Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রিওয় পা সম্রাটের

মায়ের মন্ত্র বাইবেল, ঈশ্বর ও আত্মবিশ্বাস

যে কোনও রেসের আগে বাকিরা যখন একাগ্রতার প্রতিমূর্তি, তাঁকে দেখা যায় ফুরফুরে মেজাজে টিভি ক্যামেরার নানা আবদার মেটাচ্ছেন। সদা হাস্যমুখে। এর পর স্টার্টারের বন্দুক এবং কয়েক সেকেন্ডের মামলা।

মা জেনিফারের সঙ্গে।

মা জেনিফারের সঙ্গে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৮
Share: Save:

যে কোনও রেসের আগে বাকিরা যখন একাগ্রতার প্রতিমূর্তি, তাঁকে দেখা যায় ফুরফুরে মেজাজে টিভি ক্যামেরার নানা আবদার মেটাচ্ছেন। সদা হাস্যমুখে। এর পর স্টার্টারের বন্দুক এবং কয়েক সেকেন্ডের মামলা। শেষে অবধারিত রেস জয় আর সেই বিশ্ববিখ্যাত পোজ— ‘লাইটনিং বোল্ট’।

চোদ্দো বছর রিওয়াইন্ড করা যাক। নিজের দেশে জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নামার চাপে কুঁকড়ে থাকা বছর পনেরোর ছেলেটি শুধু কাঁদছে আর বলছে, আমি দৌড়তে পারব না। আর তার মা সাহস জোগাচ্ছেন, ‘‘তুমি পারবে, নিশ্চয়ই পারবে।’’

দু’টো ছবি। দু’টোই উসেইন সেন্ট লিও বোল্ট। তবে ২০০২-এর স্নায়ু হারিয়ে বসা সেই টিন এজারের সঙ্গে আজকের স্প্রিন্ট কিংবদন্তির সবচেয়ে বড় ফারাক আত্মবিশ্বাসে। যে আত্মবিশ্বাসের উৎসের নাম জেনিফার বোল্ট।

‘‘আজও ওর মাকে ছাড়া চলে না। নিজের সামনে আমাকে শান্ত দেখলে তবেই ও চাপমুক্ত থাকে,’’ বলেছেন জেনিফার। মৃদুভাষী বোল্ট-জননী এক সাক্ষাৎকারে ২০০২ জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের স্মৃতিচারণে বলেছেন, ‘‘ও তখন মাত্র পনেরো বছরের। এত নার্ভাস ছিল যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নামতেই চায়নি। শুধু কাঁদছিল। আমি নিজেও খুব নার্ভাস ছিলাম। পা কাঁপছে, বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটা চলছে। কিন্তু কান্না থামাতে বলেছিলাম তুমি পারবে, নিশ্চয়ই পারবে। ওকে সেই বিশ্বাসটা জোগাতে হয়েছিল, যেটা ও নিজের ভিতর খুঁজে পাচ্ছিল না।’’

কিংস্টনে ২০০২ জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দু’শো মিটারে সবচেয়ে কমবয়সি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন বোল্ট। সেই শুরু। কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড ভাঙা-গড়াটা অভ্যাসে পরিণত করে স্প্রিন্টের অবিসংবাদী সম্রাট হয়ে ওঠেন জেনিফারের ছ’ফুট পাঁচ ইঞ্চির ছেলে। কোন মন্ত্রে এত সফল বোল্ট? মা বলছেন, নিজের উপর আস্থা আর ঈশ্বর বিশ্বাসে। ‘‘আমি শুধু বলি একাগ্র থাকো, ঈশ্বরকে স্মরণ করো, বাইবেলটা পড়ো আর প্রার্থনা করতে ভুলো না।’’

জেনিফার জানিয়েছেন, ছোটবেলায় বোল্ট ছিলেন অসম্ভব ছটফটে। ‘‘কখনও চুপচাপ বসত না। ঘুমের মধ্যেও চরকির মতো ঘুরত।’’ জামাইকার উত্তর উপকূলে ট্রেলাওনি প্যারিশের শেরউড কনটেন্ট গ্রামে স্বামী ওয়েলেসলি ও ছেলেকে নিয়ে ছিল জেনিফারের সংসার। ক্রিকেট আর ফুটবল দারুণ খেলতেন বোল্ট। তবে বারো বছর বয়সে স্কলারশিপ পেয়ে হাইস্কুলে যাওয়ার পর সব বদলায়। ‘‘ওখানেই প্রথম বোঝা যায় ওর স্প্রিন্টের প্রতিভা অসাধারণ,’’ বলেছেন জেনিফার। যিনি ভুলতে পারেন না ২০০৪-এ আথেন্স অলিম্পিক্সে নেমে হতাশ হয়ে ফেরা ছেলের যন্ত্রণা। ‘‘আথেন্সের আগে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেল। প্রথম রাউন্ড পেরোতে পারেনি। চোটটা কী, কেন, বুঝিনি তখন। খুব ভয় পেয়েছিলাম। সবচেয়ে কষ্ট হত ওকে দেখে। অলিম্পিক্স নিয়ে কত স্বপ্ন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরল।’’

সেই হতাশাই বারো বছরে বদলে গিয়েছে সাফল্য-শিখরে। এ বার ২৯ বছর বয়সে সম্ভবত শেষ বার অলিম্পিক্সে ফিরছেন বোল্ট। আর আবার হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট ভোগাচ্ছে। সেটা কি একটু হলেও চিন্তায় রাখছে জেনিফারকে? মা বলছেন, না। ‘‘২০০২-এ ও দৌড় শুরু করার পর দর্শকেরা যখন ওর জন্য চিৎকার শুরু করেছিল, সেই তখন থেকে আর নার্ভাস লাগে না। এ বারও আমি জানি সব ঠিক হবে। গেমসে চোট কোনও বাধা হবে না।’’

অলিম্পিক্সের আগে ‘দ্য বয় হু লার্নড টু ফ্লাই’ নামে অ্যানিমেশন সিনেমা বেরিয়েছে বোল্টের উপর। ছবিতে জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে জেনিফার ছেলেকে বলেন, ‘‘তুমি পা-টা যত হাল্কা করে ফেলবে, তত দ্রুত গতিতে ছুটতে পারবে।’’

হাল্কা পদক্ষেপেই অ্যাথলেটিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে গভীর পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছেন বোল্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

usain bolt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE