে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় দিনরাতের টেস্ট। দর্শক বিনোদনের পাশাপাশি গোলাপি দ্বৈরথ কিন্তু ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তারও পরীক্ষা নেবে। একদম অন্য রকম ভাবতে হয় দিনরাতের টেস্টে। শুধু দিনের আলোয় কী ভাবে খেলব, তা নিয়ে ভাবলেই চলে না। রাতের কৃত্রিম আলোয় কী ঘটতে চলেছে, সেই চিন্তাটাও করে রাখতে হবে। দিনরাতের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের কাছে সব চেয়ে কঠিন সময় গোধূলি লগ্ন। যখন প্রাকৃতিক আলো থেকে কৃত্রিম আলোয় ঢুকে পড়বে ক্রিকেটারেরা। সেই সময়টায় বল অনেক বেশি নড়াচড়া করতে পারে বলে সকলে জানিয়েছে। এমনকি, চেতেশ্বর পুজারার মতো রক্ষণ জমাট থাকা ব্যাটসম্যানও বলেছে, গোধূলিতে বল বেশি সুইং করে। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, ওই সময়টাতে বল দেখা কঠিন হতে পারে। পুজারার মুখেও একই কথা শোনা গিয়েছে।

ভারতে বেশির ভাগ সময় যে স্পিনের দ্বৈরথ দেখা যায়, তা আমদাবাদে না-ও হতে পারে। বরং এখনও পর্যন্ত যা লক্ষণ দেখা গিয়েছে, স্পিনারদের চেয়ে পেসাররাই দিনরাতের টেস্টে বেশি সাফল্য পায়। এমনকি, ভারতের স্পিন-বন্ধু পিচেও দেখা গিয়েছে, জোরে বোলাররাই বেশি ভয়ঙ্কর হচ্ছে। ভারতে হওয়া একমাত্র গোলাপি বলের টেস্টে ইডেনে বাংলাদেশের সব উইকেট তুলেছিল ভারতীয় পেসাররাই। অশ্বিন আর জাডেজা দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র সাত ওভার বল করেছিল। ওই টেস্টে সব চেয়ে সফল দুই ভারতীয় পেসার ইশান্ত শর্মা এবং উমেশ যাদব এ বারেও থাকছে। ইডেনে ইশান্ত নিয়েছিল ৯ উইকেট, উমেশের ছিল ৮ শিকার। আমার মনে হয়, গোলাপি বলে ইডেনে উমেশের সাফল্যের কথা ভেবেই ওকে দ্রুত ফিট করে তোলার চেষ্টা করেছে কোহালিরা। খুব অবাক হব না যদি বুমরা, ইশান্ত, উমেশকে নিয়ে তিন পেসারে আমাদবাদে নামে ভারতীয় দল। এর সঙ্গে অশ্বিন আর অক্ষর পটেলকে খেলানো উচিত। দু’জনেই ব্যাট করতে পারে বলে পাঁচ ব্যাটসম্যান, ঋষভ পন্থ আর পাঁচ বোলারে খেলতে পারবে ভারত।

তেমনই ইংল্যান্ডও কিন্তু মনে করবে, সিরিজে ফিরে আসার এটাই সেরা সুযোগ ওদের সামনে। চেন্নাইয়ে ঘূর্ণি উইকেটে দ্বিতীয় টেস্ট হারের পরে আমদাবাদের গোলাপি বলের দ্বৈরথে একপেশে ভাবে স্পিনারদের পক্ষে অন্তত যাবে না। ইংল্যান্ডের রোটেশন প্রথা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। জিমি অ্যান্ডারসন তো সারা বছর ধরে সাদা বলের ক্রিকেট খেলে না, আইপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি লিগেও ওকে দেখা যায় না। স্টুয়ার্ট ব্রডও তাই। তা হলে ওদের ভারত সফরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিশ্রাম দিয়ে খেলাতে হবে কেন? চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টে অ্যান্ডারসনের রিভার্স সুইংয়ের সামনে ভেঙে পড়ল ভারতীয় ব্যাটিং। তার পরের টেস্টে ওকে খেলতেই হল না। ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট তো নিজেরাই চাপটা হাল্কা করে দিল ভারতীয় ব্যাটিংয়ের উপর থেকে। মনে হয় না আমদাবাদে ওই সব আজগুবি ব্যাপারস্যাপারের মধ্যে যাবে ইংল্যান্ড। সিরিজ বাঁচানোর লড়াই ওদের। যদি কোথাও পরিবেশ, পরিস্থিতি ওদের সহায়ক হয়, সেটা আমদাবাদের দিনরাতের টেস্টেই। গোলাপি বল তাড়াতাড়ি নরম হয়ে যায়, দ্রুত পালিশও উঠে যেতে পারে। সেই কারণে গোলাপি বলের টেস্টে পিচে ঘাস রাখতে হয়। তার মানে আমদাবাদে ইচ্ছা থাকলেও সম্পূর্ণ ভাবে ঘূর্ণি বা ন্যাড়া পিচ করা সম্ভব হবে না।

আর ইংল্যান্ডের হাতে অ্যান্ডারসন, ব্রড, জফ্রা আর্চারের মতো পেস বোলার রয়েছে। যারা প্রত্যেকেই ভাল সুইং করাতে পারে। গোলাপি বলে সুইং বেশি হয়, এই তথ্য কিন্তু ওদের আশাবাদী করে তুলবে। অ্যাডিলেডে দিনরাতের টেস্টে পাঁচ উইকেট নেওয়ার মতো সাফল্য রয়েছে অ্যান্ডারসনের। ওই টেস্টে কিন্তু গোধূলিতে অ্যান্ডারসনের বল দারুণ সুইং করেছিল।

গোলাপি বল কিন্তু পরীক্ষা নিতে পারে অধিনায়কদের মস্তিষ্কেরও। দিনের বেলায় আক্রমণ না করে নৈশালোকে বল সুইং করতে শুরু করলে আক্রমণ করার কথা ভাবতে হবে। আমরা লাল বলের টেস্টে দেখেছি, শুরুতে পেসাররা বল করছে হয়তো তিন স্লিপ, দুই গালি নিয়ে। গোলাপি বলে অন্য রকম ভাবে রণনীতি সাজাতে হতে পারে। নৈশালোকে যখন বল সুইং করতে শুরু করবে, তখন আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজাতে হবে।

এই টেস্টে ভারতকে কিছুতেই হারলে চলবে না। টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের যোগ্যতামান অর্জন করতে হলে এই সিরিজ অন্তত ২-১ জিততে হবে কোহালিদের। তার মানে বাকি থাকা দু’টি টেস্টের একটি ড্র হলে অসুবিধা নেই কিন্তু হারলে চলবে না। ইংল্যান্ডের তেমনই বাকি দু’টি টেস্টই জিততে হবে ফাইনাল খেলতে গেলে। আর ভারত বা ইংল্যান্ড না পারলে সুবিধা হয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ার।

এটাও জো রুটরা মাথায় রাখার চেষ্টা করবে যে, অ্যাডিলেডে গোলাপি বলের টেস্টে ভারত ৩৬ অলআউট হয়ে গিয়েছিল। তার পরে দারুণ প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে রাহানেরা ঠিকই কিন্তু নতুন করে গোলাপি বলের পরীক্ষাটাও দিতে হবে আমদাবাদে। আর যাই হোক চেন্নাইয়ের মতো একবগ্গা ঘূর্ণি ক্রিকেট হবে না আমদাবাদে। বরং দুর্দান্ত পেস-প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যেতে পারে। ভারতের বুমরা-ইশান্ত-উমেশ। ইংল্যান্ডের অ্যান্ডারসন-ব্রড-আর্চার। গোলাপি দ্বৈরথ দেখার
তর সইছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India England Jasprit Bumrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE