যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মাওবাদী নেতাদের নামে দেওয়াল লিখন, স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ। গত ২৪ নভেম্বরের ঘটনায় এ বার একটি ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
চলতি বছর মে মাসে ছত্তীসগঢ়ের জঙ্গলে নিহত হন মাওবাদী নেতা নামবালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু। তাঁর নামেই দেওয়াল লিখন হয়েছে যাদবপুরের অন্দরে। রেভেলিউশানারি স্টুডেন্টস ফ্রন্ট (আরএসএফ)-এর তরফে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল বলে খবর। তার পরই ওই সংগঠনকে বাতিল করার দাবি উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে।
আরও পড়ুন:
সোমবার টিএমসিপি তরফে উপাচার্যের কাছে দরবার করা হয়। দাবি, ওই ছাত্র সংগঠনকে বাতিল করতে হবে, কোনও সেমিনার হল ব্যবহারের অনুমতি যেন তাদের না দেওয়া হয়— তা-ও নিশ্চিত করার দাবি করেছেন ছাত্ররা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক তীর্থরাজ বর্ধন বলেন, “ক্যাম্পাসের মধ্যে যে সমাজবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী কার্যকলাপ হচ্ছে, এর দায়ে স্বীকার করে কর্তৃপক্ষকে আরএসএফ নামক সংগঠনকে বাতিল করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনও সেমিনার হলে সভা করার অনুমতিও যেন এরা না পায়।”
যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টিকে আইনের হাতেই ছাড়তে চাইছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “দেওয়াল লিখনের কথা শুনেছি। তবে দেশের আইন অনুযায়ী রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। আমরা সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে ডেকে সতর্ক করতে পারি। তবে তা হবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে।”
দেওয়াল লিখনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন আরএসএফ ছাত্র সংগঠনের নেতা অভিনব দাস। তিনি বলেন, “যাঁদের জন্য দেওয়াল লিখন, তাঁরা ভারতের সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে লড়েছিলেন। আমরা তাঁদের লড়াইকে সঠিক বলে মনে করি। তাঁদের উপর হওয়া দমনপীড়নের বিরোধিতা করি।” অভিনবের দাবি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বিষয়টিকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। পাশপাশি তিনি সাফ জানিয়েছেন, টিএমসিপির চাপে দেওয়াল লিখন মুছে ফেলা হলে তাঁরা ফের প্রতিবাদ জানাবেন।
এসএফআই-ও অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে দেওয়াল লিখনের বিরোধিতা করেছে। তাঁরা এই মতাদর্শে বিশ্বাসী নয় বলেই জানিয়েছেন নেতারা। এসএফআই নেতা অভিনব বসু বলেন, “মাওবাদ বলে যা কিছু দেশে চলছে, তার সঙ্গে মাও সে তুঙ্গের বক্তব্যের কোনও সামঞ্জস্য নেই। কিন্তু মাওবাদীদের উপর বিচার বহির্ভূত আক্রমণ ও মাওবাদী সন্দেহে বামপন্থীদের গ্রেফতারির মতো ঘটনা বিজেপি ও তার দোসর তৃণমূল সরকার ঘটিয়ে চলেছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে দেওয়ালে আজাদ কাশ্মীর লেখা নিয়ে নানান বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সে বার অবশ্য কোনও সংগঠন তার তাই স্বীকার করেনি। পরে বিতর্কের মুখে তারা সেই দেওয়াল লিখন মুছে ফেলে।