Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিলার্দোর মারাদোনা মন্ত্রের ঢঙে চলছে সাম্পাওলির মেসি-বন্দনা

অনেকেই যা শুনে সমালোচনা করতে শুরু করে দেন হর্হে সাম্পাওলির। বলা হতে থাকে, তারকা প্রথার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করা এক কোচ তিনি।

সাম্পাওলি-মেসি।

সাম্পাওলি-মেসি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

মাঠের মধ্যে তাঁর রণনীতি ঝড় তোলার আগে বিতর্কের ঝড় তুলেছিল আর্জেন্তিনা কোচের একটি মন্তব্য। যখন তিনি বললেন, ‘‘লিয়োনেল মেসি সুস্থ থাকলে আর্জেন্তিনা ওরই দল, আমার নয়।’’

অনেকেই যা শুনে সমালোচনা করতে শুরু করে দেন হর্হে সাম্পাওলির। বলা হতে থাকে, তারকা প্রথার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করা এক কোচ তিনি। কেউ কেউ বলে ফেললেন, ‘‘মেসি যা চায়, মেসি তা-ই করে। মেসি থাকবেনই। বাকিরা থাকতেও পারেন, না-ও পারেন।’’ সাম্পাওলিকে কিন্তু বিতর্কের ঝড়ও টলাতে পারল না। তিনি তাঁর বক্তব্যে অনড়। বললেন, যে চৌম্বক আকর্ষণ মেসিকে কেন্দ্র করে দেখা যায়, তার তুলনা পেতে গেলে অন্য গ্রহে পাড়ি দিতে হবে।

সমালোচনাও চলতে থাকল। রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য আর্জেন্তিনা প্রাথমিক দল দেখে অনেকে মন্তব্য করলেন, পর্দার আড়ালে ‘সুপার সিলেক্টর’ লিয়োনেল মেসিই। যাঁকে মেসির পছন্দ, তিনি দলে জায়গা পেয়েছেন। যাঁকে চান না, তাঁর জায়গা হয়নি। কোচ তো আগেই তাঁর কাছে মাথা সঁপে দিয়ে বসে আছেন। তিনি আর কী প্রতিবাদ করবেন?

বিলার্দো-মারাদোনার সঙ্গে তুলনা

আর্জেন্তিনার ফুটবল মহলে অভিজ্ঞ কেউ কেউ কিন্তু সাম্পাওলির মেসি-বন্দনাকে আক্রমণ করতে নারাজ। তাঁদের যে মনে পড়ে যাচ্ছে পুরনো এক যুগলবন্দির কথা! বিখ্যাত সেই কার্লোস বিলার্দো এবং দিয়েগো মারাদোনার জুটির স্বর্ণযুগ। যাঁরা শেষ বার আর্জেন্তিনাকে বিশ্বকাপ দিয়েছিলেন। ১৯৮৬-তে মেক্সিকো বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যেও ছিল একই প্রশ্রয়ের কাহিনি। তখন কোচ হিসেবে বিলার্দো এ ভাবেই মারাদোনাকে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। নিজে নামী কোচ হওয়া সত্ত্বেও পর্দার আড়ালে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আর্জেন্তিনীয় ফুটবল সাংবাদিক এবং বিশেষজ্ঞদের কথাতেই পরে জানাজানি হয় যে, বিশ্বকাপে রওনা হওয়ার আগে বিলার্দো বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দিয়েগো সকলের ঊর্ধ্বে।

সকলের জন্য এক নিয়ম, দিয়েগোর জন্য আর এক। অনেকটা সেই সুরেই কিন্তু মেসিকে নিয়ে সাম্পাওলি এ বার বলেছেন, ‘‘এটা মেসির দল। তাই মেসি নিশ্চিত। বাকিদের বেছে নিতে হবে।’’ রাশিয়ায় অংশ নিতে যাওয়া ৩২টি দলের কোনও কোচকে এমন কথা বলতে শোনা যায়নি। বিলার্দোর টোটকা দুর্দান্ত ভাবে কাজে দিয়েছিল। কোচের আস্থার সম্পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে অবিশ্বাস্য ফুটবল উপহার দেন মারাদোনা। কার্যত একাই বিশ্বকাপ এনে দেন দেশকে। মারাদোনার অতি বড় সমালোচকরাও মেনে নেন, তাঁকে ছাড়া ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জিততই না আর্জেন্তিনা। কারও কারও তাই মনে হচ্ছে, বিলার্দোর ইতিহাসকে অনুসরণ করে এগোচ্ছেন সাম্পাওলি। যিনি চিলিকে কোপা আমেরিকা জিতিয়েছিলেন মেসির আর্জেন্তিনাকেই ফাইনালে হারিয়ে। এ বারে যিনি আর্জেন্তিনাকে নজিরবিহীন আক্রমণাত্মক ছকে খেলানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।

মেক্সিকোতে মারাদোনাকে একটাই কথা বলেছিলেন বিলার্দো— সকলকে দেখাও বিশ্বের শাসক তুমি। রাশিয়ায় সাম্পাওলিও দলের মুকুট মাথায় পরিয়ে দিয়ে মেসিকে নিশ্চয়ই একই কথা বলতে চাইবেন। সেটা যে কথার কথা নয়, মারাদোনার মতোই প্রমাণ করতে হবে স্বয়ং মেসিকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE