Advertisement
E-Paper

ইতিহাসের সামনে কোহালিরা, চোখে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন

হার্দিক পাণ্ড্যর এই লড়াই ছাড়া কি রবিবার ইনদওরে ভারতের সিরিজ জয় সম্ভব হত? বোধহয় না। বরোদার ২৩ বছরের ডাকাবুকো ক্রিকেটারের ৭২ বলে ৭৮ রানের এই ইনিংস জায়গা করে নিল ইতিহাসের পাতায়।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
হার্দিক পাণ্ড্যর সঙ্গে অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ফাইল চিত্র

হার্দিক পাণ্ড্যর সঙ্গে অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ফাইল চিত্র

তিনিই যেন ‘শো স্টপার’। দিনের সেরা আকর্ষণ। প্যাভিলিয়ন থেকে বেরিয়ে বাউন্ডারি লাইন পেরোতেই সারা গ্যালারিতে জ্বলে উঠল মোবাইল-টর্চ। শুরু হল চিৎকার। ধোনি...ধোনি...ধোনি...ধোনি। রবিবার ইনদওরের হোলকার স্টেডিয়ামে ভারতের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের উল্লাস শুরু হল ধোনির আগমনের এই মুহূর্ত থেকেই।

কিন্তু ধোনি তো ফিনিশার। যখন নামলেন, তখন জয়ের জন্য দশ রান বাকি। যা তাঁর বাঁ-হাতের খেলা বললেও কম হবে। আসল নায়ক তো অন্য একজন। রোহিত শর্মা, অজিঙ্ক রাহানে, বিরাট কোহালিদের লড়াইয়ের মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে হলেও যিনি একা ‘বাহুবলি’ হয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন অস্ট্রেলিয়ার সামনে। হার্দিক পাণ্ড্যর এই লড়াই ছাড়া কি রবিবার ইনদওরে ভারতের সিরিজ জয় সম্ভব হত? বোধহয় না। বরোদার ২৩ বছরের ডাকাবুকো ক্রিকেটারের ৭২ বলে ৭৮ রানের এই ইনিংস জায়গা করে নিল ইতিহাসের পাতায়।

যেমন জায়গা করে নিয়েছিলেন যোগিন্দর শর্মা, তাঁর সেই ঐতিহাসিক টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে শেষ ওভারে বল করার জন্য। ধোনির ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের দশ বছর পূর্তির দিনেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেটে জিতে ঘরের মাঠে ফের অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ান ডে সিরিজ হারাল ভারত। এ বার তাদের সামনে আর এক নজির। ঘরের মাঠে অজিদের ওয়ান ডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার। আর এ দিনই জানিয়ে দেওয়া হল, বাকি দুই একদিনের ম্যাচের জন্য অপরিবর্তই থাকছে ভারতীয় দল। যার অর্থ, দলের বাইরেই রাখা হচ্ছে রবীন্দ্র জাডেজাকে।

ছ’বছর আগে এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী বীরেন্দ্র সহবাগ ২০৮ বলে ২১৯ রান তুলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া এ দিন তার চেয়ে ৭৪ রান বেশি তোলে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতকে ২৮৯ রান তাড়া করেও জিততে দেখেছে এই হোলকার স্টেডিয়াম গ্যালারি। তাই অ্যারন ফিঞ্চদের ২৯৩ দেখেও দমে যাননি এখানকার দর্শকরা।

প্রথম দশ ওভারে যখন বার দশেক অজি বোলারদের বাউন্ডারি পার করিয়ে দিলেন রোহিত শর্মা ও অজিঙ্ক রাহানে, তখন এই গর্জন যেন সারা শহরে ছড়িয়ে পড়তে চাইছিল। খেলা শুরুর আগে প্রেস বক্সের যে সাউন্ডপ্রুফ কাচ ভেদ করে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের আওয়াজই এসে পৌঁছচ্ছিল না ঠিক মতো, হোলকার গ্যালারির শব্দব্রহ্মে সেই কাচেই ফাটল ধরার উপক্রম হল রবিবার রাতে। যখন পাঁচটা বাউন্ডারি ও চারটি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অজি বোলারদের রীতিমতো শাসন করে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটের এই নতুন তারকা অলরাউন্ডার।

পাটা পিচে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন স্টিভ স্মিথরা। সেই স্বপ্ন চুরমার করে দিলেন প্রথমে রোহিত-রাহানে, পরে এই পাণ্ড্য। গোটা কুড়ি চার-ছয় মেরে রোহিত ও অজিঙ্ক রাহানে দুজনেই সত্তর ছুঁয়ে ১৩৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফিরে যাওয়ার পরে চার নম্বরে নামেন হার্দিক। স্ট্রোকমেকারদের স্বর্গে এটাই মাস্টারস্ট্রোক ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীর। কেদার যাদব, মণীশ পাণ্ডেরা ফর্মে নেই। তাই হার্দিককে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়ে তাঁকেও ভরসা দেওয়ার চেষ্টা টিম ম্যানেজমেন্টের।

ক্যাপ্টেনের আস্থার দামও তিনি দিলেন জয়ের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে। তবে পাঁচ বলে তিন রানের মধ্যে পরপর কোহালি ও কেদার ফিরে যাওয়ায় যে চাপে পড়ে যান ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, তা বেশ কষ্ট করেই সামলাতে হয় পাণ্ড্য-পাণ্ডে জুটিকে। রোহিত-রাহানেরা যতটা সহজে রান তুলছিলেন, তাঁদের পথ অত মসৃণ ছিল না। পাণ্ড্য মাঝে মাঝেই ঝুঁকির শট মারছিলেন। এর মধ্যে অবশ্য পাণ্ড্যর তোলা ক্যাচ ফস্কান স্মিথ। তার আগে রোহিতেরও দু’টো ক্যাচ ফেলেন হ্যান্ডসকম্ব ও ম্যাক্সওয়েল।

তবে ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ যে রকম সে রকম ক্রিকেটেও ‘রান কা নাম জিন্দেগি’। রান উঠলেই বাঁচবেন। না হলে অবধারিত মৃত্যু। রান তুলেই ঐতিহাসিক জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল ভারত। আর সেই জয়কে মাঠে নেমে বরণ করে নিয়ে গেলেন বর্ষীয়ান ধোনি। দুই প্রজন্মের মেলবন্ধনের এক অসাধারণ ছবি ভেসে উঠল হোলকার স্টেডিয়ামে। অ্যারন ফিঞ্চের ১২৪ রানের ইনিংসও বাঁচাতে পারল না অজিদের। যারা ২২৪-১ ছিল ফিঞ্চ, স্টিভ স্মিথ ও কিছুটা ডেভিড ওয়ার্নারের দাপটে, সেই অস্ট্রেলিয়াকে শেষ পর্যন্ত ২৯৩ রানে বেঁধে রাখাটা অবশ্য কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহাল, যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমারদের কৃতিত্ব। তাঁদের শুরু করা কাজটা প্রায় একা হাতে শেষ করলেন হার্দিক। ঠিক যেমন করতেন এই ইনদওরেরই গর্ব প্রথম ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক সি কে নাইডু।

৮৫ বছর আগেও যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতেন। তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি মুস্তাক আলিও এই শহরেরই মানুষ। তাঁরা না থাকলেও তাঁদের সেই মেজাজটা বেঁচে থাকল। তাঁদের শহরের মাঠে। ভারতীয় দলেও।

মেজাজটাই যে আসল রাজা।

Team India Cricket Hardik Pandya Virat Kohli হার্দিক পাণ্ড্য বিরাট কোহালি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy