Advertisement
E-Paper

পুড়ছে লঙ্কা, সতর্ক ভারত

কতটা দুর্ভেদ্য ছিল শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেশে? দু’একটা নমুনা পেশ করা যাক। ভারত তাদের প্রথম সফরে খেলতে এসে কপিল দেবের নেতৃত্বে টেস্ট সিরিজে হারে।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২২
শ্রীলঙ্কার হোম রেকর্ডের দুর্গ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে বিরাটদের আগ্রাসনের সামনে।

শ্রীলঙ্কার হোম রেকর্ডের দুর্গ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে বিরাটদের আগ্রাসনের সামনে।

একটা দেশে ক্রিকেটকে ঘিরে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। তাদের হঠাৎই দগ্ধ, আক্রান্ত দেখাচ্ছে। অন্য দেশ অতিথি হয়ে খেলতে এসে ইতিমধ্যেই সিরিজ জিতে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে।

মঙ্গলবারের কলম্বোয় বসে যুযুধান দুই দলের এমন বিপরীতধর্মী অবস্থান দেখে অবাকই হতে হবে। মনে হবে রিপ ভ্যান উইঙ্কলের সেই ঘুম থেকে উঠে যুগটাই পাল্টে যাওয়ার মতো কি কিছু ঘটে গেল? নিজের দেশে শ্রীলঙ্কা মানে এত কাল ছিল উপমহাদেশের অলিখিত সম্রাট। এমন দুর্ধর্ষ হোম রেকর্ড ভারত বা পাকিস্তানেরও নেই। অথচ সেই এত বছরের দুর্গ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে বিরাট কোহালিদের আগ্রাসনের সামনে।

কতটা দুর্ভেদ্য ছিল শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেশে? দু’একটা নমুনা পেশ করা যাক। ভারত তাদের প্রথম সফরে খেলতে এসে কপিল দেবের নেতৃত্বে টেস্ট সিরিজে হারে। তখন শ্রীলঙ্কা টেস্ট ক্রিকেটে শিশু। তবু রয় ডায়াস, দলীপ মেন্ডিস-রা চূর্ণ করেন কপিলের দলকে। কোহালি (এ বার নিয়ে দ্বিতীয় বার শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জিতলেন) ছাড়া মাত্র এক জন অধিনায়কই এখান থেকে সিরিজ জিতে ফিরেছেন— মহম্মদ আজহারউদ্দিন।

শ্রীলঙ্কা আগে অনেক শক্তিশালী দল ছিল। তাদের মুরলীধরন ছিল, ডি’সিলভা ছিল, রণতুঙ্গা ছিল, সঙ্গকারা-জয়বর্ধনে ছিল— এ সব বলে লাভ নেই। কারণ ভারতেরও তখন সচিন তেন্ডুলকর ছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছিল, রাহুল দ্রাবিড় ছিল, ভিভিএস লক্ষ্মণ ছিল, বীরেন্দ্র সহবাগ ছিল। সচিন-সৌরভদের সেই দল মানে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘বিটল্‌স’। অমন তারা ঝলমলে দল কখনও আসেনি। তারাও শ্রীলঙ্কায় এসে সিরিজ জিততে পারেনি।

আরও পড়ুন:

পাল্লেকেলি টেস্ট থেকে ছিটকে গেলেন রঙ্গনা হেরাথ

বরং ইতিহাস ঘাঁটলে এটাই পাওয়া যাবে যে, শ্রীলঙ্কা সফর মানেই ভারত অধিনায়কের জন্য কাঁটার মুকুট অপেক্ষা করছে। এখানে হারার পরে দেশে ফিরে তাঁর যোগ্যতা বা ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। শুধু ভারত কেন, অন্যান্য দলগুলির ক্ষেত্রেও তো একই ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে। শেষ সিরিজেও তারা স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ হোয়াইটওয়াশ করেছে। এই রঙ্গনা হেরাথই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন। এই কুশল মেন্ডিসই ব্যাটে ঝড় তুলেছিলেন।

চলতি সিরিজ পুরনো সেই ইতিহাসের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কান কোনও দলকে গত তিন দশকে নিজেদের মাঠে এতটা অপদস্ত হতে হয়নি। অর্জুণ রণতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি’সিলভাদের দেশে সেই কারণে বিতর্কের ঝড় উঠে গিয়েছে। আর দেশের ক্রিকেট ভক্ত থেকে শুরু করে সরকার, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ড, নির্বাচকেরা সকলকে ঝাঁকুনি দিতে শুরু করেছে সেই বিতর্কের ঝড়।

এক মন্ত্রী পর্যন্ত বিরাট কোহালির সঙ্গে ছবি টুইট করে লিখেছেন— ‘বিরাট আর ওর দলকে বললাম, মায়া-মমতা রেখে খেলতে। ৬০০ রান আমাদের জন্য একটু বেশিই বাড়াবাড়ি’। মন্ত্রীর এই টুইট ভাইরাল হয়ে গিয়ে বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে। কেউ বলছেন, সরকারই যদি এমন উপহাস করে তা হলে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট আর কী করে এগোবে! আবার কারও কারও মনে হচ্ছে, এটা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডে ফের বড়সড় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত নয় তো? পাকিস্তানের মতো শ্রীলঙ্কাতেও ক্রিকেট প্রশাসনে সরকারের প্রভাব সাংঘাতিক। সে সবই আবার মাথাচাড়া দেবে কি না, সেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠে পড়েছে।

চার দিনের মধ্যে টেস্ট হেরে, সিরিজ হাতছাড়া করার পরেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড ইমার্জেন্সি বৈঠক ডাকে। সেখানে পুরো দল তো ছিলই, কোচেদের সবাইকেও বসিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়, কেন এমন আত্মসমর্পণ করে হার? অধিনায়ক দীনেশ চণ্ডীমল ছাড়াও সেই সভায় বক্তব্য রাখেন সদ্য প্রাক্তন ক্যাপ্টেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। নির্বাচকদের প্রধান সনৎ জয়সূর্য ধৈর্য ধরার কথা বলেন। বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে অরবিন্দ ডি’সিলভা-কে ডেকে আনা হয়। তিনি ক্রিকেটারদের ‘ভোকাল টনিক’-ও দিয়ে গিয়েছেন।

এর মধ্যেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে যে, কোচিং টিমে পরিবর্তন ঘটতে পারে। প্রাক্তন ফাস্ট বোলার রুমেশ রত্নায়েকে-কে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বোলিং কোচদের প্রধান করে। মানে শ্রীলঙ্কার এই মুহূর্তে বোলিং কোচ চামিন্ডা ব্যাসের মাথার উপরে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হল। ব্যাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই প্রবল জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। হেরাথ শেষ টেস্টে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন সোমবারেই সেই ইঙ্গিত ছিল। এ দিন সরকারি ভাবেই বলে দেওয়া হল, রঙ্গনা পাল্লেকেলে খেলবেন না। মানে শ্রীলঙ্কার বাঁ হাতি বনাম ভারতের বাঁ হাতি জাডেজার দ্বৈরথটাই শেষ টেস্টে থাকল না।

জাডেজাকে নিয়ে ভারতীয় শিবিরে ক্ষোভ কমেনি। আইসিসি অন্য অনেক ঘটনা দেখেও দেখছে না, অথচ জাডেজার ক্ষেত্রে কঠোর হয়ে গেল— এমন একটা অভিযোগের সুর দলের মধ্যে রয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে কিছু করা হচ্ছে না।

তবে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের অগ্নিদগ্ধ অবস্থার মধ্যেই যেটা চোখে পড়ার মতো তা হচ্ছে, কোহালিদের দলের কড়া অনুশাসনে মেনে চলা রুটিন। সাড়ে চার ঘণ্টার উপর সড়কযাত্রা করে এ দিন ক্যান্ডি পৌঁছল দল। পাল্লেকেলে ম্যাচ হলেও থাকতে হয় ক্যান্ডিতেই। কিন্তু হোটেলে পৌঁছেই সুইমিং পুল সেশনে নেমে পড়তে হল। পাছে দীর্ঘ বাস যাত্রায় বসে কাটিয়ে শরীর ধরে গিয়ে থাকে।

আগেকার ক্রিকেটারদের চেয়ে মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে ফিটনেস এবং ডায়েট নিয়ে সচেতনতা। এখন ‘রেস্ট ডে’ বলে কিছু নেই। ক্রিকেট থেকে ছুটির দিন থাকলেও হোটেলে জিম বা সুইমিং পুল সেশনে যেতে হবে। এ দিন ক্যান্ডিতে পৌঁছেই যেমন কোচিং স্টাফ কাজে নেমে পড়লেন। বুধবার পুরোদস্তুর প্র্যাকটিসও হবে। জিতেছ তো কী, রুটিন বদলাবে না।

‘ইফ ইউ ক্যান মিট উইথ ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ডিজাস্টার/অ্যান্ড ট্রিট দোস টু ইম্পসটর্স জাস্ট দ্য সেম...।’ যদি বিজয় এবং বিপর্যয় দু’টোর সঙ্গেই দেখা হয়/আর যদি দু’টোকেই একই ভঙ্গিতে দেখতে পারো...! রাডইয়ার্ড কিপলিংয়ের সেই অমর লাইনগুলো যেন অদৃশ্য হাতে কেউ লিখে দিয়েছে কোহালিদের ড্রেসিংরুমের দেওয়ালে!

India Sri Lanka Test Series Colombo Virat Kohli Dinesh Chandimal কলম্বো শ্রীলঙ্কা Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy