Advertisement
১১ মে ২০২৪

ফরাসিরা রক্ষণাত্মক, এই প্রশ্নটা তোলার জায়গা নেই

আক্রমণের সময় ৩-২-৪-১। তখন দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার মুসা দেম্বেলে এবং উইতসেল। আক্রমণে যাচ্ছিলেন শ্যাডলি, কেভিন দে ব্রুইন, এডেন অ্যাজার, মারুয়ান ফেলাইনি।

চর্চায়: ফুটবলবিশ্ব এখন মুগ্ধ ফ্রান্সের এমবাপের শক্তি এবং গতিতে। ছবি: এপি

চর্চায়: ফুটবলবিশ্ব এখন মুগ্ধ ফ্রান্সের এমবাপের শক্তি এবং গতিতে। ছবি: এপি

শিশির ঘোষ
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৩
Share: Save:

মঙ্গলবার রাতে বেলজিয়াম বনাম ফ্রান্সের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে দুর্দান্ত রণনীতির লড়াই দেখলাম। ইউরোপের দুই ধুরন্ধর ফুটবল কোচ—দিদিয়ে দেশঁ এবং রবের্তো মার্তিনেস দুর্দান্ত সব মগজাস্ত্রের প্রয়োগ করে গেলেন।!

এ বারের বিশ্বকাপে বেলজিয়াম একে দুরন্ত খেলেছে। হারিয়েছে ব্রাজিলকে। ফলে বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের অনেকের মনেই জায়গা করে নিয়েছিলেন কেভিন দে ব্রুইনরা। হয়তো সেই আবেগেই বুধবার সকালে দু-একজন বন্ধু ফোন করে বলছিলেন, ফ্রান্স রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছে। দেশঁ-র দলের খেলা মোটেও দৃষ্টিনন্দন লাগেনি। খুব নেতিবাচক লাগল।

প্রথমেই বলি, আমি এই যুক্তি মানতে রাজি নই। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে কোনও দল এক বার গোল করে এগোলে রক্ষণ এবং মাঝমাঠে পোক্ত করবেই। ফরাসি কোচ দেশঁ ঠিক সেটাই করেছেন।

যাঁরা বলছেন, ফ্রান্স নেতিবাচক ফুটবল খেলেছে, তাঁরা হতাশা থেকেই এ কথা বলছেন। চতুর বেলজিয়ান কোচ রবের্তো মার্তিনেস ছক বদলে বিপক্ষকে ধোঁকা দিতে ওস্তাদ। সে রকম একটা মোক্ষম চাল তিনি দিয়েছিলেন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। বেলজিয়াম ৩-৫-২ ছকে খেলা শুরু করেই মিনিট পাঁচ পর থেকেই খেলতে শুরু করল সম্পূর্ণ অন্য ছকে।

আরও পড়ুন: ফরাসিরা রক্ষণাত্মক, এই প্রশ্নটা তোলার জায়গা নেই

আক্রমণের সময় ৩-২-৪-১। তখন দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার মুসা দেম্বেলে এবং উইতসেল। আক্রমণে যাচ্ছিলেন শ্যাডলি, কেভিন দে ব্রুইন, এডেন অ্যাজার, মারুয়ান ফেলাইনি। একদম সামনে রোমেলু লুকাকু। আবার বলের দখল হারালে বেলজিয়াম হয়ে যাচ্ছিল ৪-৩-৩ বা ৪-২-৩-১। তখন রাইট ব্যাকে নেমে আসছিলেন শ্যাডলি। ভার্তোমেন হয়ে যাচ্ছিলেন লেফ্ট ব্যাক।

উল্টো দিকে এমবাপেরা শুরু করেছিলেন ৪-২-৩-১। খেলা দেখে মনে হল, দেশঁর রণনীতি ছিল প্রথম কুড়ি-পঁচিশ মিনিট প্রতিপক্ষকে বুঝে নাও। তার পরে নিজের পরিকল্পনা কার্যকর করো। কিন্তু শুরু থেকেই বেলজিয়ামের আক্রমণ দেখে দেশঁ প্রথমে ছক বদলে খেললেন ৪-৩-৩। কিন্তু তাতেও এডেন অ্যাজার মাঝে মাঝেই ত্রাসের সঞ্চার করছিলেন ফরাসি রক্ষণে। তৈরি করছিলেন ফাঁকা জায়গা। বল পাচ্ছিলেন মারুয়ান ফেলাইনি, লুকাকুরা। দুই প্রান্ত থেকে ফরাসি রক্ষণে ভেসে আসছিল বল। লক্ষ লুকাকু আর ফেলাইনি।

বিপক্ষ আক্রমণে চেপে ধরছে। শূন্যের বলে পরাস্ত করতে চাইছে। তা বুঝতে পেরেই মিনিট কুড়ির মাথায় এ বার ৫-৩-২ হয়ে গেল ফ্রান্স। রাইট ব্যাক পাভার্দের দিক দিয়ে কেভিন দে ব্রুইনরা আক্রমণ করলে তখন রাইট ব্যাক ও রাইট স্টপার ভারান-এর মাঝে গিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন এনগোলো কঁতে। ঠিক তেমনই ফরাসি লেফ্ট ব্যাক লুকাস হের্নান্দেস-এর দিক দিয়ে আক্রমণ হলে সেই জায়গায় রক্ষণে নামছিলেন মাতুইদি। ফলে মিনিট পঁচিশের মধ্যেই ফরাসি রক্ষণে ফাঁকা জায়গা পাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বেলজিয়ামের। আর এখান থেকেই ম্যাচে ফেরা শুরু ফরাসিদের।

দেশঁ এ বার ফেললেন তাঁর তাস। নিজেদের রক্ষণ অবধি বেলজিয়ামকে টেনে এনে গতিতে প্রতি-আক্রমণে যাওয়ার রণনীতি। বেলজিয়াম রক্ষণে নিশানা বানাচ্ছিলেন একটু মন্থর ভার্তোমেনকে। প্রথম তিরিশ মিনিটের পরে পাভার্দ প্রতি-আক্রমণের সময় ওভারল্যাপে গেলেই ঠিক এই রাস্তাতেই চাপে পড়ছিল বেলজিয়াম। এই সময় পোগবা রক্ষণের ফেলাইনিকে ধরছিলেন।

আর বল কেড়ে আক্রমণের সময় লম্বা তুলে দিচ্ছিলেন এমবাপেকে। বলগুলো বুদ্ধি করে রাখছিলেন ভ্যানসঁ কোম্পানি ও ভার্তোমেনের মাঝখানে। গতি বাড়িয়ে সেই বলগুলি ধরছিলেন এমবাপে। বেলজিয়ামের কেউ ওঁকে মার্কিং করছিলেন না। ফলে বল উড়ে আসলেই মার্তিনেসের এই দুই ডিফেন্ডার সরছিলেন এমবাপেকে ধরতে। তৈরি হচ্ছিল ফাঁকা জায়গা। তখন সেই জায়গায় ঢুকে আসছিলেন জিহু আর গ্রিজম্যান। সেই আক্রমণের সামনে ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল বেলজিয়াম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE