Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

রেফারির দিকেই আঙুল তুললেন হতাশ সুব্রত

ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই যুবভারতী থেকে উধাও হয়ে গেলেন সুব্রত ভট্টাচার্য! বাবলু তো পালাতে জানেন না! বুক চিতিয়ে লড়াই করাটাই তো তাঁর সেরা ইউএসপি! ফোনও সুইচড অফ! কোথায় গেলেন তিনি? ইতিহাস ছুঁতে না পারার যন্ত্রণাতেই কি উধাও হয়ে গেলেন টলি টিডি? টালিগঞ্জ অগ্রগামীর কর্তারা তাঁকে খুঁজে চলেছেন। কিন্তু স্টেডিয়ামের কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। এক কর্মী বললেন, “বাবলুদাকে তো বেরিয়ে যেতে দেখলাম গাড়ি করে।”

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১০
Share: Save:

ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই যুবভারতী থেকে উধাও হয়ে গেলেন সুব্রত ভট্টাচার্য!

বাবলু তো পালাতে জানেন না! বুক চিতিয়ে লড়াই করাটাই তো তাঁর সেরা ইউএসপি! ফোনও সুইচড অফ! কোথায় গেলেন তিনি? ইতিহাস ছুঁতে না পারার যন্ত্রণাতেই কি উধাও হয়ে গেলেন টলি টিডি?

টালিগঞ্জ অগ্রগামীর কর্তারা তাঁকে খুঁজে চলেছেন। কিন্তু স্টেডিয়ামের কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। এক কর্মী বললেন, “বাবলুদাকে তো বেরিয়ে যেতে দেখলাম গাড়ি করে।”

ম্যাচ শেষ হওয়ার পর গটগট করে হেঁটেই ড্রেসিংরুমে এসেছিলেন সুব্রত। কিছুটা বিভ্রান্ত, হতাশ। দরজায় তালা দেখে চাবির খোঁজ করতে গিয়েছিলেন। তার পর হঠাৎ রুট বদল করে অন্যদিকে। কাউকে কিছু না বলেই যুবভারতী ছেড়ে বাড়ির পথে। বেরোনোর সময় এত তাড়াহুড়ো করলেন যে এক ইস্টবেঙ্গল কর্তার সঙ্গে ধাক্কাও লেগে গেল তাঁর। সেই কর্তার মোবাইলও ছিটকে পড়ে যায় ‘সংঘর্ষে’। স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়েই নিজের ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

অনেক রাতে যখন সুব্রতকে ফোনে পাওয়া গেল, একরাশ হতাশা আর ক্লান্তি ঝরে পড়ছিল গলায়। পরিচিত সেই কন্ঠস্বর কোথায়? সেই প্রতিবাদী, সব কিছুতেই ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব? বাবলুর সঙ্গে কথা বলে মনে হল একেবারে ভেঙে পড়েছেন। খুব ঠান্ডা গলায় বললেন, “নতুন করে কী আর বলব! কিছুই বলার নেই। আমি হতাশ। এত মিস!”

বুধবার আর্মান্দোর টিমকে টালিগঞ্জ যদি হারাতো তা হলে প্রবাদপ্রতিম কোচ বাঘা সোমকে ছুঁয়ে ফেলতেন সুব্রত। যিনি ১৯৫৮-তে ইস্টার্ন রেলের কোচ ছিলেন। তাঁর কোচিংয়েই তো শেষ বার কোনও ছোট ক্লাব কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

২০০৯-এর ইউনাইটেড স্পোর্টসের পুনরাবৃত্তি আবার। সে বারও তো টিডি ছিলেন সুব্রত। তিরে এসে তরি ডুবেছিল। অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল কলকাতা লিগ। মোহনবাগানের কাছে সে বার হেরে গিয়েছিল ইউনাইটেড। এ বার তাঁর দল টালিগঞ্জ হারল ইস্টবেঙ্গলের কাছে। কেন বারবার খেতাব জয়ের কাছে পৌঁছেও পিকে-দিনু দাসদের ইতিহাস ছুঁতে পারছেন না? ফোনের ও পারে একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। “এর উত্তর সবচেয়ে ভাল আই এফ এ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়ই দিতে পারবেন। রেফারি ওটা পেনাল্টি দেবে না? ওটা দিলেই খেলা অন্য রকম হয়। সবাই তো দেখেছেন ওটা পেনাল্টি ছিল। আর কিছু বলতে ভাল লাগছে না। প্লিজ ছেড়ে দিন।”

র্যান্টি-ডুডুদের ড্রেসিংরুমে যখন উৎসবের মেজাজ, তখন ঠিক উল্টো দিকের টালিগঞ্জ ড্রেসিংরুমে কোকো বিদেমিরা মাথা নিচু করে বসে। টিডি বাড়ি চলে গিয়েছেন। আর কর্তারা মাঝে মাঝে রেফারির উপর যাবতীয় রাগ উগরে দিচ্ছেন। ইস্টবেঙ্গলের বক্সে ডুডুর হাতে বল লেগেছিল বলে আবেদন জানিয়েছিলেন ড্যানিয়েল। রেফারি প্রবীর ধর ‘হ্যান্ডবল’ তো দেননি। উল্টে টালিগঞ্জের ড্যানিয়েলকেই হলুদ কার্ড দেখতে হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আইএফএ-কে চিঠি দিচ্ছেন টালিগঞ্জ কর্তারা।

যাঁরা এ দিন নায়ক হতে পারতেন। বাংলার ফুটবল ইতিহাসে নাম তুলতে পারতেন, সেই বেলো, সৈকত, সুরাবুদ্দিনরা এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে অনেকেই বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়াও করেননি। বারবার টালিগঞ্জের দুই বিদেশি বেলো আর বিদেমি বলছিলেন, “ভাবিনি ম্যাচটা হেরে যাব। আমাদের ভুল তো আছেই। গোল দু’টো বাজে খেয়ে গেলাম। ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে আমরা অনেক ভাল খেলেছি। কিন্তু জিততে পারলাম না।”

এ সবের মধ্যেই অবশ্য টালিগঞ্জ শিবিরে চলল একে অপরকে দোষারোপ করার পালা। দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা কোকো ঘুরিয়ে দায়ী করলেন টিডিকেই। বলে দিলেন, “আমাকে আগে থেকে নামালে স্কোরলাইনটা হয়তো উল্টে যেত।” এরই মধ্যে কর্তারাও নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু করে দেন।

লিগ হাতছাড়া করার আফসোসের মাঝেই বেলো-কোকোরা আই লিগে খেলার জন্য ক্লাবের খোঁজ খবর নিতে শুরু করে দিলেন। আর টালিগঞ্জের বাকি ফুটবলাররা এ বার পাখির চোখ করেছেন সিকিম গোল্ড কাপকে।

ম্যাচ শেষে বিমর্ষ সুব্রতর ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE