Advertisement
E-Paper

এবির ল্যাপ শট আর রিভার্স সুইপে ছয় নেটে তুলছেন সূর্য

পুণেতে দেখা হলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে কী বলবেন, ভেবে রেখেছেন সূর্যকুমার যাদব। লোকে তাঁকে এখন ‘ম্যাক্সওয়েলের ভারতীয় উত্তর’ বলছে ঠিকই। কিন্তু কেকেআর ভাইস ক্যাপ্টেন পুরনো বন্ধুর জন্য পুরনো চুটকিটাই ছাড়বেন বলে ঠিক করে রেখেছেন। ‘ওয়াচ আউট ফর দ্য ফায়ারওয়ার্কস। দেয়ার ইজ সামথিং ইন স্টোর ফর ইউ!’

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১১
শহরের একটি অনুষ্ঠানে সূর্যকুমার। রবিবার। ছবি: টুইটার।

শহরের একটি অনুষ্ঠানে সূর্যকুমার। রবিবার। ছবি: টুইটার।

পুণেতে দেখা হলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে কী বলবেন, ভেবে রেখেছেন সূর্যকুমার যাদব। লোকে তাঁকে এখন ‘ম্যাক্সওয়েলের ভারতীয় উত্তর’ বলছে ঠিকই। কিন্তু কেকেআর ভাইস ক্যাপ্টেন পুরনো বন্ধুর জন্য পুরনো চুটকিটাই ছাড়বেন বলে ঠিক করে রেখেছেন।

‘ওয়াচ আউট ফর দ্য ফায়ারওয়ার্কস। দেয়ার ইজ সামথিং ইন স্টোর ফর ইউ!’

মিস্টার ম্যাক্সওয়েল, রানের আতসবাজির জন্য তৈরি থাকো। তোমার জন্য আমি বিশেষ কিছুর বন্দোবস্ত করেছি।

ম্যাড ম্যাক্স আর স্কাইয়ের সম্পর্ক বেশ পুরনো। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যখন ম্যাক্সওয়েল ছিলেন, সূর্যও সেখানে। দেখা হলেই দু’বন্ধুতে এটা চলে। বন্ধুর নাম এখনও শুনলে, বন্ধুর সঙ্গে তুলনা হচ্ছে কানে এলে সূর্য প্রগলভ হয়ে পড়েন। বলে ফেলেন, ‘‘কত অসাধারণ মুহূর্ত কাটিয়েছি ওর সঙ্গে।’’ মুশকিল হল ম্যাক্সের বোধহয় জানা নেই, পুরনো বন্ধুর নতুন শস্ত্রগুরু এখন কে। জানলে দুশ্চিন্তা অবশ্যম্ভাবী।

আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডে’ভিলিয়ার্সকে কে না ভয় পায়!

‘‘সার্বিক ভাবে যদি আমাকে ক্রিকেট গুরুর কথা জিজ্ঞেস করেন, বলব রিকি পন্টিং। হ্যান্ড আই কোঅর্ডিনেশনে বীরেন্দ্র সহবাগ। আর টি-টোয়েন্টি হলে এবি ডে’ভিলিয়ার্স। কী প্লেয়ার!’’ রবিবার টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে বলছিলেন কেকেআরের সূর্য। ‘‘ওর কয়েকটা শট তোলা শুরু করে দিয়েছি। প্রবল খাটছি ওগুলো নিখুঁত করতে। যেমন ধরুন যে ল্যাপ শটটা ও খেলে বা রিভার্স সুইপে যে ছয়টা মারে। ও সব শট মারতে গেলে আউট তো হতে পারেনই, ভুলচুক হলে জীবন সমস্যাও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ঠিকঠাক মারতে পারলে ব্যাপারটাই অন্য রকম দাঁড়াবে,’’ যে মনোযোগের সঙ্গে বলছিলেন, শুনলে মনে হবে শুধু মাঠের নয়, মনের নেটেও তাঁর অবিরাম অনুশীলন চলছে!

তবে বিষয় যদি হয় ‘ইম্প্রোভাইজেশন’, তা হলে সূর্যের প্রভাবও অধুনা টি-টোয়েন্টি জগতে খুব কম নয়। অফের বলকে ফাইন লেগের উপর দিয়ে ফেলে দেওয়া এখন তাঁর মোটামুটি ট্রেডমার্ক শট। পেসার-স্পিনার নির্বিশেষে যেটা ক্রমাগত উড়ে যায়। মারেন কী করে ওটা? সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘ইন্সটিংক্ট। ওটা শুধু টি-টোয়েন্টিতেই আসে।’’ কিন্তু এল কী ভাবে? কেউ দেখিয়ে দিয়েছিল? নাকি এখানেও এবি? ‘‘আরে, না না। এটা পুরো আমার। আর কেউ দেখায়নি। ওয়াংখেড়েতে প্র্যাকটিসের সময় একদিন মেরে দিলাম। যারা দেখল, চিৎকার করে উঠল। বলল, এটা কী করলে? ব্যাট সোজা রেখে এটা তো অবিশ্বাস্য। ব্যস, আত্মবিশ্বাসটা পেয়ে গেলাম। এখন এমনিই বেরোয়।’’

পাঁচ দিনও হয়নি টিমের সহ-অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, জাক কালিস গত বছর পর্যন্ত যে ভূমিকাটা নিতেন নাইট সংসারে, সেটা এখন তাঁর চব্বিশ বছরের কাঁধে। কিন্তু সূর্যকে দেখলে মনে হবে না, গুরুদায়িত্বে জীবন মারাত্মক পাল্টেছে বলে। কচিকাঁচাদের সঙ্গে সেলফি এখনও তোলেন অকাতরে। কাউকে আবার নিজের নামটাও সঙ্গে বলে বোঝান ছবিটা কার সঙ্গে উঠছে! সাক্ষাৎকার দিতে বসে সাংবাদিকদের রেকর্ডার হাতে ধরে থাকেন। এবং ক্যাপ্টেন গম্ভীরের থেকে ‘এখন থেকে তুমি ভাইস ক্যাপ্টেন’ শুনেও মনে খুব প্রভাব পড়ে না!

‘‘না, শক্ড হইনি। বরং ওই মুহূর্ত থেকে নিজেকে আরও বড় দায়িত্বের জন্য তৈরি করা শুরু করে দিয়েছিলাম,’’ বলে দেন সূর্য। ‘‘টিমে কত বড় বড় প্লেয়ার। রবিন, ইউসুফ, সাকিব। কাউকে না কাউকে দায়িত্বটা নিতে হত। টিম আমাকে বাছল। সবচেয়ে ভাল কী জানেন? ওটা এল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে। ডাবল চার্জড হয়ে গিয়েছিলাম,’’ শুনলে বোঝা যায় মুম্বই সংসারের ক্ষত আজও যায়নি। মুম্বই এখনও তাঁর কাছে ‘বড়’ টিম। যেখানে মহাতারকাদের প্রাধান্য দেওয়া হত তাঁর মতো স্থানীয়র বদলে। কেকেআর সেখানে ‘টিম অব অপরচুনিটিজ’। সুযোগের টিম। সুযোগ সদ্ব্যবহারের টিম। ‘‘আসলে এখানে টোয়েন্টি ফোর সেভেন কেউ না কেউ নজরে রাখবে। বিশ্বাস রাখবে। কালিসের জায়গায় আমি, ভাবুন তো। ওর জায়গায় ব্যাট করতে যাব। কিন্তু টিম এতটাই ভরসা করছে যে, মনে হচ্ছে চেষ্টা করলে পেরে যাব,’’ বলে একটু থেমে আবার সংযোজন, ‘‘আমাদের বসকে দেখুন। উনি তো ইডেনে সে দিন আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ঢুকে সিনিয়র, জুনিয়র থেকে সাপোর্ট স্টাফ সবাইকে জড়িয়ে ধরছিলেন। এটাই হচ্ছে কেকেআর। যেখানে বস থেকে একদম জুনিয়র ছেলেটা, সবাই নিজেকে টিমের অংশ ভাবে।’’

যে টিমের কাছে ইডেনের গেইল-বৈশাখী স্রেফ ‘একটা হার’ বলে মনে হয়। দেখা হয়, ‘প্রসেস’টা ঠিকঠাক এগোচ্ছে কি না। সূর্য বলেও দিলেন, ‘‘ওটা আমরা মাঠেই ফেলে এসেছি।’’ তাঁর যুক্তি, গেইল একা ম্যাচটা নিয়ে গিয়েছেন। কলকাতা খারাপ খেলেনি। তাঁর এটাও মনে হয়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট তাঁকে যতই বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করুক, নাচানাচির কোনও কারণ নেই। বিশ্বাস করেন টিমের দর্শনে, যা এখন নিজেরও।

সূর্যকুমার যাদব অক্লেশে বলে দিতে পারেন, ভারতীয় ম্যাক্সওয়েল হয়ে তাঁর লাভ নেই। ও নিয়ে ভাবলে আসলটা যাবে। ব্যাটিংটা যাবে!

সাকিবহীন কেকেআরে বদলি খোঁজা শুরু

দশে দশের রেকর্ড আর এগোয়নি। ঘরের মাঠে হারতে হয়েছে ক্রিস গেইলের বিক্রমে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় ধাক্কা। যেটা আসবে আগে থেকে জানা ছিল, কিন্তু হারের পরিপ্রেক্ষিতে যা চিন্তায় রাখছে নাইট ভক্তদের।

কিঙ্গস ইলেভেন ম্যাচ থেকে আর পাওয়া যাবে না সাকিব আল হাসানকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। সাকিব যা খেলতে এ দিনই চলে গেলেন ঢাকা। এবং যা খবর, কেকেআরের শেষ দুটো ম্যাচের আগে তাঁর ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই। যদি সেই দুটো ম্যাচের গুরুত্ব থাকে, তা হলেই তাঁর ফিরে আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে।

আইপিএল সেভেন চ্যাম্পিয়ন কেকেআরের দুই প্রধান মুখ হিসেবে দু’জনকে ধরা হয়। সুনীল নারিন এবং রবিন উথাপ্পা। কিন্তু জয়ের পেছনে অলিখিত নায়ক বলে যদি কেউ থাকেন তো তিনি বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। ব্যাটিং তো বটেই, টিম কেকেআরের কাছে তাঁর চার ওভারের বাঁ-হাতি স্পিনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাকিবের অভাব তাই কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কেকেআরের কোনও কোনও কর্তাকে।

বদলির ভাবনাও ভাবা শুরু হয়ে গিয়েছে। এক নম্বর বিকল্প হিসেবে যাঁকে ভাবা হচ্ছে, তিনি নেদারল্যান্ডসের রায়ান টেন দুশখাতে। যদি সাকিবের বদলির ব্যাটিংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তা হলে দুশখাতেকে দেখা যেতে পারে। কিন্তু যদি প্রাধান্য পায় বোলিং, তা হলে সাকিবের জায়গায় দুটো নাম পাওয়া যাচ্ছে। ব্র্যাড হগ এবং জোহান বোথা। কিঙ্গস ইলেভেনের বিরুদ্ধে পুণেতে আগামী শনিবার কে নামবেন তা সম্ভবত ঠিক হবে পিচ অনুযায়ী কম্বিনেশন কী হয়, তার উপর।

Rajarshi Gangopadhyay IPL8 Glenn maxwell india australia suryakumar yadav ab de villiers abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy