Advertisement
E-Paper

নেইমার বনাম জুনিগা ছাপিয়ে শুরু বিশ্ব বনাম ব্রাজিল

জুয়ান জুনিগাকে মনে পড়ে? না, ইনি সোনার বল জেতেননি। সোনার বুটও না। এঁর টিম বিশ্বকাপ জেতা দূরে থাক, কোয়ার্টার ফাইনালের পাঁচিলও পেরোয়নি। কিন্তু তবু তিনি, জুয়ান জুনিগা ব্রাজিল বিশ্বকাপের অসম্ভব পরিচিত মুখ, তাঁকে ভোলারও কোনও উপায় নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৭
বিশ্বকাপের সেই ঘাতককে ‘দেখে নিতে’ নেইমারের পা  মায়ামিতে।

বিশ্বকাপের সেই ঘাতককে ‘দেখে নিতে’ নেইমারের পা মায়ামিতে।

জুয়ান জুনিগাকে মনে পড়ে?

না, ইনি সোনার বল জেতেননি। সোনার বুটও না। এঁর টিম বিশ্বকাপ জেতা দূরে থাক, কোয়ার্টার ফাইনালের পাঁচিলও পেরোয়নি। কিন্তু তবু তিনি, জুয়ান জুনিগা ব্রাজিল বিশ্বকাপের অসম্ভব পরিচিত মুখ, তাঁকে ভোলারও কোনও উপায় নেই।

নেইমার দ্য সিলভার শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছিলেন যে। পরোক্ষে, ব্রাজিলেরও।

৪ জুলাই, ২০১৪।

৮ জুলাই, ২০১৪।

ব্রাজিল ফুটবলের ইতিহাসে যে দু’টো তারিখ বহু দিন দেশবাসীর রক্ত ঝরাবে। যে দু’টোয় জড়িয়ে থাকবেন জুয়ান জুনিগা নামের এক জন। ৪ জুলাইয়ের কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়া হেরে গিয়েছিল ব্রাজিলের কাছে। কিন্তু ব্রাজিলের টুর্নামেন্টটাও ওই দিন শেষ হয়ে গিয়েছিল, নেইমারকে মেরে তাঁর বিশ্বকাপ অভিযান জুনিগা শেষ করে দেওয়ায়। ৮ জুলাই ব্রাজিলের ডেথ সার্টিফিকেট শুধু লেখা হয়েছিল। এস্তাদিও মিনেইরোয় জার্মানির কাছে সাত গোল খেয়ে মহালজ্জার সমুদ্রে ডুব দিয়ে।

মাঝে দু’টো মাস। দশ গোল খেয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর ব্রাজিলের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। লুই ফিলিপ স্কোলারির জায়গায় দুঙ্গা। ফ্রেডের জায়গায় আবার রোবিনহো। আবারও নেইমার দ্য সিলভা। আর ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন শুরুর প্রথম চ্যালেঞ্জটাও অবাক করার মতো। সেই কলম্বিয়া। সেই জুয়ান জুনিগা!

আগামী শুক্রবারের মায়ামিতে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে আবার দেখা হচ্ছে নেইমার-জুনিগার। বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পর নেইমার এক বার বলেছিলেন, জুনিগার প্রতি তাঁর রাগ নেই। কিন্তু ইচ্ছে করে জুনিগা মারেননি, বিশ্বাস করতে পারবেন না কখনও। জুনিগাকেও বিশ্বব্যাপী তীব্র ধিক্কারের মুখে পড়তে হয়েছিল। জবাবদিহি করতে হয়েছিল বিশ্বের ফুটবলসমাজে। বলতে হয়েছিল, তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।

নেইমারের সামনে আবার পড়ার আগে তিনি কী বলছেন?

“আমি ওই ঘটনাটা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। বরং মানুষ নেইমারকে নিয়ে কথা বলতে চাই। ও খুব ভাল ছেলে। ভদ্র স্বভাবের। আপনি মানুষ কেমন, সেটাই আসল। মাঠে যা হয়েছিল, আজও বলছি সেটা ইচ্ছাকৃত ছিল না। আমার তো মনে হয়, ওই ঘটনা নিয়ে না ভেবে ব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া নিয়ে ভাবা বেশি ভাল। ব্রাজিল গ্রেট টিম। গ্রেট প্লেয়ার আছে ওদের। ওদের মতো টিমের বিরুদ্ধে নামতে পারব ভেবেই উদ্দীপ্ত লাগছে,” বুধবার বলেছেন জুনিগা।

কিন্তু তাতে কত দূর প্রলেপ পড়বে, কে জানে। বিশ্বকাপের পর দু’জনই সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আইস বাকেট চ্যালেঞ্জে যেমন নেইমার চ্যালেঞ্জ করেছিলেন জুনিগাকে। কলম্বিয়া ফুটবলার চ্যালেঞ্জটা সানন্দে নিয়েও নেন। কিন্তু মাঠ অন্য পৃথিবী। ‘ঘাতক’-কে পাল্টা শিক্ষা দেওয়ার একটা ইচ্ছে ধরে নেওয়া যায় নেইমারের থাকবে। ব্রাজিল তারও তো নেইমারের মতো কিছু প্রমাণ করার থাকবে বিশ্বের কাছে।

বিশ্বকাপে যে কলম্বিয়া টিমটা নেমেছিল, তার চেয়ে এ বারের টিম বেশি শক্তিশালী। কারণ— এ বার হামেস রদ্রিগেজের সঙ্গে রাদামেল ফালকাও-ও আছেন। বিশ্বকাপে ব্রাজিলের যে তেইশ জনের টিমটা ছিল, তা থেকে দশ জনকে এখনও রেখেছেন দুঙ্গা। নেইমার, দাভিদ লুইজ, অস্কার, রামিরেজরা আছেন। জুলিও সিজার, জো, দানি আলভেজরা বাদ। বরং বহু দিন পর রোবিনহোকে আবার সেলেকাও জার্সি গায়ে দেখা যাবে। এ দিন মায়ামিতে রোবিনহো-নেইমারের বল নিয়ে জাগলিংয়ের যুগলবন্দিও দেখা গেল। ব্রাজিলের গ্লোবাল ট্যুরে নতুন যাঁরা এলেন তাঁদের মধ্যে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফিলিপে কুটিনহো আছেন। লিভারপুলে খেলেন। আটলেটিকো মাদ্রিদের দিয়েগো তারদেল্লি আছেন। কিন্তু কে এলেন, কে গেলেন নয়। প্রশ্নটা হল, ব্রাজিল পারবে ফুটবল-পৃথিবীতে পুনর্জন্ম ঘটাতে?

ফার্নান্দিনহো বলছেন, “মনে হয় লোকে প্রশ্নটা চিরকাল করে যাবে। জিজ্ঞেস করবে জার্মানির সঙ্গে আমাদের কী হয়েছিল? নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা নিজেরাও সেটা ভুলিনি।”

রামিরেজের আশ্বাস, “দুঙ্গা যা বলবেন, সেটা করার চেষ্টা করব। যাতে ব্রাজিলীয় ফুটবলে ফেরা যায়। ব্রাজিল ফুটবল চিরকাল যা থাকবে, সেটা যাতে বোঝানো যায়। একটা বিশ্বকাপ দিয়ে ব্রাজিলকে মাপবেন না।”

কুটিনহো বলছেন, “বিশ্বকাপ অতীত। রোজ কেউ জিততে পারে না। কিন্তু নিশ্চিত আমাদের জাতীয় দলের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আসছে।”

রোবিনহো বলে দিচ্ছেন, “দুঙ্গা যদি আমাকে বলেন ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড পরতে, আমি তৈরি।”

বাস্তব হল, আগামী শুক্রবার থেকে মোটেও ব্রাজিলের গ্লোবাল ট্যুর শুরু হচ্ছে না। ফুটবল বিশ্বকে নিজেদের বশে আনার সফর শুরু হচ্ছে। যা শুরু হবে মায়ামি দিয়ে, শেষ চার বছর পর রাশিয়ায়। এক সময়ের গ্রহান্তরের টিম তো বর্তমানে রক্তমাংসের এগারোয় পর্যবসিত। একটা ১-৭ তো এত দিনের ঐতিহ্যকে চূর্ণ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ক্ষত মুছতে বছর নয়, দশক লেগে যাবে!

আর তাই কোথাও গিয়ে নেইমার দ্য সিলভার যুদ্ধটা তুলনায় সহজ দেখাবে। তাঁকে মাত্র একটা ‘শোধ’ তুলতে হবে। ব্রাজিলের তো সেখানে শুক্রবার থেকে দিকে-দিকে জুয়ান জুনিগা!

selecao neymar zuniga football brazil sports news online sports news battle world
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy