Advertisement
E-Paper

ক্রোয়েশিয়ার দৌড় থামাতে চায় রাশিয়া

ইয়াশিনের ক্লাব মস্কো ডায়নামো ক্লাবের স্টেডিয়াম নতুন করে তৈরি হচ্ছে। ট্যাক্সি থেকে নেমে অনেক খুঁজে পাওয়া গেল কিংবদন্তি গোলকিপারের একটা মুরাল।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৪
ভরসা: রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র তাদের গোলকিপার আকিনফেভ। ছবি: রয়টার্স

ভরসা: রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র তাদের গোলকিপার আকিনফেভ। ছবি: রয়টার্স

লুঝনিকি স্টেডিয়াম থেকে কিছুটা দূরের একটা পার্কে লেভ ইয়াশিনের উড়ে গিয়ে বল ধরার মূর্তিটা আছে। বিশ্বকাপ উদ্বোধনের আগে মূর্তির উপর জমে যাওয়া জঙ্গল ও ধুলো পরিষ্কার করা হয়েছিল।

ইয়াশিনের ক্লাব মস্কো ডায়নামো ক্লাবের স্টেডিয়াম নতুন করে তৈরি হচ্ছে। ট্যাক্সি থেকে নেমে অনেক খুঁজে পাওয়া গেল কিংবদন্তি গোলকিপারের একটা মুরাল। এক কোণে জঞ্জালের মধ্যে পড়ে। ইয়াশিনার স্ত্রী ভ্যালেন্টিনা ইয়াশিনা একটা ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন মস্কো শহরের অনেক দূরে। কেউ খোঁজ রাখে না। দু’চারটে জায়াগায় রাশিয়ার মুখ হিসেবে ইয়াশিনের মূর্তি লাগানো। তবে সেগুলোর কোনওটাই ময়দানের গোষ্ঠ পালের মূর্তির মতো অবস্থাতে নেই। রং-চং করা হয় না বহু দিন ধরে।

রাশিয়ার মানুষ পুরানো স্মৃতি নিয়ে বেশি মাতেন না। কিন্তু আজ, শনিবার আধুনিক দেশটা নব্বই মিনিটের জন্য হলেও পিছন দিকে ফিরতে চাইবে। চেরিশেভের রাশিয়া আজ ইয়াশিনকে ছুঁতে চায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন জমানায় রাশিয়া শেষ বার বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠেছিল সেই ১৯৬৬-তে। তারপর আবার আকিনফেভ, জিরকোভদের সামনে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ। ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারলেই রাশিয়ার ফুটবলের পুর্ণজন্ম হবে।

লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিতিচদের হারানো কঠিন কিন্তু তাও ইয়াশিনকে ছুঁতে পারেন ভেবে নিজেদের দলের হয়ে কোটি কোটি রুবলের বাজি ধরেছেন ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের লোকেরা। এখানকার ট্যাবলয়েডে ফলাও করে সেই খবর বেরিয়েছে। এখানে বেটিং চলে অদ্ভুত নিয়মে। সোচি বা পর্যটন এলাকায় বেটিং আইনসিদ্ধ। বাকি এলাকায় তা নিষিদ্ধ। কাজ়ানে গতকাল মাটির নিচের ঘর থেকে জনা দশেক লোককে ধরা হয়েছে বেটিংয়ের জন্য, কিন্ত খেলা যে-হেতু সোচিতে তাই সেখানে চলে যাচ্ছেন রাশিয়ানরা। বেটিংটা তাঁদের নেশা। আইস হকিতে, মোটর রেসিংয়েও চলে। অনেকে ঘর-বাড়ি বিক্রি করে বাজি ধরে।

নব্বইয়ের শুরুতে নতুন রাশিয়া তৈরির পর কখনও বিশ্বকাপের শেষ আটে ওঠেনি পুতিনের দেশ। কিন্তু নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে এবং সেখানে তারা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলছে, সেই মজাটা নিতে চাইছে সবাই। তবে লাগামছাড়া উচ্ছ্বাস নেই কোথাও। দেশের পতাকা রাস্তায় লাগানো বা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতেও দেখলাম না কাউকে। বিভিন্ন ফ্যান জোনে আরও কয়েকটি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে। স্পেন ম্যাচে মস্কোতে পঁচিশ হাজার জনের ফ্যান জ়োনে পঁচাত্তর হাজার লোক হাজির হয়েছিল। সোচিতে বৃহস্পতিবার সাতশো লোক ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিল রাশিয়ার হোটেলে। সেটাই বিরাট খবর হয়েছে এখানে। কলকাতায় এরকম পরিস্থিতি হলে কত লোক হত? লাখ খানেক তো বটেই। কয়েকজন ইংরেজি জানা রাশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, সবাই মনে করছে ভাগ্য রাশিয়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে সেটা হলেও হতে পারে। সে জন্যই সবাই খেলাটা দেখবে।

লেভ ইয়াশিনের ’৬৬ রেকর্ড স্মোলভ, জিরকোভরা ছুঁতে পারবেন কি না জানা যাবে আজ শনিবার রাতে। তবে তাদের কোচ চেরিশভ এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘আমরা হৃদয় দিয়ে খেলব। স্পেনের বিরুদ্ধে যে রকম খেলেছিলাম সে রকমই।’’ যা থেকে স্পষ্ট টাইব্রেকারে ম্যাচ নিয়ে গিয়ে ফের ভাগ্য পরীক্ষা করতে চান তিনি। নিজে গোলকিপার ছিলেন স্পার্টাক টিমের। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও নিজের অধিনায়ক এবং গোলকিপার আকিনফেভের উপর সে জন্য তাঁর অগাধ আস্থা। রাশিয়া দলে গোলকিপার পজিশনটা মহার্ঘ। ইয়াশিনের পর রেনাত দাসায়েভ নাম করেছিলেন। তারপর চেরিশেভ এসেছিলেন পরম্পরা মেনে। এখন আকিনফেভ। দলের সব চেয়ে সিনিয়র গোলকিপার আকিনফেভ আর ইগনাশিয়েভিচ। বহুদিন খেলছেন জাতীয় দলে। একটু মাচো চেহারার এবং ভাল কথা বলতে পারেন বলে যুবাকে পছন্দ করে ট্যাক্সিচালক থেকে ফ্ল্যাটের দারোয়ানও।

রাশিয়া যদি ফের অঘটন ঘটাতে পারে, তা হলে তারা পড়তে পারে ইংল্যান্ডের সামনে। এমনিতে রাশিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ড বা ব্রিটেনের সম্পর্ক ভাল নয় কোনও দিনই। কিন্ত গ্লাসনস্ত, পেরেস্ত্রৈকার পর মুক্তমনা রাশিয়ানরা সেটা নিয়ে এখন মাথা ঘামান না। যেমন ক্যাসিনো বা স্পোর্টস পাবে বসে খেলা দেখা নিয়েও তাঁদের মাথাব্যথা নেই। তাঁদের ধারণা, হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড হারিয়ে দেবে সুইডেনকে। রাশিয়ার সঙ্গে এ বার অবশ্য অদ্ভুত মিল আছে গ্যারেথ সাউথগেটের দলের। দু’দলেরই সেরা সাফল্য সেই ছেষট্টিতে। ববি মুরের ইংল্যান্ড সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, ইয়াশিনের রাশিয়া চতুর্থ। তার পর দু’দলই আর কেউ নিজেদের সেই গৌরব ছুঁতে পারেনি।

রাশিয়ার অগ্রগতি নিয়ে খোদ রাশিয়ানদের মধ্যে সংশয়ে থাকলেও সাউথগেটের দেশের লোকজনদের তা নেই। এ বার ইংল্যান্ডের ‘ফুটবল গুন্ডা’দের আটকাতে অভূতপূর্ব ব্যবস্থা নিয়েছে রুশ প্রশাসন। ফলে হাজার চারেকের বেশি লোক আসেনি। তা সত্ত্বেও কলম্বিয়াকে হারানোর পরে রাস্তায় গাড়ির উপর বিয়ারের বোতল নিয়ে নেচেছেন হ্যারির দলের সমর্থকেরা। মেয়েরা রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়েছে। তাতে ট্র্যাফিক জ্যাম হয়েছে।

নেমার যেমন ব্রাজিলের স্বপ্ন ফেরি করছেন, লুকাকু যেমন বেলজিয়ামের, তেমনই হ্যারি কেন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ইংল্যান্ডকে। তাঁর চার ম্যাচে ছয় গোল সোনার বুটের দিকে পা বাড়িয়ে আছেন বোহেমিয়ান হ্যারি। তাঁকে নিয়ে এতটাই হইচই যে, ইংল্যান্ডের দু’টো প্রদেশের মেয়র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। হ্যারি এ দিন ফের বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা অনভিজ্ঞ, আর কেউ বলবেন না। আমাদের দল স্বপ্ন ছোঁয়ার দল। সুইডেন ভাল। আমরাও।’’ বোঝাই যায় হ্যারি তাঁর রাহিম স্টার্লিং, অ্যাশলে ইয়ংদের উপর ভরসা রাখছেন।

হ্যারি কেনের আলোয় ইংল্যান্ড স্বপ্ন দেখছে ট্রফি জেতার। রাশিয়া খুঁজছে ভাগ্য। অঘটনের বিশ্বকাপে কোনও বিড়াল, কোনও অক্টোপাসের কথাই যে মিলছে না।

Igor Akinfeev Russia Croatia বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Football FIFA World Cup 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy