Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Euro Cup 2020

UEFA EURO Cup 2020: এরিকসেনকে দেখে ১৭ বছর আগে জুনিয়রের স্মৃতিতে ফিরে গেলেন আর্মান্দো কোলাস, অভিজিৎ

আইএসএল তো দূরের কথা ডেম্পো দলটা এখন আর আই লিগও খেলে না। কিন্তু সদাহাস্য জুনিয়রের ১০ নম্বর জার্সি ক্লাবে এখনও সাজানো আছে।

অজ্ঞান ডেনমার্কের এরিকসেনকে দেখে ১৭ বছর আগে জুনিয়র স্মৃতিতে ফিরে গেলেন আর্মান্দো কোলাস, অভিজিৎ।

অজ্ঞান ডেনমার্কের এরিকসেনকে দেখে ১৭ বছর আগে জুনিয়র স্মৃতিতে ফিরে গেলেন আর্মান্দো কোলাস, অভিজিৎ।

সব্যসাচী বাগচী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ ০০:৩১
Share: Save:

৫ ডিসেম্বর ২০০৪ থেকে ১২ জুন ২০২১। ১৭ বছরের ব্যবধান। সেটা ছিল বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনাল। এই ম্যাচটা ডেনমার্কের পার্কেন স্টেডিয়ামে চলছিল। সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ডেম্পো ও মোহনবাগান। এখানে ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে চলছিল ইউরো কাপের খেলা। তবুও দুই গোলার্ধ যেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ও প্রয়াত ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রকে একসূত্রে বাঁধল! এমনটাই তো মনে করছেন ডেম্পোর তৎকালীন প্রশিক্ষক আর্মান্দো কোলাস ও তাঁর সেই সোনায় বাঁধানো দলের গোল রক্ষক অভিজিৎ মন্ডল।

এই ম্যাচে মাঠে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে যান এরিকসেন। প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা ছিল তাঁর। কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস প্রশ্বাস ফেরানের চেষ্টায় চিকিৎসকরা। স্থগিত হয়ে যায় ডেনমার্ক বনাম ফিনল্যান্ড ম্যাচ। মাঠের মধ্যেই ১০ মিনিট চিকিৎসা করা হয় এরিকসেনের। চিকিৎসা চলার সময় তাঁকে ঘিরে থাকেন সতীর্থরা। মাঠের মধ্যেই ফুটবলারদের চোখে জল দেখা যায়। সতীর্থকে হারানোর ভয়ে কেঁদে ফেলেন তাঁরা। তবে স্বস্তির খবর হল হাসপাতালে যাওয়ার পর এরিকসেনের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। খেলাও কিছুক্ষণ পরে শুরু হয়েছে।

তবে ১৭ বছর আগে তো এমনটা হয়নি। কী হয়েছিল সেই দিন? গোয়া থেকে পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী প্রশিক্ষক আর্মান্দো আনন্দবাজার ডিজিটালকে টেলিফোনে বললেন, “সেই ম্যাচে শুরু থেকেই আমাদের আধিপত্য বজায় ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ মিনিটেই বদলে যায় গোটা মাঠের ছবি। মোহনবাগানের ডিফেন্সকে নাড়িয়ে গোল করে দিয়েছিল জুনিয়র। সুব্রত পাল চেষ্টা করেও আটকাতে পারেনি ওকে। ১-০ ম্যাচ ২-০ হয়ে যায়। কিন্তু এতে কী লাভ হল! ছেলেটাই তো জয় উদযাপন করতে পারেনি। সেই দিনের ঘটনা আজও আমার চোখে ভেসে ওঠে। এই ম্যাচটা দেখার সময় এরিকসেনকে মাঠে শুয়ে যেতে দেখেই ঈশ্বরকে শুধু ডাকছিলাম। শুধু মনে মনে বলছিলাম ওর যেন জুনিয়রের মতো পরিণতি না হয়।”

জুনিয়রকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন র‌্যান্টি ও আর সি প্রকাশ। ফাইল চিত্র।

জুনিয়রকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন র‌্যান্টি ও আর সি প্রকাশ। ফাইল চিত্র।

সেই ঘটনার জন্য অনেকেই সুব্রতকে দায়ী করেন। জুনিররের বুকের দিকে লক্ষ্য করে ওঁর দুই হাত বাড়ানোর জন্য আজীবনের মতো থেমে গিয়েছিলেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার। ঠিক কী হয়েছিল সে দিন? আর্মান্দো আবার বলছেন, “বল গোলে ঠেলে দেওয়ার পরই সুব্রতর হাত সোজা জুনিয়রের বুকে এসে লাগে। ওখানেই লুটিয়ে পড়ে জুনিয়র। গোলের উল্লাস তো দূরের কথা, আমরা তখন ওকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে ছিলাম। মুহূর্তে ছুটে আসে র‌্যান্টি মার্টিন্স। দৌড়ে আসে মোহনবাগানের খেলোয়াড়রাও। র‌্যান্টির মুখ তখন নেমে এসেছে জুনিয়রের মুখে। নিজের শ্বাসে সজাগ করতে চাইছে বন্ধুকে। নেতিয়ে যাওয়া জুনিয়রের শরীরটা মাঠ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে আর সি প্রকাশ। কিন্তু ওদের ডাকে জুনিয়র সাড়া দেয়নি। অ্যাম্বুল্যান্স আনা হয়। স্ট্রেচারে শুয়ে প্রিয় মাঠ থেকে চিরবিদায় নিয়েছিল আমার প্রিয় জুনিয়র।”

সে দিন জিতেছিল ডেম্পো। এবং সেই দু’টি গোলই করেছিলেন জুনিয়র। তিনি যখন মাঠে শুয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করছিলেন, অন্য প্রান্তে তখন হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করছিলেন অভিজিৎ। সেই অভিজিৎ আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘জুনিয়র চলে গিয়ে ভারতীয় ফুটবলকে শিখিয়ে দিয়েছে মাঠে অ্যাম্বুল্যান্স এবং ডাক্তার থাকা কতটা জরুরি। শুধু এই ম্যাচে এরিকসেনের ঘটনা নয়, জুনিয়র চলে যাওয়ার পরেও এমন ঘটনা মাঠে অনেক বার ঘটেছে। বেশির ভাগ ফুটবলার বেঁচে ফিরেছে। কিন্তু ও ফেরেনি। আমাদের ঠাকুরঘরে ওর ছবি আছে। রোজ জুনিয়রের ছবিতে মালাও দিই।”

আইএসএল তো দূরের কথা ডেম্পো দলটা এখন আর আই লিগও খেলে না। কিন্তু সদাহাস্য জুনিয়রের ১০ নম্বর জার্সি ক্লাবে এখনও সাজানো আছে। ডেম্পো দলে সেই জার্সি গায়ে চাপানোর অধিকার কারও নেই। কাকতলীয় ব্যাপার হল ডেনমার্কের এরিকসেনও ১০ নম্বর জার্সিই গায়ে চাপান। শুধু তফাত ওঁর পরিণতি জুনিয়রের মতো হয়নি। তবুও সেই ব্রাজিলীয়র জন্য এই দুটো ঘটনা একসূত্রে গাঁথা রয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE