চুনি গোস্বামী
চুনীর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল দাদা-ভাইয়ের। আমার থেকে আট বছরের ছোট ছিল ও। তাই বৃহস্পতিবার বিকেলে চুনীর প্রয়াণের খবরটা শুনে বিশ্বাস হচ্ছিল না। এ রকম তো হওয়ার কথা ছিল না। মাসখানেক আগে প্রদীপ (পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়) চলে গেল। এ বার চুনী। এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না।
আমার নব্বই বছরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চুনীকে নিমন্ত্রণ করার জন্য ফোন করেছিলাম। কিন্তু অসুস্থতার জন্য খুব বেশি কথা হয়নি সে দিন হয়নি। তবে ওর স্ত্রীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। বলেছিল, শরীর ঠিক থাকলে চুনী আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেনি। তবে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠিয়েছিল। ভেবেছিলাম, কয়েক দিন পরেই সুস্থ হয়ে যাবে। আবার আমরা একসঙ্গে গল্প করব।
অবিশ্বাস্য প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিল চুনী। ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস— সব খেলাতেই সমান দক্ষ। এ রকম বহুমুখী প্রতিভা খুব কম ক্রীড়াবিদেরই রয়েছে। চুনী ছিল টোট্যাল ফুটবলার। দু’পায়েই অসাধারণ আউডসাইড ডজ ছিল। সঙ্গে দুরন্ত গতি। ফলে ওর খেলা ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। মনে পড়ে যাচ্ছে কলকাতা লিগে এরিয়ানের বিরুদ্ধে ম্যাচের একটা কথা। ফল তখন ৩-৩। এই ম্যাচের উপরেই আমাদের লিগ-ভাগ্য নির্ভর করছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যে কোনও মূল্যে জিততেই হবে। এদিকে খেলা প্রায় শেষের দিকে। সবাইকে ডেকে বললাম, তোরা আমাকে শুধু বল দিয়ে যা। গোল আমি করবই। চুনী মন দিয়ে শুনল। শেষ পর্যন্ত ওর পাস থেকেই গোল করে মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলাম। অবিশ্বাস্য ম্যাচ ছিল।
বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও চুনীর সঙ্গে আমার দুর্দান্ত বোঝাপড়া ছিল মাঠে ও মাঠের বাইরে। মনে আছে, ইন্দোনেশিয়ায় একটি লেকে আমরা ওয়াটার স্কি করেছিলাম। একসঙ্গে চিলকা ঘুরতে গিয়েছি। তবে ১৯৮৬ মেক্সিকোয় বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে চুনী আমার উপরে একটু রেগে যায়। রাজ্য সরকার প্রাক্তন ফুটবলারদের বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে পাঠিয়েছিল। আমি ও চুনী সপরিবার গিয়েছিলাম। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দিয়েগো মারাদোনার সেই হাত দিয়ে গোল করা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রচণ্ড তর্ক হয় ম্যাচের পরে। সকলেই বলেছিল, মারাদোনা হেডে গোল করেছে। আমিই বলেছিলাম, হাত দিয়ে গোল করার কথা। চুনী অসন্তুষ্ট হয়েছিল আমার উপরে। পরে যখন প্রমাণিত হল মারাদোনা হাত দিয়েই গোল করেছিলেন, চুনী ভুল স্বীকার করে।
আরও পড়ুন: ড্রিবলিংয়ে রাজা, ছিল টটেনহ্যাম থেকে ডাক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy