Advertisement
E-Paper

আঞ্চলিকতাবাদ কি ফিরে এল, পন্থ উপেক্ষায় প্রশ্ন

ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে পড়ছেন, দক্ষিণ ভারতের এক প্রাক্তন সর্বময় কর্তা ফের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে শুরু করে দিলেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০৬
ঋষভ পন্থ। ফাইল চিত্র।

ঋষভ পন্থ। ফাইল চিত্র।

ঋষভ পন্থের বাদ পড়ার মধ্যে দিয়ে কি ভারতীয় ক্রিকেটে ফিরে এল সেই কুখ্যাত ‘কোটা সিস্টেম’ এবং আঞ্চলিকতাবাদ? বিশ্বকাপে ভারতের দল নির্বাচন নিয়ে একাধিক অসঙ্গতির ভিত্তিতে এমন অপ্রীতিকর প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছে।

বিশেষ করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে নির্বাচকেরা ২১ বছরের তাজা রক্ত ঋষভ পন্থকে উপেক্ষা করে প্রায় ৩৪ বছরের দীনেশ কার্তিককে সুযোগ দেওয়ায়। কার্তিক শেষ বার বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বারো বছর পরে বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় প্রত্যাবর্তনের ঘটনা কার্যত বিরল।

দল নির্বাচনের পরের দিন অনেকেরই চোখ এড়াচ্ছে না একটি তথ্য। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস এবং ঘরোয়া ক্রিকেট ধরলে দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিশ্বকাপের ঘোষিত দলে রয়েছেন ছ’জন ক্রিকেটার। সিএসকে থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, রবীন্দ্র জাডেজা এবং কেদার যাদব। তামিলনাড়ু থেকে দীনেশ কার্তিক ও বিজয় শঙ্কর। কর্নাটক থেকে কে এল রাহুল। এই ছ’জন ক্রিকেটারের মধ্যে একমাত্র ধোনিকে বাদ দিলে বাকি সকলের নির্বাচন ঘিরে ছোট-বড় প্রশ্ন উঠতে পারে। জাডেজা এবং রাহুলকে নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিশ্চয়তা এবং দোলাচল ছিল। কেদার যাদব খুবই চোটপ্রবণ। সব চেয়ে বেশি বিতর্ক কার্তিক এবং শঙ্করকে নিয়ে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে পড়ছেন, দক্ষিণ ভারতের এক প্রাক্তন সর্বময় কর্তা ফের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে শুরু করে দিলেন? অতীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সেই সর্বময় কর্তার হস্তক্ষেপের ঘটনা সর্বজনবিদিত। বিশেষ করে যে ভাবে তিনি প্রাক্তন এক মহাতারকা অধিনায়ককে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন, তা-ও কারও ভোলার কথা নয়। কাকতালীয় হলেও হতে পারে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, যে দু’টি নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাল হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট, দু’টিই দক্ষিণের প্রতিনিধি। দীনেশ কার্তিক এবং বিজয় শঙ্কর।

জানা গিয়েছে, শঙ্করের ক্ষেত্রে টিম ম্যানেজমেন্টের সম্মতি ছিল। হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজ়িল্যান্ডে তাঁর শৃঙ্খলাপরায়ণ ক্রিকেট দেখে মুগ্ধ। তাঁকে চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে তৈরি করার প্রয়াসও ভিতরে-ভিতরে চলছিল। কিন্তু কার্তিকের ক্ষেত্রে তেমন কোনও অভিপ্রায় টিম ম্যানেজমেন্টের ছিল বলে ইঙ্গিত নেই। বরং ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে ব্যর্থ কার্তিককে বসিয়ে ঋষভের অভিষেক ঘটানোর নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল কোচ শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক কোহালির। তাঁরা তখনই চেয়েছিলেন সামনের দিকে তাকাতে। বিশ্বকাপের দল গড়তে গিয়ে পিছনে হাঁটা দেবেন, এমন ভাবা কঠিন।

কোচ শাস্ত্রী মুম্বইয়ে বিশ্বকাপের বৈঠকে ছিলেন না। অধিনায়ক কোহালি ছিলেন। তিনি পন্থের জন্য সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর জানার অপেক্ষায় ক্রিকেট ভক্তরা। অতীতে সৌরভের মতো অধিনায়ককে নির্বাচনী সভায় যোগ্য ক্রিকেটারের জন্য নাছোড় লড়াই করতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, কোহালিকে যদি সেরা দল হাতে পেতে হয়, তা হলে তাঁর ব্যাটিংয়ের মতোই আগ্রাসী হতে হবে নির্বাচনী বৈঠকেও। সৌরভের সময়কার কোচ জন রাইট তাঁর বইতে লিখেছিলেন, ‘‘নির্বাচকেরা তাঁদের অঞ্চলের ক্রিকেটার দলে ঢোকাতে চাইতেন। প্রতিবাদ করেও অনেক সময় কোচ বা অধিনায়কের কিছু করার থাকত না কারণ, আমাদের কোনও ভোট ছিল না। ভোট ছিল শুধু পাঁচ নির্বাচকের।’’ সেই প্রথা এখনও চলছে। ভোটাভুটির প্রয়োজন হলে নির্বাচকেরাই যা ঠিক করার করবেন।

ওয়াকিবহাল মহলের খবর, কার্তিকের হয়ে সব চেয়ে বেশি গলা ফাটানোর ব্যক্তির নাম এম এস কে প্রসাদ। যিনি নিজেও নির্বাচক কমিটিতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রসাদ যে বলেছেন, কিপিং খারাপ হওয়ার জন্যই বাদ দেওয়া হয়েছে পন্থকে, তা গ্রহণযোগ্য হওয়া কঠিন। টেস্টের এক নম্বর কিপার কী করে এক দিনের ক্রিকেটে খারাপ কিপিংয়ের জন্য বাদ পড়তে পারেন? যেখানে সাধারণ জ্ঞান হল, টেস্টে কিপিং দক্ষতা বেশি লাগে।

প্রশ্ন উঠছে বর্তমান নির্বাচক কমিটির যোগ্যতা নিয়েও। প্রসাদ নিজে খেলেছেন সব মিলিয়ে ৬টি টেস্ট এবং ১৭টি ওয়ান ডে। এত কম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে কখনও কেউ নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন কি না সন্দেহ। প্রসাদের সতীর্থদের অবস্থা তথৈবচ। পূর্বাঞ্চল প্রতিনিধি দেবাঙ্গ গাঁধী খেলেছেন ৪টি টেস্ট, ৩টি ওয়ান ডে। উত্তরাঞ্চলের শরণদীপ সিংহ খেলেছেন ৩টি টেস্ট, ৫টি ওয়ান ডে। পশ্চিমাঞ্চলের যতীন পরাঞ্জপে খেলেছেন সাকুল্যে ৪টি ওয়ান ডে। মধ্যাঞ্চলের গগন খোড়া খেলেছেন ২টি ওয়ান ডে। এঁদের হাতে বাদ পড়া ঋষভ ইতিমধ্যেই খেলেছেন ৯টি টেস্ট এবং ৫টি ওয়ান ডে। রসিকতা করে কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ঋষভের ইতিমধ্যেই দু’টো টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে। যাঁরা তাঁকে বাদ দিলেন, সেই পাঁচ জনের মিলিত ভাবে একটাও টেস্ট সেঞ্চুরি নেই।’’ শুধু তা-ই নয়, পাঁচ নির্বাচকের কেউ কখনও বিশ্বকাপে খেলা দূরে থাকুক, কখনও বিশ্বকাপের জন্য তাঁদের নাম আলোচিতও হয়নি। অথচ, তাঁরাই কি না বেছে ফেললেন বিশ্বকাপের দল!

World Cup 2019 Rishabh Pant Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy