জুটি: আবহাওয়া কি চহাল-কুলদীপদের সুবিধে করে দেবে? ফাইল চিত্র।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। তাই মঙ্গলবার ইডেনের জলছবি সারা ক্রিকেটবিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগল না। মধ্য কলকাতার নামী পাঁচতারা হোটেলে ভারতীয় ক্রিকেট শিবিরেও সেই ছবি পৌঁছে গেল নিমেষে। আর তার পরেই বিরাট-শিবির থেকে ভেসে এল এক বার্তা, ‘‘বৃষ্টি হয়েই চলেছে আর ইডেনের মাঠ পুরো ঢাকা। ক্রিকেটাররা তাই আজ আর মাঠে যাবেন না।’’
শোনা যাচ্ছে, বুধবারও সারা দিন নাকি আকাশের মুখ এমনই ভার থাকবে। ঝিরঝিরে বৃষ্টিও হতে পারে। এমন হলে তো ইডেনের বাইশ গজের চরিত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে। ইডেন কিউরেটর অবশ্য আশ্বস্ত করছেন, যে ভাবে ঢেকে রাখা হয়েছে উইকেট ও আউটফিল্ড, তাতে কোনওটারই ক্ষতি হবে না। কিন্তু তাঁরা যেটা বলছেন না, তা হল, বাইশ গজের মেজাজ পাল্টে যেতেই পারে।
তিন-চারদিন আগেও খটখটে রোদে পোড়া ইডেনে দাঁড়িয়ে বাংলার রঞ্জি দলের কোচ সাইরাজ বাহুতুলে বলে যান, ‘‘বেশ ভাল উইকেট। বল ভাল ব্যাটে আসছে। ব্যাটসম্যানদের স্ট্রোক নিতে সুবিধা হবে। তবে স্পিনাররা বোধহয় তেমন টার্ন পাবে না।’’ শক্ত ও শুকনো উইকেটে ফাটল ধরার সম্ভাবনা কম, এই ভেবেই বোধহয় কথাগুলো বলেছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় লেগস্পিনার। অথচ মঙ্গলবার আবহাওয়ার মেজাজের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও যে ক্রমশ স্পিনারদের দিকে ঘুরতে শুরু করেছে, এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে তেমন কোনও সন্দেহ নেই।
কিন্তু বৃষ্টির জন্য পিচ-চরিত্র পাল্টে তা স্পিনারদের বন্ধু হয়ে উঠবে কেন?
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচশো উইকেট পাওয়া বাংলার বাঁ হাতি স্পিনার উৎপল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আবহাওয়া যদি এ রকমই থাকে, তা হলে স্পিনাররা সুবিধা পেতেই পারে। কারণ, স্যাঁতসেঁতে ভাব বেশি থাকলে উইকেটে বল ভাল গ্রিপ করে। এর জেরে বল ঘোরে বেশি। এ রকম আবহাওয়া দেখে তাই আমাদের স্পিনারদের খুশি হওয়াই উচিত। আবহাওয়া শুকনো না হলে ওরাই সুবিধা পেতে পারে ইডেনের ম্যাচে।’’
বাংলার প্রাক্তন রঞ্জি অফ স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী, যিনি এখন বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ দল নিয়ে হিমাচলে গিয়েছেন কোচ হিসেবে, তিনি ফোনে কলকাতার বৃষ্টির খবর শুনে বললেন, ‘‘রিস্ট স্পিনারদের এমনিতেই উইকেটের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয় না। তার ওপর আবহাওয়ার অবস্থা আর পূর্বাভাস ভাল নয় শুনছি। ইডেনের উইকেট থেকে বাড়তি টার্ন পেলে চহাল, কুলদীপরা এই ম্যাচেও চেন্নাইয়ের মতো বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে।’’
আবহাওয়ার এমন মুডবদল দেখে অস্ট্রেলিয়া শিবিরও চিন্তায়। মঙ্গলবার ইডেনে ইন্ডোর নেটে তাই এক ঝাঁক স্পিনার নিয়ে অনুশীলন সারলেন স্টিভ স্মিথরা। বাংলা তথা ভারতীয় দলের প্রাক্তন অফস্পিনার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য স্মিথদের সাবধান করতে চান। বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই মনে আছে, আইপিএলে কেকেআর বনাম আরসিবি ম্যাচের আগে বৃষ্টি হয়েছিল। নাইটরা ১৩০-য়ে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরে বিরাট কোহালির দল ৪৯ রানে শেষ হয়ে যায়। এই ম্যাচেও ব্যাটসম্যানরা আবহাওয়ার জন্য তেমনই প্রভাবিত হতে পারে।’’ স্পিনারদের নিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘একেই নতুন উইকেট। তার ওপর স্যাঁতসেঁতে। ব্যাটসম্যানদের স্ট্রোক নিতে অসুবিধা হবেই। আর আমাদের স্পিনারদের বিরুদ্ধে তো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা এমনিতেই কাঁপছে। পছন্দের আবহাওয়া পেলে কুলদীপরা আরও ধারালো হয়ে উঠবে নিশ্চয়ই।’’
ইডেনের উইকেট শুকনো থাকলে ভারতীয় স্পিনাররা হয়তো ধারালো ঘূর্ণি পেতেন না। কিন্তু আবহাওয়া বদলের সঙ্গে ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে এখন। বৃহস্পতিবার হয়তো ইডেন-মঞ্চের কুশীলবদের ভাগ্যও পাল্টে যেতে পারে। অনিশ্চয়তার আর এক নামই যে ক্রিকেট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy