Advertisement
E-Paper

ইন্দ্রপতনে স্তব্ধ ঢাক, ভুভুজেলা

এ সব উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছিল, দমদম আর কাজান এরিনা মিলেমিশে একাকার। দু’সপ্তাহ আগে রাশিয়ায়  বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার সময়  ব্রাজিল সমর্থকদের এ রকম উচ্ছ্বাসই  দেখে এসেছি। খেলার শুরুতেই বেলজিয়াম রক্ষণে চাপ দিয়ে ততক্ষণে  ম্যাচের দখল নিচ্ছে ব্রাজিল।

দীপেন্দু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০৬:০৮
বিষাদ: শুক্রবার রাতে গোলের সুযোগ নষ্ট করছেন নেমাররা। দমদম নাগেরবাজারে হতাশ ব্রাজিল ভক্তরা। হতাশ দীপেন্দু বিশ্বাসও। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বিষাদ: শুক্রবার রাতে গোলের সুযোগ নষ্ট করছেন নেমাররা। দমদম নাগেরবাজারে হতাশ ব্রাজিল ভক্তরা। হতাশ দীপেন্দু বিশ্বাসও। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুক্রবার রাতে নাগেরবাজারের উদ্দেশে বাড়ি থেকেই বেরোনোর সময়েই মনটা খচখচ করছিল। কারণটা অবশ্যই, ব্রাজিল বনাম বেলজিয়াম ম্যাচের স্থান।

এ বারের রাশিয়া বিশ্বকাপে কাজান এরিনা। যেখানে হেরে বিদায় নিয়েছে জার্মানি, আর্জেন্টিনার মতো দুই প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলেরও সেই অবস্থা হবে কি না, এ সব ভেবেই মনে কেন জানি কু ডেকেছিল।

নেমার বনাম এডেন অ্যাজার দ্বৈরথ দেখতে দমদম নাগেরবাজারের বাপুজি মিলন সঙ্ঘে গিয়েছিলাম। ক্লাবঘরে ঢুকে এই বলতেই ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন ক্লাবের সদস্যরা। যশোর রোডের উপর ক্লাবের প্রবেশদ্বারে বিশাল তোরণে নেমার, উইলিয়ানদের মুখ। ক্লাবের ভিতরেও তিতের দলের বড় ছবি দিয়ে সাজানো।

শোক: নেমারদের বিদায়ে কাজ়ানে কান্না। শুক্রবার রাতে।ছবি: গেটি ইমেজেস।

ক্লাবের বিশাল টিভিতে তখন গমগম করে বাজছে ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত। কুতিনহো-দের মুখ ভাসছে পর্দায়। আর প্রিয় দলের সেমিফাইনালে যাওয়া দেখতে ক্লাবে ভেঙে পড়েছে গোটা পাড়ার কচি-কাঁচারা। প্রত্যেকের পরনে ব্রাজিলের সেই হলুদ জার্সি। কারও হাতে বাঁশি। কারও গলায় বাঁধা ছোট্ট ঢোল বা ড্রাম। কেউ আবার ভেঁপু নিয়ে ঢুকে পড়েছে। কৌস্তভ মণ্ডল নামে একটি ছেলে দেখলাম ভুভুজেলা নিয়ে এসেছে। দুই গালে ব্রাজিলের পতাকা এঁকে খেলা দেখতে আসা প্রথম বর্ষের কলেজ ছাত্রী সুমনা দাস বললেন, ‘‘দাদা ফুটবল দেবতাও ব্রাজিলের সমর্থক। আমরাই সেমিফাইনাল যাব।’’

এ সব উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছিল, দমদম আর কাজান এরিনা মিলেমিশে একাকার। দু’সপ্তাহ আগে রাশিয়ায় বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার সময় ব্রাজিল সমর্থকদের এ রকম উচ্ছ্বাসই দেখে এসেছি। খেলার শুরুতেই বেলজিয়াম রক্ষণে চাপ দিয়ে ততক্ষণে ম্যাচের দখল নিচ্ছে ব্রাজিল। তা দেখে বাচ্চাদের কেউ কেউ লাফাতে শুরু করল। বলে উঠল, ‘‘ক্লাবের মাথায় যে বড় ব্রাজিলের পতাকাটা উড়ছে, খেলা শেষ হলেই সেটাকে নামিয়ে আনবি। ওটা নিয়ে নাচতে নাচতে গোটা পাড়া ঘুরব আজ রাতে।’’

কিন্তু কাজান আর তেরোর গেঁড়ো, কী ভয়ঙ্কর তা ধারণা করতে পারেনি বাচ্চাগুলো। এই কাজানেই গত শনিবার লিয়োনেল মেসিদের বিরুদ্ধে ফ্রান্স প্রথম গোল করেছিল তেরো মিনিটে। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ফের্নান্দিনহো-র সেই আত্মঘাতী গোল হল তেরো মিনিটে।

মনে হচ্ছিল, ক্লাবের সমস্ত উত্তেজনা হঠাৎ কেউ ব্লটিং কাগজ দিয়ে শুষে নিল। সমস্ত বাজনা থেমে গিয়েছে। আকস্মিক ধাক্কায় কারও মুখ দিয়ে কথা সরছে না। বিস্ফারিত চোখে সবাই দেখছে কেভিন দে ব্রুইনের কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে ফের্নান্দিনহো নিজের গোলে বল ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। স্বপ্নভঙ্গের সূচনা তখন থেকেই। জার্সিতে নেমার লিখে খেলা দেখতে আসা গোপাল মন্ডল বলে বসলেন, ‘‘কাজেমিরো না থাকার মাশুল দিতে হল। ফের্নান্দিনহো মাঝমাঠে বার বার বলের দখল হারাচ্ছে লুকাকু, অ্যাজারদের কাছে। ও একদম অপয়া। গত বিশ্বকাপেও জার্মানির বিরুদ্ধে খেলতে নেমে আমাদের ডুবিয়েছিল।’’

ক্লাবের সদস্য বিশ্বনাথ সরকার এ বার দর্শকদের মিইয়ে যাওয়া পরিস্থিতি সামলাতে ‘‘অনেক সময় আছে। আমরাই জিতব’’, বলতে ফের বাজল ঢাক-ঢোল, ভেঁপু। কিন্তু আগের মতো ততটা প্রবল নাদে নয়। আর ৩১ মিনিটে কেভিন দে ব্রুইন নিখুঁত প্লেসিংয়ে গোলটা করতেই কাজানে খেলা দেখতে আসা ব্রাজিলীয় মহিলাদের মতোই ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলেন পাশে বসা সুমনা। বিরতিতে বিশ্বনাথ, কৌস্তভরা জানতে চাইছিলেন তিন ব্যাকে বেলজিয়াম কী ভাবে সামলাচ্ছে নেমার, জেসুস-দের। ওদের বোঝালাম, এটাই বেলজিয়াম কোচ রবের্তো মার্তিনেসের পাল্টা ছক। এতদিন ৩-৪-৩ বা ৩-৫-২ ছকে খেলে এলেও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ৩-৪-৩ থেকে দ্রুত ৪-৩-৩ ছকে চলে গিয়েছিল বেলজিয়াম। ডানপ্রান্তে লুকাকুকে রেখে কেভিন দে ব্রুইনকে ব্যবহার কর হচ্ছিল প্রায় ‘ফলস নাইন’-এর মতো। আর তাতেই থরহরিকম্প ব্রাজিল রক্ষণ। বেলজিয়ামে দ্রুত গতিতে প্রতি-আক্রমণ সামলাতে নেমে আসতে পারছিলেন না ব্রাজিলের লেফ্ট ব্যাক মার্সেলো। ফলে বার বার অ্যাজার-লুকাকু-ব্রুইনের সামনে ব্রাজিল রক্ষণ স্লুইস গেটের মতো খুলে যাচ্ছিল। আর সেখান থেকেই বিপত্তি। দ্বিতীয়ার্ধে গোটা ফির্মিনো, ডগলাস কোস্তা, রেনাতো অগাস্তো নামতে আক্রমণে চাপ বাড়াল ব্রাজিল। কিন্তু তখন আবার শুরু হল, নেমার, কুতিনহোদের পাল্টা গোল মিসের বহর। মনে হচ্ছিল, এ কোন ব্রাজিল! ফিনিশিংয়ে এই দৈন্যদশা। হতাশায় তখন ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে দমদমের ক্লাব। দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে ফেলেছেন কেউ কেউ। ঠিক তখনই রেনাতোর গোল। বৃথা আশা যেমন মরতে মরতেও মরে না, গোলটার পরে ঠিক সেই অবস্থাই তৈরি হয়েছিল প্রায়। শেষমেশ ব্রাজিল আর গোল করতে পারেনি। আনন্দের পরিবেশও ফেরেনি নাগেরবাজারে।

Football FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Neymar Brazil
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy