Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
চুনী গোস্বামী: ১৯৩৮-২০২০
Chuni Goswami

ড্রিবলিংয়ে রাজা, ছিল টটেনহ্যাম থেকে ডাক

১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম। মাত্র ন’বছর বয়সে যোগ দেন মোহনবাগান জুনিয়র টিমে। আজীবন মোহনবাগানেই থেকে গিয়েছেন।

ইন্দ্রপতন: চুনী গোস্বামীর প্রয়াণে ক্রীড়াজগতে শোকের ছায়া। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রপতন: চুনী গোস্বামীর প্রয়াণে ক্রীড়াজগতে শোকের ছায়া। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০৪:১৭
Share: Save:

সুবিমল ‘চুনী’ গোস্বামী। ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে এমন ‘অলরাউন্ডার’ সম্ভবত আর পাওয়া যাবে না। দেশের ইতিহাসে সম্ভবত সেরা ফরোয়ার্ড, সীমিত দক্ষতা নিয়েও ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল এক ক্রিকেটার। নমুনা? ১৯৬২-তে তিনি তখন হায়দরাবাদে। একই সঙ্গে আইএফএ এবং সিএবি থেকে টেলিগ্রাম পেলেন। দু’টি রাজ্য দলেই তিনি সুযোগ পেয়েছেন। যোগ দিতে হবে। শুনলে অনেকে অবাক হয়ে যেতে পারেন, তিনি ক্রিকেট দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। বহুমুখী প্রতিভাই বটে!

১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম। মাত্র ন’বছর বয়সে যোগ দেন মোহনবাগান জুনিয়র টিমে। আজীবন মোহনবাগানেই থেকে গিয়েছেন। শোনা যায়, জে সি গুহ ইস্টবেঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ষাটের দশকে বাজারে ঝড় তোলা ফিয়াট গাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। তাতেও ‘সবুজ-মেরুন ঘর’ থেকে ভাঙানো যায়নি চুনীকে। শোনা যায়, প্রথম মোহনবাগান জার্সি গায়ে ওঠে ভাগ্যের জোরে। অন্য দু’জন অনুপস্থিত থাকায় তিনি জার্সি পান। চুনী খেলতে শুরু করলেন ইনসাইড-লেফ্‌ট হিসেবে এবং শুরু হল এক অবিশ্বাস্য যাত্রা।

মোহনবাগান টানা তিন বার ডুরান্ড কাপ জেতে তাঁর নেতৃত্বে। এক বার সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন মোহনবাগান বনাম পঞ্জাব পুলিশের ডুরান্ড ফাইনালে বিশেষ অতিথি হয়ে এসে দেখলেন চুনী ওয়ার্ম-আপ করছেন। রাষ্ট্রপতি বলে উঠলেন, ‘‘ওহ‌, আবার চুনী! ফাইনাল খেলাটা তো দেখছি তুমি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছ।’’ পনেরো বছর মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন। ছ’টি ডুরান্ড এবং দশ বার কলকাতা লিগ জয়ী দলের সদস্য তিনি। ১৯৫৫-য় সন্তোষ ট্রফিতে মহীশূরের বিরুদ্ধে বাংলার হয়ে জয়সূচক গোল করেন পি কে। সেই গোলটি ছিল চুনীর থ্রু পাস থেকে। বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে পিকে-চুনী-বলরাম সেরা তিন রত্ন। ত্রয়ীর দু’জন চলে গেলেন খুব কাছাকাছি সময়ে।

১৯৫৬ অলিম্পিক্সে উপেক্ষিত হলেও দ্রুতই টোকিয়ো এশিয়ান গেমসে দলে জায়গা করে নেন। তার পরে আর কেউ তাঁর ফুটবল দক্ষতা অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস দেখায়নি। জাকার্তায় ১৯৬২ এশিয়ান গেমসে ভারতীয় ফুটবল দল সোনা জেতে তাঁরই নেতৃত্বে। সম্ভবত চুনীর ফুটবলজীবনে সেরা প্রাপ্তি। ১৯৬৪ এশিয়ান কাপ এবং মারডেকা টুর্নামেন্টে রানার্স দলের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি।

তাঁর দুর্ধর্ষ গতি এবং ড্রিবলিংয়ের সামনে নতজানু হতে দেখা গিয়েছে অনেক বাঘা বাঘা ডিফেন্ডারকে। সঙ্গে দুরন্ত ট্র্যাপিং, সুচতুর পাসিং। কেউ কেউ মনে করেন, সেই সময়ে চুনীর ড্রিবলিং ছিল ব্রাজিলীয় কিংবদন্তিদের সঙ্গে তুলনীয়। যাঁরা তর্ক জুড়তে পারেন, তাঁদের জন্য একটি তথ্য— নিজের সেরা সময়ে ইংল্যান্ডের টটেনহ্যাম হটস্পারের থেকে ট্রেনিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন চুনী। সেই সময়ে টটেনহ্যাম ছিল লন্ডনের সেরা দল এবং তাদের ম্যানেজার ছিলেন কিংবদন্তি বিল নিকোলসন। যে-কোনও কারণেই হোক, ঐতিহাসিক ক্লাবে যোগ দেওয়া হয়নি চুনীর। পরে এ নিয়ে তাঁকে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে। বলতেন, টটেনহ্যামের প্রস্তাবকে গুরুত্বই দেননি।

ভারতীয় ফুটবলের ‘গ্ল্যামার বয়’ ছিলেন চুনী। সব সময় নিজেকে সুসজ্জিত রাখতে পছন্দ করতেন। সাউথ ক্লাবে এখনকার দিনে খেললে নিঃসন্দেহে খেলার দুনিয়ায় লগ্নিকারীদের বিশেষ নজরে থাকতেন। উত্তমকুমার, হেমন্ত, এস ডি বর্মণ থেকে শুরু করে দিলীপকুমার, প্রাণের মতো তারকারা তাঁর ফুটবলের ভক্ত ছিলেন এবং তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কও ছিল। তবে ফুটবলেরও আগে বা‌ংলার হয়ে ক্রিকেট খেলেন তিনি। ১৯৫২-৫৩ মরসুমে স্কুল ক্রিকেটে।

যদিও চুনীর খেলোয়াড় জীবন তাতে শেষ হয়নি। ঠিক করেন, এ বার আরও বেশি করে ক্রিকেটে মন দেবেন। ১৯৬৬-তে গ্যারি সোবার্সের বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে হারানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। ১৯৭১-৭২ মরসুমে তাঁর নেতৃত্বে বাংলা রঞ্জি ফাইনালে উঠে হেরে যায় মুম্বইয়ের কাছে। তত দিনে ইডেন দেখে নিয়েছে দুঃসাহসিক চুনীকে। হায়দরাবাদের হয়ে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার রয় গিলক্রিস্টকে সামলানোর পরীক্ষা দিতে হয় হেলমেটহীন অবস্থায়। গিলক্রিস্টের খুনে মেজাজ এবং যথেচ্ছ বাউন্সার-বিমার ব্যবহারের জন্য যে ম্যাচ কুখ্যাত হয়ে রয়েছে। পঙ্কজ রায়কে বিমার ছুড়ে মারতে গিয়েছিলেন গিলক্রিস্ট। ছয় নম্বরে নেমে ৪১ রান করে ফলো-অন বাঁচান চুনী।

তিনি চলে গেলেও অমর হয়ে থাকবে ভয়ডরহীন সেই লড়াই!

আরও পড়ুন: প্রয়াত চুনী, স্তব্ধ ভাইচু‌ংরা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chuni Goswami Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE