ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট শেষ হওয়ার দু’দিন পরে এই কপিটা যখন লিখছি তখনও ম্যাঞ্চেস্টারের হোটেলে আমার ঘরের জানালা দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি পড়া দেখছি। যে বৃষ্টিতে গত প্রায় আটচল্লিশ ঘণ্টা শহরটা কার্যত স্তব্ধ। ন্যাশনাল টিভি-তে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড গ্রাউন্ডে কী পরিমাণ জল জমেছে তার ছবিও দেখাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই অবস্থায় টেস্টের তৃতীয় দিনের পর আর একটা বলও খেলা সম্ভব হত না। কিন্তু সে সব এখন ইতিহাস। আমার ঠিক পাশেরটাই ভারতীয়দের টিম হোটেল। ভারতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই নিশ্চয়ই হোটেলের ঘরে বসে ভাবার চেষ্টা করবে এই টেস্টে ওদের কী ভয়াবহ সময় গিয়েছে! ওরা নিশ্চয়ই একমত হবে এবং আমি নিশ্চিত এটা ওদের কষ্ট দেবে যে, মাত্র আড়াই দিনে ভারত টেস্ট ম্যাচটা হেরেছে! এবং সেটা যে এই প্রথম বার ঘটল তাও না। বার্মিংহ্যামে ২০১১-এ ঘটেছিল। সে বছরই পার্থে ঘটেছিল। ব্যাপারটা অবশ্যই ভারতীয় দল আর কোচের কাছে বিরাট চিন্তার।
ভারতকে সত্যিই নিজেদের দিকে কঠিন ভাবে তাকানো দরকার, বিশেষ করে ২০১১ থেকে বিদেশের মাঠে ওদের যে রকম বিশ্রী পারফরম্যান্স চলছে! দলের নিম্নগামী পারফরম্যান্সের সমাধান ওদের খুঁজে বার করতেই হবে এবং সেটাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দুর্দান্ত টেস্ট উইকেট ছিল। টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে ভারত ঠিকই করেছে। কারণ টেস্ট জেতার ওটাই রাস্তা। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে, চতুর্থ টেস্টের গোড়ার দিকে পিচ যতই প্রাণবন্ত থাকুক না কেন, তার সঙ্গে লর্ডসের পিচের সিম মুভমেন্টের কোনও তুলনাই হয় না। এবং এ রকম পিচে চতুর্থ ইনিংস খেলার চাপ নেওয়ার থেকে শুরুতেই সেটা সামলানো ভাল। ভাবলে আরও কষ্ট লাগবে যে, লর্ডসে ভারতকে অত দুর্দান্ত দেখানোর পর তুলনায় কম প্রাণবন্ত পিচে ওরা ধসে গেল। তা-ও মাত্র দু’জন স্ট্রাইক বোলারঅ্যান্ডারসন-ব্রডের সামনে!
এখানেই মইন আলি-প্রশ্ন উঠবে। যে কিনা এত বেশি উইকেট এই সিরিজে পেয়েছে, যাতে হয়তো ও নিজেই অবাক! তবে আমার মতে একজন ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তুমি যদি যে পিচ বেশি টার্ন করছে না সেখানেও স্পিনারকে উইকেট দিয়ে আসো, তা হলে সেটা আত্মহত্যার সামিল। ২০১১-এ গ্রেম সোয়ান ১৩ উইকেট পেয়েছিল। মইনের ঝুলিতে এখনই ১৯ উইকেট। ভারতীয়রা মইনকে খেলার দু’টো চূড়ান্ত পথ নিয়েছে। যেটা ওদের বিভ্রান্ত মানসিকতার জ্বলন্ত উদাহরণ। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা হয় মইনকে প্রচণ্ড আক্রমণ করছে, নয়তো একেবারে গুটিয়ে গিয়ে ডিফেন্স করছে। বলের গুণমান দেখে খেলার বেসিক নিয়মটার যেখানে অস্তিত্বই নেই!
ভারত তা হলে সিরিজের এই অবস্থায় শেষ টেস্টে কী করবে? ওভালে ম্যাচ শুরু হতে আর চার দিন। ভারতীয় দলের প্রত্যেকের সময় এসেছে নিজের দিকে খুব ভাল ভাবে তাকানোর। গত চারটে টেস্টে ওরা নেটে দলগত ভাবে প্রচুর পরিশ্রম করেছে। কিন্তু এখন সময় অন্যদের থেকে সরে এসে নিজে-নিজে ভাবার। নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলা যে, এখান থেকে আরও ভাল করার জন্য আমি ঠিক কী করতে পারি! একা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মানসিকতা ঠিক করো। দলে প্রচুর সাপোর্ট স্টাফ, কোচ হয়তো আছে। কিন্তু প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, ক্রিকেট অনেকটাই ব্যক্তিগত স্পোর্ট। মাঠে একটা দল নামলেও সেখানে প্রত্যেককে ব্যক্তিগত ভাবে ভাল করতে হয় সেই দলকে জেতাতে।
ভারতের ব্যাটিং আপাতত বিরাট চিন্তার বিষয়। বিদেশে ভারত যখনই জিতেছে বা সেরা সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, ব্যাটিং ইউনিট বোর্ডে ধারাবাহিক ভাবে পাঁচশো রান তুলেছে। গ্রেট অনিল কুম্বলে, যে ভারতের বোলিং আক্রমণকে দীর্ঘ দিন ধরে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়েছে, দলের ব্যাটসম্যানদের বলত, তোমরা আমাকে রান দাও, আমি তোমাদের টেস্ট জেতাব। ভারতের দুর্দান্ত ব্যাটিং শক্তির সুনামে যে কালি লেগেছে সেটা মুছে ফেলার জন্য কোহলি, পূজারা, গম্ভীরদের এখন দারুণ ভাবে উঠে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
কুককে তিন হুঁশিয়ারি বয়কটের
• অ্যান্ডারসন-ব্রড দুর্দান্ত করছে। কিন্তু একজনের চোট। অন্য জনও চোট পেলে কী হবে? ওদের ব্যাক-আপ পেসার নেই। জর্ডান বা ওকস আদৌ নজর কাড়েনি।
• ওপেনার রবসনের ফর্ম জঘন্য। কোহলির মতোই অফস্টাম্পের বাইরে কোনটা ছাড়বে, কোনটা খেলবে ধারণা নেই। ওকে ওভালেও খেলানো বিপজ্জনক।
• ইংল্যান্ড ব্যাটিংও কিন্তু শর্ট বলের বিরুদ্ধে দ্বিধাগ্রস্ত। ব্রডের নাক ভাঙা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। এমনকী তার আগের দুটো শর্ট বলে ও ছয় মারলেও দু’বারই টাইমিং ঠিক ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy